বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: আজ শেফালির গায়ে হলুদ
আজ শেফালির গায়ে হলুদ
উলু দেয় পিক পাপিয়া।
প্রথম প্রণয়-ভীরু বালা
লাজে ওঠে কাঁপিয়া॥
বনভূমি বাসর সাজায়
ফুলে পাতায় লালে নীলে,
ঝরে শিশির আশিস-বারি
গগন-ঝারি ছাপিয়া॥
বৃষ্টি-ধোওয়া সবুজ পাতার
শাড়ি করে ঝলমল,
ননদিনী ‘বৌ কথা কও’
ডাকে আড়াল থাকিয়া॥
দেখতে এলো দিগ্বালিকা
সাদা মেঘের রথে ঐ,
শরৎ-শশীর মঙ্গল-দীপ
জ্বলে গগন ব্যাপিয়া॥
অতীত্ প্রণয়-স্মৃতি স্মরি’
কেঁদে যায় আশিন-হাওয়া,
উড়ে বেড়ায় বর সে ভ্রমর
কমল-পরাগ মাখিয়া॥
- ভাবার্থ: এই গানটিতে শেফালি (শিউলি)
ফুলের কনে-সজ্জা অবলম্বনে শরতের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রকৃতি এবং প্রেমের যুগলবন্দীতে বাঁধা গানে পাওয়া যায় প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং
শৃঙ্গার রসের মিলন ও বিপ্রলম্ভের চিত্র।
শিউলি ফুলের সাদা রঙের দলমণ্ডলের ভিতরের দিকে হলুদের আভা থাকে। কবি কল্পনায় এই ফুলের
প্রস্ফূটিত পূর্ণ দশা হয়ে উঠেছে বিয়ের কনে, আর এই সাদা দলমণ্ডলের হলুদের আভা হয়ে
উঠেছে তার গায়ে হলুদের রঙ। কবির কল্পনায় শরতের কোকিল, পাপিয়ার ডাক হয়ে উঠেছে
গায়ে হলুদের আসের উলু ধ্বনি, আর ফুলের সহজাত কম্পন হয়ে উঠেছে প্রথম প্রণয় ভীরু
বালিকার সলাজ কম্পন।
বর্ষার শেষে শরতের আগমনে প্রকৃতি নতুন রূপে আবির্ভূত হয়। ফুল ও পাতায় লাল নীল
বরণবৈচিত্র্যে বনভূমি নতুন সাজে মোহনীয় হয়ে ওঠে। শরতের শেষে আশীর্বাদের জল হয়ে
শিশির ঝরে পড়ে। শরতের বৃষ্টিস্নাত বনভূমির সতেজ সবুজ পাতা হয়ে ওঠে শেফালি-কনের
ঝলমলে শাড়ি। পাতার আড়ালে থাকা 'বৌ কথা কও' পাখি যেন শেফালি-কনের
উদ্দেশ্যেই ডেকে চলে। এই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানকে দেখার জন্য দিগ্বালিকারা (দিকসমূহের
অধিষ্ঠাত্রী দেবীরা) শরতের সাদা মেঘের রথে চড়ে শরতের আঙিনায় এসে হাজির হয়।
শরতের চাঁদ এই আসরের মঙ্গল-দীপ হয়ে সারারাত জ্বলে।
লুব্ধ বরবেশী ভ্রমর ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানো বহুগামী প্রেমিক। তার অঙ্গে লেগে থেকে
দূর অতীতের নায়িকা কমলিনীর প্রেম-পরাগ। কিন্তু ভ্রমরে মনে থাকে না প্রেমের পরাগ।
তাই কমলিনীর গোপন ব্যথা স্মরণ করে শেফালির হলুদের আসরে আশ্বিনের হাওয়া গোপনে
বিলাপ করে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে
কিছু জানা যায় না। ১৩৩৯ বঙ্গাব্দের আষাঢ় (জুলাই ১৯৩২) মাসে প্রকাশিত '
সুর-সাকী'
গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
এই
সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৩
বৎসর ১ মাস।
- গ্রন্থ:
- সুর-সাকী
- প্রথম সংস্করণ [আষাঢ় ১৩৩৯ বঙ্গাব্দ। জুলাই ১৯৩২]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, চতুর্থ খণ্ড। বাংলা একাডেমী,
ঢাকা। [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮, মে ২০১১। সুর-সাকী। ২০। পিলু-কার্ফা। পৃষ্ঠা: ২৩৩-২৩৪]
- নজরুল-সঙ্গীত
সংগ্রহ,
(নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২) -এর ১০৩৫
সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৩১৬।
- নজরুলের হারানো গানের খাতা [নজরুল ইনস্টিটিউট, ঢাকা। আষাঢ় ১৪০৪/জুন ১৯৯৭।
গান সংখ্যা
১৪১।
for Parul Sen
। মডার্ন।
পৃষ্ঠা
১৬৮]
- পর্যায়: