ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি


     বাল্মীকিপ্রতিভা 

                                    দ্বিতীয় দৃশ্য

                                    অরণ্যে কালীপ্রতিমা

                                    বাল্মীকি স্তবে আসীন
 

বাল্মীকি।              রাঙাপদপদ্মযুগে প্রণমি গো ভবদারা!

                        আজি এ ঘোর  নিশীথে পূজিব তোমারে তারা।

                        সুরনর থরহর— ব্রহ্মাণ্ডবিপ্লব করো,

                        রণরঙ্গে মাতো, মা গো, ঘোরা উন্মাদিনী-পারা।

                        ঝলসিয়ে দিশি দিশি ঘুরাও তড়িত-অসি,

                        ছুটাও শোণিতস্রোত, ভাসাও বিপুল ধরা।

                        উরো কালী কপালিনী, মহাকালসীমন্তিনী,

                        লহো জবাপুষ্পাঞ্জলি মহাদেবী পরাৎপরা

                                    বালিকাকে লইয়া দস্যুগণের প্রবেশ

 

দস্যুগণ।              দেখো হো ঠাকুর, বলি এনেছি মোরা।

                        বড়ো সরেস পেয়েছি বলি সরেস—

                        এমন সরেস মছলি, রাজা, জালে না পড়ে ধরা।

                        দেরি কেন ঠাকুর, সেরে ফেলো ত্বরা

বাল্মীকি।              নিয়ে আয় কৃপাণ। রয়েছে তৃষিতা শ্যামা মা,

                                    শোণিত পিয়াও— যা ত্বরায়।

                        লোল জিহ্বা লকলকে, তড়িত খেলে চোখে,

                        করিয়ে খণ্ড দিক দিগন্ত ঘোর দন্ত ভায়

বালিকা।              কী দোষে বাঁধিলে আমায়, আনিলে কোথায়।

                        পথহারা একাকিনী বনে অসহায়—

                        রাখো রাখো রাখো, বাঁচাও আমায়।

                        দয়া করো অনাথারে— কে আমার আছে—

                        বন্ধনে কাতরতনু মরি যে ব্যথায়।

নেপথ্যে বনদেবী।   দয়া করো অনাথারে দয়া করো গো—

                        বন্ধনে কাতর তনু জর্জর ব্যথায়

বাল্মীকি।              এ কেমন হল মন আমার!

                        কী ভাব এ যে কিছুই বুঝিতে যে পারি নে।

                        পাষাণহৃদয় গলিল কেন রে!

                        কেন আজি আঁখিজল দেখা দিল নয়নে!

                        কী মায়া এ জানে গো,

                        পাষাণের বাঁধ এ যে টুটিল,

                        সব ভেসে গেল গো, সব ভেসে গেল গো—

                        মরুভূমি ডুবে গেল করুণার প্লাবনে

 

প্রথম দস্যু।           আরে, কী এত ভাবনা কিছু তো বুঝি না।

দ্বিতীয় দস্যু।          সময় বহে যায় যে।

তৃতীয় দস্যু।          কখন্ এনেছি মোরা, এখনো তো হল না।

চতুর্থ দস্যু।           এ কেমন রীতি তব, বাহ্ রে।

বাল্মীকি।              না না হবে না, এ বলি হবে না—

                        অন্য বলির তরে যা রে যা।

প্রথম দস্যু।           অন্য বলি এ রাতে কোথা মোরা পাব!

দ্বিতীয় দস্যু।          এ কেমন কথা কও, বাহ্ রে

বাল্মীকি।              শোন্ তোরা শোন্ এ আদেশ,

                        কৃপাণ খর্পর ফেলে দে দে।

                        বাঁধন কর ছিন্ন,

                        মুক্ত কর এখনি রে

 

                        যথাদিষ্ট কৃত