বিষয়: নজরুলসঙ্গীত
শিরোনাম: আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন
আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন
খুঁজি তারে আমি আপনায়॥
আমি
শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি
আমারি তিয়াসী বাসনায়॥
আমারি মনের তৃষিত আকাশে
কাঁদে সে চাতক আকুল পিয়াসে,
কভু সে চকোর সুধা-চোর আসে
নিশীথে স্বপনে জোছনায়॥
আমার মনের পিয়াল তমালে হেরি তারে স্নেহ-মেঘ-শ্যাম,
অশনি-আলোকে হেরি তারে থির-বিজুলী-উজল অভিরাম।
আমারি রচিত কাননে বসিয়া
পরানু পিয়ারে মালিকা রচিয়া
সে-মালা সহসা দেখিনু জাগিয়া
আপনারি গলে দোলে হায়॥
-
ভাবসন্ধান: সুফি দর্শনে
পরমপুরুষ মনের মানুষ বা আপন জন হয়ে মনে বিরাজ করে। কবি এই গানে সেই আপনজনকে আপন
জীবসত্তার মাঝে খুঁজছেন। পরমাত্মাকে পাওয়ার তীব্র আকাঙক্ষায় তিনি ক্ষণে ক্ষণে অনুভব
করেন তাঁর আগমনের পদধ্বনি। অন্তরাতে কবি নিজেকে
কাঙ্ক্ষিত মনকে চিদাকাশের তৃষিত চাতক পাখির সাথে তুলনা করেছেন। মনের
মাধুরীসুধাকে হরণ করে পরমপুরুষ রাত্রি স্বপ্নময় জোছনার আলোছায়া প্রকাশিত হয়।
কবির অনুভব জাগে ধ্যানমগ্ন মোহিত দশায়। আধ্যাত্মিক দর্শনে কবি পরমপুরুষকে খুঁজে
পান- শ্যামল প্রশান্ত স্নিগ্ধ মেঘে, তাঁর দর্শন মেলে স্থির বিজুলির আলোর মতো।
ধ্যানমগ্ন কবি আধ্যাত্মিক ভুবনে পরমপুরুষের জন্য যে ভক্তি ও প্রেমের মালা
গাঁথেন, ধ্যান শেষে দেখেন সে মালা পুরমপুরুষ তাঁর গলাতে পরিয়ে দিয়েছেন। কবির
অনুভবে জেগে উঠে নিজের চেয়ে আপন যে জন, সেই পরম পুরুষ এবং তাঁর জীবাত্মার
মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
-
রচনাকাল ও স্থান:
আষাঢ় মাসে কলকাতায় থাকাকালে এই গানটি রচনা করেছিলেন। গানটি ১৩৩২ বঙ্গাব্দের প্রকাশিত 'ছায়ানট' কাব্যগ্রন্থে 'আপন-পিয়াসী' শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। গানটির নিচে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে- 'কলিকাতা/আষাঢ় ১৩৩১'। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৫ বৎসর ১ মাস।
-
গ্রন্থ:
- ছায়ানট
- প্রথম সংস্করণ [বর্মণ পাবলিশিং হাউস, ২২
সেপ্টেম্বর ১৯২৫ আশ্বিন ১৩৩২] শিরোনাম:
আপন পিয়াসী।
পৃষ্ঠা: ৬১।
- নজরুল রচনাবলী জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, মে ২০১১।
ছায়ানট। শিরোনাম:
আপন পিয়াসী।
পৃষ্ঠা ৩৭]
-
নজরুল গীতিকা
- প্রথম সংস্করণ [ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০।
টপ্পা। ৪।
শাওন-কাওয়ালী। পৃষ্ঠা ৮৬]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড
[বাংলা একাডেমী, ঢাকা ফাল্গুন ১৪১৩/মার্চ ২০০৭] ৭৫।
নজরুল গীতিকা। টপ্পা।
শাওন-কাওয়ালী। পৃষ্ঠা:
২২১]
-
গ্রন্থ:
- বিষয়াঙ্গ: ভক্তি [সুফিদর্শন]