নাটক : ‘আলেয়া’
খুঁচি খুঁচি সূচি-সারি, হাঁড়ি মুখে কালো দাড়ি যেন কণ্টক বৈঁচির বনে।
তারে ছাড়াতে বসন ছিঁড়ে, ক্ষুর ভাঙে রণে॥
দেয় ভঙ্গ রণে ক্ষুর খুরপো হ’য়ে
দেয় কাট্তে পালায় মাঠে কাস্তে ভয়ে!
সে যে আঁধার বাদার-বন শ্মশ্রুর ঝোপ,
পাশে গুল্প লাতর ঝাড় কণ্টক-গৌফ (শ্যামের দাড়ি রে - )
শয়নে যাইতে মোর নয়ন ঝুরে লো সই অ্গ কাঁপিয়া মরে ডরে। (সখি লো)
ওযে মুখ নয়, পিতামহ ভীষ্ম শুইয়া যেন খর শর-শয্যার পরে! (সখি লো)
শজারুর সনে নিতি লড়াই, যাই রে দাড়ির বালাই যাই!
শ্যামের দীর্ঘ শ্মশ্রু ছিল যে গো ভালো, ছিল না খোঁচার জ্বালা
আমায় দাড়ির আঙুল বুলায়ে বুলায়ে ঘুম পাড়াইত কালা।
আমার আবেশে নয়ন মুদে যে যেত!
সে পরশে নয়ন বুঁজে যে যেত!
আমি খড়ের পালুই ধরে শুইতাম যেন গো,
তাহে শীত নিবারিত, তারে কাটিল সে কেন গো!
শ্যামের মুখের মতন কি দিল এমন দাড়িরূপী মুড়ো ঝ্যাঁটা গো,
কালার গণ্ড জড়ায়ে কিলবিল করে শত সে সতীন কাঁটা গো!
আমি জ্বলে যে ম’লাম, সখি আমায় ধর ধর, জ্ব’লে যে ম’লাম॥
'নজরুল ইসলাম একখানি অপেরা লিখেছেন। প্রথমে তার নাম দিয়েছিলেন 'মরুতৃষ্ণা'। সম্প্রতি তার নাম বদলে 'আলেয়া' নামকরণ হয়েছে। গীতি-নাট্যখানি সম্ভবত মনোমহনে অভিনীত হবে। এতে গান আছে ত্রিশখানি। নাচে গানে অপরূপ হয়েই আশা করি এ অপেরাখানি জনসাধারণের মন হরণ করেবে।'
এই বিচারে ধারণা করা যায়, গানটি নজরুল রচনা করেছিলেন, ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের
জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসের দিকে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩০ বৎসর ১ মাস।