'নজরুল ইসলাম একখানি অপেরা লিখেছেন। প্রথমে তার নাম দিয়েছিলেন 'মরুতৃষ্ণা'। সম্প্রতি তার নাম বদলে 'আলেয়া' নামকরণ হয়েছে। গীতি-নাট্যখানি সম্ভবত মনোমহনে অভিনীত হবে। এতে গান আছে ত্রিশখানি। নাচে গানে অপরূপ হয়েই আশা করি এ অপেরাখানি জনসাধারণের মন হরণ করেবে।'
স্বদেশ পত্রিকায় (প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যায় ১৩৩৮) আলেয়া গীতিনাট্য প্রকাশের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল-
'আগামী সংখ্যায় কবি নজরুল ইসলামের গীতিনাট্য 'আলেয়া' আরম্ভ হইবে।'
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো পত্রিকাতেই নাটকটি
প্রকাশিত হয় নি। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে ডিসেম্বর (শনিবার
৩ পৌষ ১৩৩৮) কলকাতার
নাট্যনিকেতন মঞ্চে 'আলেয়া' গীতিনাট্য মঞ্চস্থ হয় নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন সতু সেন। বিভিন্ন চরিত্র রূপায়ণ
করেছিলেন- ধীরাজ ভট্টাচার্য, ভূপেন রায়, নিরূপমা দেবী এবং তারাসুন্দরী। একই
দিনে আলেয়া গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
গ্রন্থটির প্রকাশক ছিলেন গোপালদাস মজুমদার, ডি,এম, লাইব্রেরী, ৬১ কর্নওয়ালিশ
স্ট্রিট, কলকাতা। মুদ্রাকর: নরেন্দ্রনাথ কোঙার, ভারতবর্ষ প্রিন্টিং ওয়ার্কস,
২৩৩/১/১ কর্নমওয়ালিশ স্ট্রিট, কলকাতা। পৃষ্ঠা ৮+৭২। দাম এক টাকা। পরে ডি,এম,
লাইব্রেরী থেকে 'আলেয়া ও ঝিলিমিলি' নামক সংকলনের সাথে থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।
এই নাটকের কুশীলব
মীনকেতু গান্ধার-রাজ
চন্দ্রকেতু ঐ সেনাপতি
কৃষ্ণা ঐ প্রধানা মন্ত্রী
কাকলি ঐ প্রধানা গায়িকা
রঙ্গনাথ ঐ বয়স্য
মধুশ্রবা ঐ সভাকবি
জয়ন্তী যশোল্মীরের রানি
চন্দ্রিকা ঐ কনিষ্ঠা সহোদরা
উগ্রাদিত্য ঐ সেনপাতি
সৈন্যগণ, প্রমোদ-উদ্যানের সুন্দরীগণ, যোগিণীগণ ইত্যাদি।
এই একটি রূপক নাটক। এই নাটকের আলেয়া হলো- নারী হৃদয়ের
প্রেমের কুহেলিকা। নারী মন যাকে চিরকাল অবহেলা করে,
তাকে হারানোর তাকেই সে আবার ফিরে পেতে।
আবার যাকে যে চিরকাল চেয়েছে, সেই তখন তার চলে-যাওয়া
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেমিকের
পিছনে পড়ে যায়। .আবার পুরুষ তেমনি
নারীতে নারীতে তার চিরন্তন মানসীকে খুঁজে ফেরে। তাই তার কাছে
আজকার সুন্দরের তীর্থ, পুরানো
হয়ে যায়। তাই তার প্রেমের তীর্থে পথ পরিক্রমা।
এই নাটকের প্রধান তিনটি নারীকে
কেন্দ্র করে প্রেমের আলেয়া বিকশিত হয়েছে। এদের একজন কৃষ্ণা।
সে চিরকালের ব্যর্থ-প্রেমের নারী। জীবনে সে কাউকে ভালোবাসতে পারে না।
তবি এর ভিতরে সে খুঁজে পায়া তার জীবনের চরম দুখ। দ্বিতীয়
নারী- জয়ন্তী। এই নারী তেজে
ও শক্তিতে রানি। নারীর তেজদীপ্ততাই
তার শক্তি। তৃতীয় নারী চন্দ্রিকা। চিরকালের কুসুম-পেলব প্রাণ-চঞ্চল নারী,
শুধু পৌরুষ-কঠোর পুরুষকে ভালোবাসতে চায়।
নাটকের নারী পরিচিতির ভাষায়- 'মরুভূমির পরে যে বনশ্রী, সংগ্রামের শেষে যে কল্যাণ, এ
তাই। এরই তপস্যায় পশু-নর মানুষ হয়, মৃত্যু-পথের পথিক প্রাণ পায়।'
কল্লোল পত্রিকার 'আষাঢ় ১৩৩৬' সংখ্যার
সুবাদে ধারণা করা যায়,
নাটকটিতে ৩০টি গান ব্যবহৃত হয়েছিল। কিন্তু প্রকাশিত গ্রন্থে ২৮টি গান পাওয়া যায়। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় এই গীতিনাট্যটি পরিমার্জনার
সময় ২টি গান বাদ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু কোন ২টি গান বাদ পড়েছিল, তা জানা যায় না।
গ্রন্থাকারে প্রকাশিত আলেয়ার ব্যবহৃত ২৮টি গান ছিল।
- প্রস্তাবনা: পথিকের গান: নিতি নিতি মোরে ডাকে (নিশি নিশি মোরে [তথ্য]
বর্তমানে গানটির প্রথম পঙক্তি 'নিশি নিশি মোরে ডাকে সে স্বপনে' হিসেবেও পাওয়া যায়।- প্রজাপতিদ্বয়ের গান: দুলে আলো শতদল [তথ্য]
- কিশোরীগণ ও প্রজাপতিদ্বয়ের গান: মোরা ফুটিয়াছি বঁধু [তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: ভোরের হাওয়ার গান: পোহাল পোহাল নিশি খোল গো আঁখি [তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: সুন্দরীদের গান: ভোরের হাওয়া এলে [ তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: কাকলি ও সুন্দরীদের গান: ফুল কিশোরী জাগো জাগো [তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: সুন্দরীদের গান: যৌবন-তটিনী ছুটে চলে [তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: কবির গান: এসেছে ন'ব্নে বুড়ো [তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: একটি মেয়ের গান: কেন ঘুম ভাঙালে প্রিয় [তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: মালার গান: চাঁদনী রাতে কানন সভাতে [তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: মদালসার গান: কেন রঙীন নেশায় মোরে রাঙালে [তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: কাকলি ও সখীদের গান: ধর ধর ভর ভর, এ রঙিন পেয়ালী [তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: তরুণীদের গান: আধো ধরণী আলো আধো আঁধার [তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: কাকলির গান: আঁধার রাতে কে গো একেলা [তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: কাকলির গান: যৌবনে যোগিনী,আর কত কাল [তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: রঙ্গনাথের গান: খুঁচি খুঁচি সূচি-সারি [তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: কাকলি ও বন্দীগণের গান: জাগো যুবতি! আসে যুবরাজ [তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: ঝোড়ো হাওয়া ও ঘূর্ণির গান: ঝঞ্ঝার ঝাঁঝর বাজে ঝনঝন [তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: নটরাজের গান: নাচিছে নটনাথ, শঙ্কর মহাকাল [তথ্য]
- প্রথম অঙ্ক: বৃষ্টিধারার গান: নামিল বাদল! রুমু রুমু ঝুমু [তথ্য]
- দ্বিতীয় অঙ্ক: চন্দ্রিকার গান: এ নহে বিলাস বন্ধু [তথ্য]
- দ্বিতীয় অঙ্ক: চন্দ্রিকার গান: বেসুর বীণায় ব্যথার সুরে [তথ্য]
- দ্বিতীয় অঙ্ক: চন্দ্রিকার গান: তাহারে দেখলে হাসি [তথ্য]
- দ্বিতীয় অঙ্ক: যোগিনীর গান: জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা [তথ্য]
- দ্বিতীয় অঙ্ক: সেনাদলের গান: টলমল টলমল পদভরে [তথ্য]
- তৃতীয় অঙ্ক: বৈতালিকের গান: আসিলে কে অতিথি সাঁঝে [তথ্য]
- তৃতীয় অঙ্ক: তরুণী ও কিশোরীদের গান: মাধবী-তলে চল মাধবিকা-দল [তথ্য]
- তৃতীয় অঙ্ক: কাকলির গান: গহীন রাতে ঘুম কে এলে ভাঙাতে [তথ্য]
জয়তী পত্রিকার 'কার্তিক-পৌষ ১৩৩৮' সংখ্যায় ৬টি গান প্রকাশিত হয়েছিল। এই গানগুলো হলো-
এই গানগুলোর ভিতরে ৩টি নাটকে পাওয়া যায় না। এই গানগুলো হলো- আজিকে তনু মনে লেগেছে রঙ, কেমনে কহি প্রিয় কি ব্যথা প্রাণে বাজে, এবং কে এলে গো চিরচেনা অতিথি (কে এলে গো)।