বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম:বাঁশিতে সুর শুনিয়ে নূপুর রুনঝুনিয়ে
বাঁশিতে সুর শুনিয়ে নূপুর
রুনঝুনিয়ে
এলে আজি বাদল প্রাতে।
কদম কেশর ঝুরে পুলকে তোমার পায়ে,
তমাল বিছায়ে ছায়া শ্যামল আদুল গায়ে।
অলকা পথ বাহি' আসিলে মেঘের নায়ে,
নাচের তালে বাজিয়া ওঠে চুড়ি কাঁকন হাতে॥
ধানি রঙের শাড়ি ফিরোজা রঙ উত্তরীয়
প'রেছি এ শ্রাবণ দোলাতে দুলিতে প্রিয়।
কেশের কমল-কলি, বনমালী, তুলিয়া আদরে
চাঁচর চিকুরে আপনি পরিও
তোমার রূপের কাজল পরায়ো আমার আঁখি-পাতে॥
- ভাবার্থ: এ গানের বনমালী (বর্ষা) আর প্রকৃতি, দুটি পৃথক সত্তা।
বর্ষার আগমনে বিচিত্ররূপিণী প্রকৃত-কন্যা বর্ষাকন্যা হয়ে ওঠে। তাই এই গানটি
প্রকৃতি ও প্রেম না হয়ে- প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতির গান হয়ে উঠেছে।
এ গানের নায়িকা প্রকৃতি। বর্ষারূপী শ্যামের আগমনে সে হয়ে ওঠে প্রয়ণয়িনী
বর্ষানন্দিনী। বর্ষণিসিক্ত প্রভাতের রুমঝুম ঝুমঝুম বৃষ্টির শব্দ হয়ে ওঠে
শ্যামরূপী নায়কের নুপূরের ধ্বনি। প্রকৃতি কন্যার সাথে বর্ষারূপী শ্যামের আগমনে-
প্রকৃতির বুকে ধ্বনিত হয় প্রণয়-বাঁশীর সুর। প্রকৃতি কন্যা যেন তার (বর্ষা ঋতু)
পায়ে কদম কেশর দিয়ে আনন্দ-বেদনার পুলকে নিজেক নিবেদন করে। বর্ষার অবারিত দেহে
পড়ে তমালের শ্যামল ছায়া। যেন মেঘের নৌকায় চড়ে বর্ষা আসে কুবেরের অলকা নগরী থেকে।
তার নাচের ছন্দে বেজে ওঠে প্রকৃতি কন্যার হাতের অলঙ্কার।
শ্যামরূপী বর্ষার আগমনে প্রকৃতি কন্যা পড়ে যেন ধানি রঙের শাড়ি, ফিরোজা রঙের
আকাশ হয়ে ওঠে তার উত্তরীয়। প্রকৃতিকন্যার এই সাজ যেন শ্যামের সাথে শ্রাবণের
ঝুলন দোলায় দোলার জন্য। প্রকৃতির নিবেদিত পদ্ম-কলি বিকশিত হয় প্রেমের
মুকুল হয়ে। বর্ষাকন্যার একান্ত কামনা- শ্যামরূপী বর্ষা যেন তার প্রেমের কলিকে
আদরে-সোহাগে, তার দোলায়িত কেশরাশিতে স্থান দেয় এবং বর্ষার কাজল কালো রূপ দিয়ে
রঞ্জিত করে তার নয়নপল্লব।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪১) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির
প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৫ বৎসর ৬ মাস।
- রেকর্ড:
এইচএমভি [ডিসেম্বর ১৯৩৪ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪১)। এন ৭৩১০। শিল্পী: হরিমতী। সুর: ধীরেন দাস]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সেলিনা হোসেন
[একবিংশ খণ্ড,
নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা] ১৭ সংখ্যক গান।
[নমুনা]
- সুরকার:
ধীরেন দাশ
- পর্যায়: