বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: ঈদজ্জোহার চাঁদ হাসে ঐ এলো আবার দুস্রা ঈদ
ঈদজ্জোহার চাঁদ হাসে ঐ এলো আবার দুস্রা ঈদ।
কোর্বানি দে কোর্বানি দে শোন্ খোদার ফর্মান তাকিদ॥
এমনি দিনে কোর্বানি দেন পুত্রে হজরত ইব্রাহীম,
তেম্নি তোরা খোদার রাহে আয় রে হবি কে শহীদ্॥
মনের মাঝে পশু যে তোর আজকে তা’রে কর্ জবেহ্,
পুল্সেরাতের পুল হ’তে পার নিয়ে রাখ্ আগাম রসিদ্॥
গলায় গলায় মিল্রে সবে ভুলে যা ঘরোয়া বিবাদ,
মিলনের ঈদগাহ্ গড়ে তোল্ প্রাণ দিয়ে তার তোল্ বুনিয়াদ॥
মিলনের আর্ফাত ময়দান হোক আজি গ্রামে গ্রামে,
হজের অধিক পাবি সওয়াব এক হ’লে সব মুসলিমে।
বাজবে আবার নূতন ক’রে দ্বীনি ডঙ্কা, হয় উমীদ্॥
ইসমাইলের মতন যদি কোরবানি পারিস হতে
দেখব আবার তোদের মাঝে দিশারি মুসা, খালিদ॥
- ভাবসন্ধান: ইসলাম ধর্মদর্শনে উদ্যাপিত দুটি ঈদের মধ্যে
ঈদজ্জোহাকে দ্বিতীয় ঈদ হিসেবে আখ্যায়িত করে- কবি এই ঈদের মহিমা উপস্থাপন করেছেন এই
গানটিতে। আগমনী গানের আঙ্গিকে রচি এই গানে তুলে ধরা হয়েছে- আগত এই ঈদ-উদ্যাপনের
আনন্দ-মহিমা, কোরাবনির তাৎপর্য এবং এর প্রেক্ষাপট। গজল সুরাঙ্গে রচিত এই
গানের ছয়টি তুকে রয়েছে স্বতন্ত্র ভাব, কিন্তু অন্যান্য গানের মতোই তুকগুলোর
ভিতরে রয়েছে ভাবনার যোগসূত্র।
ইসলাম ধর্ম মতে- আরবি চান্দ্র বর্ষ তথা হিজরি অব্দের জ্বিলহজ্জের ১০ তারিখে, সূর্য উদয়ের পর
থেকে ঈদজ্জোহা শুরু হয়। চান্দ্র-মাসের তিথি অনুসারে জ্বিলহজ্জের ৯ তারিখে
রাতের আকাশ থাকে চন্দ্রলোকিত। তাই এই গানের স্থায়ীতে- এই চাঁদকে কবি সহাস্য ঈদজ্জোহার চাঁদ
হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একই সাথে এই ঈদে আল্লাহর নির্দেশানুসারে কোরবানি
দেওয়ার কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই গানের দ্বিতীয় তুক তথা প্রথম অন্তরাতে- এই ঈদের প্রেক্ষাপট হিসেবে
আল্লার নির্দেশে হজরত ইব্রাহীম (আঃ) দ্বারা তাঁর পুত্র ইসমাইল (আঃ)-কে
কোরবানি দেওয়ার উপখ্যানের উল্লেখ করা হয়েছে। একই সাথে খোদার রাহে (পথে)
ইসমাইল (আঃ)-এর মতো- ধর্মের পথে নিজকে কোরবানি দিয়ে শহিদ হওয়ার মর্যাদা
লাভের প্রেরণা দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় অন্তরাতে কোরবানির অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকে তুলে ধরা হয়েছে। কাজ কথা
ও আচরণের দ্বারা মানুষের যে অমানবিক তথা পশু মনোবৃ্ত্তি (হিংসা- বিদ্বেষ,
লোভ-লালসা, জুলুম ইত্যাদি) প্রকাশ পায়, তাকে কোরবানি (ধ্বংসের মাধ্যমে
বিসর্জন) করার পূণ্যময় উৎসবের কথা বলা হয়েছে। ইসলামি ধর্মদর্শনের বিচারে
এখানে উল্লেখ করে বলা হয়েছে। শেষ বিচারের দিনে একমাত্র মুমিন মুসলমানরা
পুলসেরাত (বেহেশতে যাওয়ার সেঁতু) পার হতে পারবেন। কোরবানি হলো সেই সেতু
পার হওয়ার আগম মূল্যে কেনা রসিদ।
তৃতীয় অন্তরাতে বলা হয়েছে সকল দ্বন্দ্ব ভুলে মানুষের মহামিলনের কথা। হজের
সময় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও জাতির আবালবৃদ্ধ-বণিতার
মহামিলনক্ষেত্র হয়ে ওঠে আরাফাত ময়দান। কবির প্রত্যাশা প্রতিটি ঈদগাহ
এমন মহা-মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠুক। তাহলে হজের অধিক পূণ্যলাভ করবেন প্রতিটি
মুসলমান। তাহলে নতুন করে বেজে উঠবে মুসলমানদের বিজয়ী-ডঙ্কা, ইসালমি দুনিয়ায়
সঞ্চালিত হবে নতুন উমীদ (আশা, আকাঙ্ক্ষা)।
চতুর্থ ও শেষ অন্তরাতে কবি প্রত্যাশা করেছেন- প্রতিটি মুসলমানের মনে জেগে
উঠুক ইসমাইল (আঃ)-এর মতো আল্লার পথে নিজেকে কোরবানি করার দৃঢ়তা। তাহলে এই
মানুষের মধ্যে দেখা মিলবে মুসা (আঃ), খালিদ (বিখ্যাত সেনাপতি খাকিদ-বিন
ওয়ালিদ)-এর মতো ত্যাগী আদর্শবান মহাত্মাদের।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে
সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। মোহাম্মদী পত্রিকার বৈশাখ ১৩৪০ বঙ্গাব্দ
[এপ্রিল-মে ১৩৩৩] সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই
সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৩
বৎসর ১১ মাস।
- পত্রিকা: মোহাম্মদী [বৈশাখ ১৩৪০ (এপ্রিল-মে ১৩৩৩)।
- গ্রন্থ:
-
গুলবাগিচা'
- প্রথম সংস্করণ [১৩ আষাঢ় ১৩৪০, ২৭ জুন ১৯৩৩। ভৈরবী-কার্ফা। পৃষ্ঠা: ৯৩-৯৪]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংকলন। পঞ্চম খণ্ড। বাংলা একাডেমী। ঢাকা।
জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১। গুল-বাগিচা। গান সংখ্যা
৭৭। পিলু-কার্ফা। পৃষ্ঠা ২৪২]
- রেকর্ড:
এইচএমভি [মে ১৯৩৩ (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১৩৪০)]। এন ৭১০১। শিল্পী কে মল্লিক। ঈদ-উল-আযহার
গান।
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
- সুরকার: নজরুল ইসলাম
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। ইসলামি গান। মহিমা। ঈদ। ঈদজ্জোহা
- সুরাঙ্গ:
গজলাঙ্গ
- রাগ:
ভৈরবী
- তাল:
কাহারবা
- গ্রহস্বর: সর