বিষয়: নজরুল সঙ্গীত 
শিরোনাম: সতী-হারা উদাসী ভৈরব কাঁদে। 
 
	
		
রাগ: উদাসী ভৈরব (নজরুল সৃষ্ট), তাল: ত্রিতাল
সতী-হারা উদাসী ভৈরব কাঁদে।
			
বিষাণ ত্রিশূল ফেলি' গভীর বিষাদে॥
                   
              জটাজুটে গঙ্গা
                   
              নিস্তরঙ্গা,
রাহু যেন গ্রাসিয়াছে ললাটের চাঁদে॥
দুই করে দেবী-দেহ ধরি' বুকে বাঁধে,
রোদনের সুর বাজে প্রণব-নিনাদে।
ভক্তের চোখে আজি ভগবান শঙ্কর—
সুন্দরতর হ'ল — পড়ি' মায়া ফাঁদে॥
		
	
	
		- ভাবসন্ধান: হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে জগৎঘটক রচিত উদাসী 
		ভৈরব নাটিকায় ব্যবহৃত নজরুলের রচিত গান। 
			এই কাহিনি মতে দক্ষ একটি যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু জামাতা শিবের প্রতি বিদ্বেষবসত, শিব এবং কন্যা সতীকে এই যজ্ঞে আমন্ত্রণ করেন নি। সতী তা জানতে পেরে অযাচিতভাবে এই যজ্ঞে যাওয়ার অনুমতি লাভের জন্য শিবের কাছে যান। এই সময় শিব ধ্যান মগ্ন ছিলেন। তাই তিনি শিবের ধ্যান ভাঙার জন্য যোগিনীদের সাথে নিয়ে ধ্যানমগ্ন শিবের সামনে উপস্থিত হন।
		
 
 ধ্যানভঙ্গের পর শিব দুর্গাকে অনাহূতভাবে দক্ষযজ্ঞে যেতে নিষেধ করেন। দুর্গা সে নিষেধ উপেক্ষা করে দক্ষযজ্ঞে যান। দক্ষযজ্ঞে সতীর সামনে শিবের নিন্দা করলে, সতী দেহত্যাগ করেন। এই সংবাদটি শিবানী ভৈরবী শিবকে এই গানের মাধ্যমে শোনান। এরপর শিব দক্ষের শাস্তি দেওয়ার জন্য তাঁর প্রলয়ঙ্করী শক্তিকে জাগ্রত করেন এবং তাকে দক্ষের যজ্ঞ ধ্বংস করার আদেশ দেন।
 
 শিবের এই ক্রোধের ফলাফল সম্পর্কে যোগিনীরা জানতেন। তাই শিবকে শান্ত হতে অনুরোধ 
করেন। এই অনুরোধই এই গানের মূল বিষয়। তাঁরা বিরহ-বিহ্বল শিবকে  স্মরণ করিয়ে 
দেন যে, তাঁর ত্রিনয়নে রয়েছে বেদ, ভূষণের মতো জ্ঞান তাঁকে অলঙ্কৃত করেছে। তাই তাঁর 
(শিবের) মতো ধ্যানী সাধক পুরুষের পক্ষে শোক-উতলা রূপ শোভা পায় না। যিনি জগৎ লীলা 
সুন্দর, যিনি জগতের সকল রহস্য জানেন, তাঁর বিরহ-কাতরতা কোন লীলা, যোগিনীরা তা বুঝে 
উঠতে পারেন নি। যোগিনীরা জানেন শিব অচঞ্চল হলে, জগতের লয় হবে।
শিব শান্ত হন। কিন্তু সতীর বিরহে মূহ্যমান হয়ে পড়েন। এই নাটিকারে শেষ গানে ফুটে উঠেছে শিবের বিরহ-বেদনার আক্ষেপ।
 
 গানটি শুরু হয়েছে 'সতী-হারা উদাসী ভৈরব কাঁদে' দিয়ে। বিরহকাতর মহাদেব তার নিত্য সঙ্গী বিষাণ, ত্রিশূল ত্যাগ করেছেন। তাঁর জটায় পতিত গঙ্গার তরঙ্গোচ্ছ্বাস যেন হারিয়ে গেছে। রাহুর গ্রাসে (চন্দ্রগ্রহণকালে) চন্দ্র নিষ্প্রভ হয়ে যায়, সতীর বিরহে মহাদেবের কপালে শোভিত চন্দ্রও তেমনি নিষ্প্রভ হয়ে গেছে। তিনি দুই হাতে দেবীকে আলিঙ্গন করে কাঁদছেন। তাঁর কান্নার সুরে ধ্বনিত হচ্ছে বেদনার্ত ওঙ্কারধ্বনি। কবি, শঙ্করের (মহাদেবের অপর নাম) সেরূপ দেখে মোহিত এবং ভক্তির গভীর অনুভবে কবির কাছে শিব মহিমান্বিত হয়ে উঠেন।
 
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। 
		গানটি কাজী নজরুল ইসলাম, জগৎ ঘটক রচিত 
	উদাসী ভৈরব নামক নাটকের জন্য লিখেছিলেন। নাটিকাটি ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের
১২ নভেম্বর (রবিবার, ২৬ কার্তিক ১৩৪৬), প্রাতঃকালীন অধিবেশনে ৯.১৫-৯.৫৯ মিনিট 
	পর্যন্ত, কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল 
	৪০ বৎসর ৫ মাস।
 
- গ্রন্থ:
	- 
	উদাসী ভৈরব। 
	[পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমি]। দ্বিতীয় দৃশ্য। ষষ্ঠ গান। উদাসী ভৈরবীর গান।
- নবরাগ (নজরুল ইনস্টিটিউট। সেপ্টেম্বর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ)। পৃষ্ঠা: ৩৫-৩৬। 
	[নমুনা]
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১৭৬০।
 
 
- 
	পত্রিকা: বেতার জগৎ (পত্রিকা), ১০ম বর্ষ ২১শ 
	সংখ্যা। উদাসী ভৈরব। ১ নভেম্বর, ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ সংখ্যা।
পৃষ্ঠা: ৮১৫। [নমুনা]
 
	- বেতার:       
	উদাসী ভৈরব। নাটিকা। দ্বিতীয় দৃশ্য। 
	ষষ্ঠ গান।  কলকাতা বেতার কেন্দ্র [১২ নভেম্বর ১৯৩৯ (রবিবার, ২৬ কার্তিক 
	১৩৪৬), প্রাতঃকালীন অনুষ্ঠান। 
	৯.১৫-৯.৫৯ মিনিট।
	নাট্যকার জগৎ ঘটক। পরিকল্পনা, গীত রচনা ও সংগঠন- নজরুল ইসলাম। উদাসী ভৈরবীর গান
 
- স্বরলিপিকার: জগৎ ঘটক। [নবরাগ (নজরুল ইনস্টিটিউট। সেপ্টেম্বর 
		২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ)] [নমুনা]
 
- পর্যায়:
	- বিষয়াঙ্গ: নাট্যগীতি । 
	ভক্তি (হিন্দুধর্ম, প্রার্থনা) 
- সুরাঙ্গ: 
	খেয়ালাঙ্গ।  
				
- রাগ: 
	
	উদাসী ভৈরব। [এই গানটি নজরুল-সৃষ্ট '
	উদাসী 
	ভৈরব' রাগে নিব্দ্ধ। এই বিষয়ে জগৎ ঘটক তাঁর স্বরলিপি গ্রন্থ 'নবরাগ' -এ লিখেছেন—
	
'বহুকাল পূর্বের কথা। উদাসী ভৈরব  নামে একখানি নাটিকা বেতারে অভিনীত হবার জন্যে কবি আমাকে দিয়ে লিখিয়েছিলেন— এবং এর ছয়খানি গান তিনি রচনা ও তাতে সুরারোপ করেন। সুরগুলি রাগ-ধর্মী ও তাঁর সৃষ্ট নবরাগ। বাসন্তী বিদ্যাবীথির প্রয়োজনীয় নাটিকাটি বেতারে সাফল্যের সঙ্গে অভিনীত হয়েছিল। ... গানগুলি অরুণ-ভৈরব, আশা-ভৈরব, শিবানী-ভৈরবী, রুদ্র-ভৈরব, যোগিনী ও উদাসী ভৈরব।'
	 
- তাল: 
	
	ত্রিতাল