ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি
কালমৃগয়া
বন |
|
গৌড় মল্লার —কাওয়ালি |
|
সকলে। ঝম্ ঝম ঘন ঘন রে বরষে। দ্বিতীয়। গগনে ঘনঘটা, শিহরে তরুলতা— তৃতীয়। ময়ূর ময়ূরী নাচিছে হরষে। সকলে। দিশি দিশি সচকিত, দামিনী চমকিত— প্রথম। চমকি উঠিছে হরিণী তরাসে॥ মল্লারে—কাওয়ালি |
|
সকলে। | আয় লো সজনী, সবে মিলে! |
ঝর ঝর বারিধারা, মৃদু মৃদু গুরু গুরু গর্জন, এ বরষা-দিনে হাতে হাতে ধরি ধরি গাব মোরা লতিকা-দোলায় দুলে! |
|
প্রথম। ফুটাব যতনে কেতকী কদম্ব অগণন। দ্বিতীয়। মাখাব বরন ফুলে ফুলে। তৃতীয়। পিয়াব নবীন সলিল, পিয়াসিত তরুলতা— চতুর্থ। লতিকা বাঁধিব গাছে তুলে। প্রথম। বনেরে সাজায়ে দিব, গাঁথিব মুকুতাকণা, |
|
পল্লবশ্যামদুকূলে। | |
দ্বিতীয়। | নাচিব, সখী, সবে নবঘন-উৎসবে |
বিকচ বকুলতরু-মূলে॥ [ঋষিকুমারের প্রবেশ] গারা —কাওয়ালি |
|
ঋষিকুমার। | কী ঘোর নিশীথ, নীরব ধরা! |
পথ যে কোথায় দেখা নাহি যায়, জড়ায়ে যায় চরণে লতাপাতা। যাই, ত্বরা ক’রে যেতে হবে সরযূতটিনী-তীরে— কোথায় সে পথ! ওই কল কল রব! আহা, তৃষিত জনক মম, যাই তবে যাই ত্বরা। |
|
বনদেবীগণ। | এই ঘোর আঁধার, কোথা রে যাস্! |
ফিরিয়ে যা, তরাসে প্রাণ কাঁপে! স্নেহের পুতুলি তুই, কোথা যাবি একা এ নিশীথে! কী জানি কী হবে, বনে হবি পথহারা! |
|
ঋষিকুমার। | না, কোরো না মানা, যাব ত্বরা। |
পিতা আমার কাতর তৃষায়, যেতেছি তাই সরযূনদীতীরে। |
|
মিশ্র বেলাওল —একতালা | |
বনদেবীগণ। | মানা না মানিলি, তবুও চলিলি, |
কী জানি কী ঘটে। অমঙ্গল হেন প্রাণে জাগে কেন, থেকে থেকে যেন প্রাণ কেঁদে ওঠে। রাখ্ রে কথা রাখ্ বারি আনা থাক্, যা, ঘরে যা ছুটে। অয়ি দিগঙ্গনে, রেখো গো যতনে অভয় স্নেহছায়ায়। অয়ি বিভাবরী, রাখো বুকে ধরি ভয় অপহরি রাখো এ জনায়! এ যে শিশুমতি, বন ঘোর অতি— এ যে একেলা অসহায়! |