বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: আমার কালো মেয়ে রাগ করেছে (মাকে) কে দিয়েছে গালি
আমার কালো মেয়ে রাগ করেছে (মাকে) কে দিয়েছে
গালি-
রাগ ক'রে সে সারা গায়ে মেখেছে তাই কালি॥
যখন
রাগ
করে মোর অভিমানী মেয়ে
আরো মধুর লাগে তাহার হাসি-মুখের চেয়ে-
কে
কালো দেউল ক'রলে আলো অনুরাগের প্রদীপ জ্বালি'॥
পরেনি সে বসন-ভূষণ, বাঁধেনী সে কেশ, -
তারি কাছে হার মানে যে ভুবন-মোহন বেশ।
রাগিয়ে তারে কাঁদি যখন দুখে, (দয়াময়ী মা) -
দয়াময়ী মেয়ে আমার ঝাঁপিয়ে পড়ে বুকে;
আমার
রাগী মেয়ে, তাই তারে দিই জবা ফুলের ডালি॥
- ভাবসন্ধান: এই গানে মাতৃরূপিণী কালীকে আদরিণী কন্যা রূপে উপস্থাপন
করেছেন কবি। ফলে দেবী হয়ে উঠেছেন মাতা-কন্যা দ্বৈত সত্তার মহিমায় অপরূপা।
কল্পলোকের বাৎসল্য ও ভক্তি রসে সিক্ত কালীর সকল রূপকে কবি উপস্থাপন করেছেন একই
সাথে মাতৃভক্তি ও অপত্যস্নেহে।
ভক্তির কল্পলোকে কবি কালী রূপের ব্যাখায় বলেছেন- যেন মাকে কেউ গালি দিয়েছিল,
তাই তিনি সারা গায়ে কালি মেখে কালি-রূপিণী হয়েছেন। পরক্ষণেই তিনি দেবীকে তিনি
দেখেছেন অভিমানিনী এই কন্যা হিসেবে। অপত্যস্নেহে তাঁর কাছে এই অভিমানিনীর কালো
মুখ হয়ে উঠেছে মধুরতর।
কবি কল্পলোকে অনুভব করেন- যেন কালীর কালো মন্দির তাঁরই অনুরাগের প্রজ্বলিত
প্রদীপের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে। তাঁর কাছে- নগ্ন-দেহী এই এলোকেশীর রূপ যে কোনো
ভুবনমোহিনী রূপকে হার মানায়। দয়াময়ী মাতৃরূপিণী কালীর অবাধ্য হয়ে কবি যখন তাঁকে
দুঃখ দেন, তখন সে দুঃখ ভোলাতে তিনি কন্যা হয়ে যেন তাঁর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
মাতা-কন্যার এই দ্বৈত সত্তা মিলে কবির কাছে এই দেবী অদ্বিতীয়া। কন্যা হিসেবে
দেবী কবির কাছে ক্রোধা। আবার মাতৃরূপে এই দেবী পূজ্য। তাই রাগী মেয়ের রাগ
ভাঙাতে মাতৃরূপিণী দেবীকে তিনি পূজার অর্ঘ্ হিসেবে 'জবা ফুলের ডালি' নিবেদন
করেন।
- রচনাকাল ও স্থান:
গানটির রচনাকাল সম্পর্কে
সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর (ভাদ্র-আশ্বিন-১৩৪৫)
মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি এই গানটির একটি রেকর্ড প্রকাশ করেছিল। এই
সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৯ বৎসর ৩ মাস।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৭। ফেব্রুয়ারি ২০১১)।
গান- ৬৭৮। পৃষ্ঠা: ২০৬-২০৭।
- নজরুল সুরলিপি, দশম খণ্ড, ৮ সংখ্যক গান (নজরুল একাডেমী, ডিসেম্বর ১৯৮৬)। পৃষ্ঠা: ২৩-২৭।
- রাঙাজবা, ৬৪ সংখ্যক গান। (নজরুল-রচনাবলী, সপ্তম খণ্ড। বাংলা একাডেমী, জ্যৈষ্ঠ ১৪১৫। মে ২০০৮)। পৃষ্ঠা: ২৫২।
- বেতার:
-
রক্তজবা ।
(গীতিচিত্র),। রচয়িতা: অবিনাশ
বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ২০ নভেম্বর ১৯৩৯ (সোমবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৩৪৬)।
সান্ধ্য অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৬.১০।
- সূত্র:
- বেতার জগৎ। ১০ম বর্ষ, ২২শ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ৮৭৭
- নজরুল যখন বেতারে। আসাদুল হক। বাংলাদেশ শিল্পকলা একডেমী। মার্চ ১৯৯৯।
পৃষ্ঠা: ৭৬।
- রেকর্ড: এইচএমভি [সেপ্টেম্বর ১৯৩৮ (ভাদ্র-আশ্বিন-১৩৪৫)]। এন ১৭১৮৩। শিল্পী:
মৃণালকান্তি ঘোষ।
- সুরকার:
কমল
দাশগুপ্ত
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- ড. রশিদুন্ নবী। নজরুল -সংগীত স্বরলিপি (৩৯তম খণ্ড)। নজরুল
ইন্সটিটিউট। ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩/জুন ২০১৬। গান সংখ্যা ১। পৃষ্ঠা: ১৭-২১
[নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্ত। শ্যামাসঙ্গীত
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের গান
- তাল:
দাদরা
- গ্রহস্বর: মগ