ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর রচনাবলী
রচনাবলী সূচি
 

কথা ও কাহিনী
             


       মানী
আরঙজেব ভারত যবে
    করিতেছিল খান-খান
মারবপতি কহিলা আসি,
   ‘ করহ প্রভু অবধান,
গোপন রাতে অচলগড়ে
নহর যাঁরে এনেছ ধরে
ন্দী তিনি আমার ঘরে
   সিরোহিপতি সুরতান ।
কী অভিলাষ তাঁহার'পরে
   আদেশ মোরে করো দান ।'

শুনিয়া কহে আরঙজব,
    ‘ কি কথা শুনি অদ্ভুত !
এতদিনে কি পড়িল ধরা
    অশনিভরা বিদ্যুৎ ?
পাহাড়ি লয়ে কয়েক শত
পাহাড়ে বনে ফিরিতে রত
মরুভূমির মরীচি - মতো
    স্বাধীন ছিল রাজপুত !
দেখিতে চাহি, আনিতে তারে
    পাঠাও কোনো রাজদূত ।'

মাড়োয়ারাজ যশোবন্ত
      কহিলা তবে জোড়কর,
‘ ক্ষত্রকুলসিংহশিশু
       লয়েছে আজি মোর ঘর —
বাদশা তাঁরে দেখিতে চান,
বচন আগে করুন দান
কিছুতে কোনো অসম্মান
      হবে না কভু তাঁর'পর
সভায় তবে আপনি তাঁরে
       আনিব করি সমাদর ।'

আরঙজেব কহিলা হাসি,
      ‘ কেমন কথা কহ আজ !
প্রবীণ তুমি প্রবল বীর
      মাড়োয়াপতি মহারাজ ।
তোমার মুখে এমন বাণী
      শুনিয়া মনে শরম মানি,
মানীর মান করিব হানি
মানীরে শোভে হেন কাজ ?
কহিনু আমি, চিন্তা নাহি,
      আনহ তাঁরে সভামাঝ ।'

সিরোহিপতি সভায় আসে
      মাড়োয়ারাজে লয়ে সাথ,
উচ্চশির উচ্চ রাখি
     সমুখে কর আঁখিপাত
কহিল সবে বজ্রনাদে
     ‘ সেলাম করো বাদশাজাদে ' —
হেলিয়া যশোবন্ত - কাঁধে
     কহিলা ধীরে নরনাথ,
‘ গুরুজনের চরণ ছাড়া
     করি নে কারে প্রণিপাত ।'

কহিলা রোষে রক্ত-আঁখি
        বাদশাহের অনুচর,
‘ শিখাতে পারি কেমনে মাথা
        লুটিয়া পড়ে ভূমি- ' পর ।'
হাসিয়া কহে সিরহিপতি,
‘ এমন যেন না হয় মতি
ভয়েতে কারে করিব নতি,
      জানি নে কভু ভয় - ডর ।'
এতেক বলি দাঁড়ালো রাজা
     কৃপাণ - ' পরে করি ভর ।

বাদশা ধরি সুরতানেরে
     বসায়ে নিল নিজপাশ —
কহিলা, ‘ বীর, ভারত - মাঝে
     কী দেশ- ' পরে তব আশ ? '
কহিলা রাজা, ‘ অচলগড়
দেশের সেরা জগৎ - ' পর ।'
সভার মাঝে পরস্পর
      নীরবে উঠে পরিহাস ।
বাদশা কহে, ‘ অচল হয়ে
      অচলগড়ে করো বাস ।'

 

১ কার্তিক ১৩০