বিষয়: নজরুল সঙ্গীত
শিরোনাম: গগনে পবনে আজি ছড়িয়ে গেছে রঙ
গগনে পবনে আজি ছড়িয়ে গেছে রঙ
নিখিল রাঙিল রঙে অপরূপ ঢঙ॥
চিত্তে কে নৃত্যে মাতে দোল লাগানো ছন্দে,
মদির রঙের নেশায় অধীর আনন্দে,
নাচিছে সমীরে পুষ্প, পাগল বসন্ত, বাজে মেঘ মৃদঙ॥
প্রাণের তটে কামোদ নটে সুর বাজিছে সুমধুর
─
দুলে অলকানন্দা রাঙা তরঙ্গে
শিখী কুরঙ্গ নাচে রঙিলা ভ্রুভঙ্গে,
বাজিছে বুকে সুর-সারং কাফির সঙ্গ্॥
- ভাবার্থ: বসন্তের আগমনে প্রকৃতি বর্ণাঢ্য উৎসবে মেতে ওঠে। সে উৎসবের পরশ
লাগে কবির মনে। বসন্তের মদির রঙে উদ্বেলিত কবি, তাঁর অনুভবকে অপূর্ব বাণীচিত্রে
উপস্থাপন করছেন এই গানে।
গানের বাণীতে পাওয়া যায়- বসন্তের বর্ণাঢ্য উৎসবের রঙের ছোঁয়া রঞ্জিত আকাশ বাতাস।
পৃথিবী এই উৎসবে নতুন সাজে সজ্জিত হয়। মন নেচে উঠে আনন্দতরঙ্গে, মোহনীয় রঙের নেশায়
অধীর আনন্দে বাতাসের তরঙ্গে নাচে পুষ্পরাশি, বেজে ওঠে মেঘমৃদঙ্গ। সব মিলিয়ে উৎসবের
পাগলামিতে মেতে ওঠে বসন্ত। উদ্বেলিত প্রাণের কূলে সমধুর কামোদ নটের সুর বেজে ওঠে।
তারই আবেশ যেন স্বর্গনদী অলকনন্দায় ওঠে রাঙা তরঙ্গ, ময়ুর, হরিণ নাচে রঙিলা ভ্রূভঙ্গে।
বাজে বসন্তকে আমোদিত করে সারং-এর সাথে কাফির সুর।
এই গানের বাণীচিত্রটি কবির কল্পভাবনা। আকাশ, বাতাস, ফুল, ময়ূর, হরিণ, নদীতরঙ্গ - এ
সব শুধুই প্রকৃতির নয় কবি চিত্তেরও। সেখানে কবির মনকে রাঙিয়ে দেয়- তারই মনে বাদিত
অপার্থিব কামোদ, নট, সারং, কাফি রাগসমূহের সুর। এ যেন কবি মনের অনাহত নাদে বাদিত
আনন্দসঙ্গীত। বসন্তের অপার্থিব যে রূপ কবি দেখেছেন, তাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন এই
গানে। অনাহত নাদের মতই এ ছবি অপার্থি। অদর্শিত এই চিত্রকে বলা যায় ছবির আড়ালে আঁকা
অন্য ছবি। কবি এই না-দেখা ছবি, না-শোনা সঙ্গীতকে অপূর্ব শিল্পশৈলীতে উপস্থাপন করছেন
তার এই গানে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে
সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে (চৈত্র ১৩৪০-বৈশাখ ১৩৪১)
টুইন রেকর্ড
কোম্পানি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। এই
সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ১১ মাস।
- রেকর্ড: টুইন [এপ্রিল ১৯৩৪ (চৈত্র ১৩৪০-বৈশাখ ১৩৪১)। এফটি ৩০৮৩।
শিল্পী: মিস্
ঊষারাণী]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: ইদ্রিস আলী [নজরুল
সঙ্গীত স্বরলিপি, চব্বিশতম খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা]
পঞ্চম গান।
[নমুনা]
- সুরকার: নজরুল ইসলাম
- পর্যায়: