মায়ার খেলা (গীতিনাট্য)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
দ্বিতীয় দৃশ্য
গৃহ
গমনোন্মুখ অমর। শান্তার প্রবেশ
শান্তা। পথহারা তুমি পথিক যেন গো সুখের কাননে,
ওগো, যাও কোথা যাও।
সুখে ঢলঢল বিবশ বিভল পাগল নয়নে
তুমি চাও কারে চাও।
কোথা গেছে তব উদাস হৃদয়, কোথা পড়ে আছে ধরণী।
মায়ার তরণী বাহিয়া যেন গো মায়াপুরী-পানে ধাও।
কোন্ মায়াপুরী-পানে ধাও।
অমর। জীবনে আজ কি প্রথম এল বসন্ত!
নবীনবাসনাভরে হৃদয় কেমন করে,
নবীন জীবনে হল জীবন্ত।
সুখভরা এ ধরায় মন বাহিরিতে চায়,
কাহারে বসাতে চায় হৃদয়ে।
তাহারে খুঁজিব দিক-দিগন্ত।
মায়াকুমারীগণের প্রবেশ
সকলে। কাছে আছে দেখিতে না পাও,
তুমি কাহার সন্ধানে দূরে যাও।
শান্তার প্রতি
অমর। যেমন দখিনে বায়ু ছুটেছে,
কে জানে কোথায় ফুল ফুটেছে,
তেমনি আমিও, সখী, যাব—
না জানি কোথায় দেখা পাব।
কার সুধাস্বরমাঝে জগতের গীত বাজে,
প্রভাত জাগিছে কার নয়নে।
কাহার প্রাণের প্রেম অনন্ত।
তাহারে খুঁজিব দিক-দিগন্ত।
প্রস্থান
মায়াকুমারীগণ। মনের মতো কারে খুঁজে মর—
সে কি আছে ভুবনে,
সে তো রয়েছে মনে।
ওগো, মনের মতো সেই তো হবে
তুমি শুভক্ষণে যাহার পানে চাও।
নেপথ্যে চাহিয়া
শান্তা। আমার পরান যাহা চায়,
তুমি তাই তুমি তাই গো।
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো।
তুমি সুখ যদি নাহি পাও,
যাও, সুখের সন্ধানে যাও,
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে—
আর কিছু নাহি চাই গো।
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন,
তোমাতে করিব বাস—
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ মাস।
যদি আর-কারে ভালোবাস,
যদি আর ফিরে নাহি আস,
তবে তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও—
আমি যত দুখ পাই গো॥
নেপথ্যে চাহিয়া
মায়াকুমারীগণ। কাছে আছে দেখিতে না পাও,
তুমি কাহার সন্ধানে দূরে যাও।
প্রথমা। মনের মতো কারে খুঁজে মর—
দ্বিতীয়া সে কি আছে ভুবনে,
সে যে রয়েছে মনে।
তৃতীয়া ওগো, মনের মতো সেই তো হবে
তুমি শুভক্ষণে যাহার পানে চাও।
প্রথমা। তোমার আপনার যে জন দেখিলে না তারে।
দ্বিতীয়া। তুমি যাবে কার দ্বারে।
তৃতীয়া। যারে চাবে তারে পাবে না,
যে মন তোমার আছে যাবে তাও॥