বিষয়: নজরুলসঙ্গীত
শিরোনাম: অম্বরে মেঘ-মৃদঙ বাজে জলদ-তালে
অম্বরে মেঘ-মৃদঙ বাজে জলদ-তালে
লাগিল মাতন ঝড়ের নাচন ডালে ডালে॥
দিগন্তের ঐ দুর্গ-মূলে
ধূলি-গৈরিক কেতন দুলে
কে দুরন্ত আগল খুলে ঘুম ভাঙালে॥
থির সাগরের নীল তরঙ্গে আনন্দেরি
সেই নাচনের তালে তালে বাজিল ভেরি।
মাভৈঃ মাভৈঃ ডাক শুনি যার
পথ ছেড়ে
দে রথ এলো তাঁর।
দুর্দিনে সে বজ্র-শিখার আগুন জ্বালে॥
-
ভাবার্থ: গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে উত্তপ্ত প্রকৃতিতে ধ্বংসের তাণ্ডবনৃত্যে মেতে উঠে কালবৈশাখী। সে নৃত্যের উন্মাদনা আকাশে ছড়িয়ে পড়ে ঝড়ের অংশভাগীরূপে জলদ তালে বাদিত মেঘমৃদঙ্গের ধ্বনি। এখানে জলদ-তাল শব্দটি দ্ব্যার্থক। হতে পারে মেঘের (জলদ) ছন্দ, হতে পারে দ্রুতলয়ে বাদিত তাল।
এই তাণ্ডব নৃত্যের উন্মাদনায় দূর দিক্চক্রবালে ধূলির ধ্বংসপতাকা আন্দোলিত হয়। যেন কোনো এক অজানা অশান্ত দশা, প্রকৃতির স্তব্ধ-মৌন দশার বদ্ধ দুয়ার থেকে মুক্ত করে দেয় তাণ্ডব নর্তককে।
এই ঝড়ের নৃত্যসঙ্গিনী হয়ে স্থির (স্বাভাবিক) সাগরের নীলতরঙ্গ অশান্ত হয়ে ওঠে নৃত্যানন্দে। এই নাচের সাথে বেজে ওঠে বিধ্বংসী যুদ্ধের মেঘের রণবাদ্যরূপী ভেরি। এরই মধ্য কবি নবসৃষ্টির আশাব্যঞ্জক অভয় বাণী
'ভয় নাই, ভয় নাই' শুনতে পান। কবি সেই কল্যাণময়ের আগমনী রথকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই দুর্দিনের রথযাত্রায় বজ্র-শিখার আগুন জ্বেলে প্রকৃতিকে শুদ্ধ করে যে কল্যাণময়, তাকে বরণ করে নেওয়ার জন্যই এ আহ্বান। কবির কাছে এ গানের বিধ্বংসী ঝড় শুধু ভয়ঙ্কর নয়, শুভঙ্করও বটে।
-
রচনাকাল ও স্থান: গানটির
রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই
মাসে ( আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৪১)
এইচএমভি
রেকর্ড কোম্পানি
গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করে।
এই সময় নজরুলের
বয়স ছিল ৩৫ বৎসর ১ মাস।
- রেকর্ড:
এইচএমভি [জুলাই ১৯৩৪ ( আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৪১)।
এন ৭২৫১। শিল্পী: শঙ্কর মিশ্র (মহম্মদ কাশেম]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
আসাদুল হক।
নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (চতুর্থ খণ্ড)।
দ্বিতীয় মুদ্রণ [নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫।
দ্বিতীয় গান। পৃষ্ঠা ৩৬-৩৮] [স্বরলিপি:
নমুনা]
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি, জাগতিক, ঋত, গ্রীষ্ম, বৈশাখি ঝড়।
- সুরাঙ্গ:
ধ্রুপদাঙ্গ
- রাগ:
সিন্ধু
- তাল:
তেওরা
- গ্রহস্বর: সা।