ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-এর
রচনাবলী
রচনাবলী সূচি
নকল গড়
রাজস্থান
‘ জলস্পর্শ করব না আর '
চিতোর-রানার পণ,
‘ বুঁদির কেল্লা মাটির'পরে
থাকবে যতক্ষণ ।'
‘ কী প্রতিজ্ঞা ! হায় মহারাজ,
মানুষের যা অসাধ্য কাজ
কেমন ক'রে সাধবে তা আজ '
কহেন মন্ত্রিগণ ।
কহেন রাজা, ‘ সাধ্য না হয়
সাধব আমার পণ ।'
বুঁদির কেল্লা চিতোর হতে
যোজন-তিনেক দূর ।
সেথায় হারাবংশী সবাই
মহা মহা শূর ।
হামু রাজা দিচ্ছে থানা,
ভয় কারে কয় নাইকো জানা —
তাহার সদ্য প্রমাণ রানা
পেয়েছেন প্রচুর ।
হারাবংশীর কেলা বুঁদি
যোজন-তিনেক দূর ।
মন্ত্রী কহে যুক্তি করি,
‘ আজকে সারারাতি
মাটি দিয়ে বুঁদির মতো
নকল কেল্লা পাতি ।
রাজা এসে আপন করে
দিবেন ভেঙে ধূলির'পরে,
নইলে শুধু কথার তরে
হবেন আত্মঘাতী ! '
মন্ত্রী দিল চিতোর-মাঝে
নকল কেল্লা পাতি ।
কুম্ভ ছিল রানার ভৃত্য
হারাবংশী বীর,
হরিণ মেরে আসছে ফিরে
স্কন্ধে ধনু তীর ।
খবর পেয়ে কহে, ‘ কে রে
নকল বুঁদি কেল্লা মেরে
হারাবংশী রাজপুতেরে
করবে নতশির !
নকল বুঁদি রাখব আমি
হারাবংশী বীর ।'
মাটির কেল্লা ভাঙতে আসেন
রানা মহারাজ ।
‘ দূরে রহো' কহে কুম্ভ,
গর্জে যেন বাজ —
‘ বুঁদির নামে করবে খেলা
সইবে না সে অবহেলা,
নকল গড়ের মাটির ঢেলা
রাখব আমি আজ ।'
কহে কুম্ভ, ‘ দূরে রহো
রানা মহারাজ ।'
ভূমির'পরে জানু পাতি
তুলি ধনুঃশর
একা কুম্ভ রক্ষা করে
নকল বুঁদিগড় ।
রানার সেনা ঘিরি তারে
মুণ্ড কাটে তরবারে,
খেলাঘরের সিংহদ্বারে
পড়ল ভূমি- ' পর ।
রক্তে তাহার ধন্য হল
নকল বুঁদিগড় ।
৭ কার্তিক ১৩০৬