বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: কালা এত ভাল কি হে কদম্ব গাছের তলা
কালা এত ভাল কি হে কদম্ব গাছের তলা।
আমি দেখ্ছি কত দেখ্ব কত তোমার ছলাকলা;
আমি নিতুই নিতুই সইব কত, (কালা) তিন সতিনের জ্বালা॥
আমি জল নিতে যাই যমুনাতে তুমি বাজাও বাঁশি হে,
মনের ভুলে কলস ফেলে তোমার
কাছে আসি হে,
শ্যাম দিন-দুপুরে গোকুলপুরে (আমার) দায় হল পথ চলা॥
আমার চারদিকেতে ননদ-সতীন দু’কূল রাখা ভার,
আমি সইব কত আর বাঁকা শ্যাম।
ওরা বুঝছে সবই নিত্যি-নতুন, (নিতি) মিথ্যে কথা বলা॥
- ভাবসন্ধান: কৃষ্ণ-প্রেমে অধীর রাধাকে প্রতিদিন তাঁর প্রেমের
প্রতিদ্বন্দ্বী গোপিনীদের ঈর্ষা, সংসারের ননদ ও ব্রজকূলবাসীদের কটূক্তি ইত্যাদি
সহ্য করতে হয়। এই গানে রাধার সেই অসহনীয় যন্ত্রণাকে উপস্থাপন করা হয়েছে- রাধার
অভিব্যক্তিতে।
তাঁর প্রথম যন্ত্রণা কৃষ্ণকে নিয়েই। রাধা তাঁকে ভুলে থাকতে চাইলেও তাঁর বাঁশী
ভুলে থাকতে দেয় না। তাঁর বাঁশী বেজে ওঠে কদম তলায়। সেখানে নানা ছলাকলায় কৃষ্ণ তাঁকে প্রেম নিবেদন
করেন। গানের শুরুতেই রাধা বিদ্রূপের ছলে জানতে
চেয়েছেন- কদম তলা কি এ্তই তাঁর কাছে আকর্ষণীয় যে তিনি বারবার সেখানে প্রেমের
ছলাকলার লীলাস্থল করে তুলেছে। এই কদম তলাতেই রাধা কৃষ্ণের চতুর, চঞ্চল এবং লীলাময়
প্রেম।
রাধার গৃহীজীবনের অন্তরা হয়েছে- তাঁর 'তিনি সতিন'। এখানে কবি 'তিন সতিন' শব্দটি রূপকার্থে ব্যবহার করেছেন
রাধার স্বাভাবিক ও কৃষ্ণ প্রেমের প্রতিবন্ধকতার তিনটি উৎসকে। এই 'তিনি সতিন'-এর প্রথমা সতিন- কৃষ্ণের
বাঁশি। যা গৃহী রাধার স্বাভাবিক জীবনে সতীনের মতো অন্তরায় হয়ে ওঠে। রাধার দ্বিতীয়া সতিন হলো- অন্যান্য
গোপিনীরা, যারা রাধার মতই কৃষ্ণের প্রেম-প্রত্যাশিনী। রাধার তৃতীয়া সতিন হলো-
তাঁর সংসার ও বৃন্দাবন-বাসীরা। যাঁরা তাঁর প্রেমকে পরকীয়ার কলঙ্ক হিসেবে অভিহিত
করেছিলেন।
এই তিন সতিনের প্রথম সতিন কৃষ্ণের বাঁশি, যার সুরে মোহিত হয়ে তিনি কুলকলঙ্কিনী
হয়েছেন। রাধা যখন যমুনাতে জল আনতে যান। তখন কৃষ্ণের বাঁশি বেজে ওঠে। সে বাঁশির সুরে
থাকে প্রেমের আহ্বান। তাঁর আবেদন এতটাই রাধাকে মোহিত করে যে, তিনি তা উপেক্ষা করতে
পারেন না। তাই আত্মহারা হয়ে তিনি মনের ভুলে জলের কলস ফেলে দিয়ে কৃষ্ণের দিকে
ছুটে যান। কিন্তু ছুটে যাওয়ার বাধা হয়ে দাঁড়ায়- দ্বিতীয় ও তৃতীয় সতিন-রূপী
গোপিনীরা এবং ব্রজবাসীরা। একদিকে শ্যামের বাঁশী, অন্য দিকে এই সতীনরা। তাই
দিনের বেলাতেও গোকুলের পথ দিয়ে চলাও রাধার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাধার প্রেমের অন্তরার এক দিকে আছেন ননদিনী কুটিলা। যিনি পদে পদে রাধা ও কৃষ্ণের মিলনে বাধার সৃষ্টি করেন।
অন্যদিকে রয়েছে- তাঁর 'তিন সতিন'। এই দুই কূল রক্ষা করে চলা রাধার পক্ষে অসম্ভব
হয়ে পড়েছে। এসব সামাল দিতে গিয়ে, তাঁকে নিত্য নতুন মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়।
কিন্তু তাঁরা রাধার এই মিথ্যাচরণ বুঝতে পারেন। কিন্তু সব বুঝেও
কৃষ্ণ-প্রেম-কাঙালিনী রাধার কিছুই করার থাকে না।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে
সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ অক্টোবর (রবিবার
২৭ আশ্বিন ১৩৩৯) প্রকাশিত 'বনগীতি' গ্রন্থে গানটি প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়ে
প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৩ বৎসর ৪ মাস।
- গ্রন্থ:
- বনগীতি
- প্রথম সংস্করণ [১৩ অক্টোবর ১৩৩২ (রবিবার ২৭ আশ্বিন ১৩৩৯)]। ঝুমুর-খেমটা। পৃষ্ঠা:
৬৫
- নজরুল-রচনাবলী। জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, পঞ্চম খণ্ড। বাংলা একাডেমী। ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮/মে ২০১১।
বনগীতি। গান ৪৪। ঝুমুর-খেমটা। পৃষ্ঠা ২০৪-২০৫।
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১৩৭৫।
পৃষ্ঠা: ৪১৬]
- রেকর্ড:
এইচএমভি [ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩ (মাঘ-ফাল্গুন)। এন
৭০৭৬। শিল্পী: আশ্চর্যময়ী]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
ইদ্রিস আলী [নজরুল
সঙ্গীত স্বরলিপি, দ্বাবিংশ খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা ভাদ্র, ১৪০৭/
সেপ্টেম্বর, ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ] ১১ সংখ্যক গান।
[নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব। রাধা। প্রেম।
- সুরাঙ্গ: ঝুমুর
- তাল: দ্রুত
দাদরা
- গ্রহস্বর: সা