ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি
রুদ্রচণ্ড
চতুর্থ দৃশ্য
রুদ্রচণ্ড | ||
রুদ্রচণ্ড । | অনুগ্রহ ক'রে মোরে চ'লে গেল চাঁদ! | |
গৃহে ব'সে ভাবিতেছে প্রসন্নবদনে রুদ্রচণ্ডে বাঁচালেম অনুগ্রহ ক'রে? অনুগ্রহ! রুদ্রচণ্ডে অনুগ্রহ করা! এ অনুগ্রহের ছুরি মর্ম্মের মাঝারে –যত দিন বেঁচে রব– রহিবে নিহিত! দিনরাত্রি রক্ত মোর করিবে শোষণ। দুগ্ধপোষ্য শিশু চাঁদ– তার অনুগ্রহ! ভিক্ষা-পাওয়া এ জীবন না রাখিলে নয়! এ হীন প্রাণের কাজ যখনি ফুরাবে তখনি ধূলায় এরে করিব নিক্ষেপ, চরণে দলিয়া এরে চূর্ণ ক'রে দেব'। [অমিয়ার প্রবেশ] আবার রাক্ষসি, তুই আবার আইলি! এ সংসারে আছে যত আপনার ভাই– সকলেরে ডেকে আন্, পিতার জীবন সে কুক্কুরদের মুখে করিস নিক্ষেপ। পিতার শোণিত দিয়ে পুষিস তাদের। দূর হ রাক্ষসি, তুই এখনি দূর হ। |
||
অমিয়া । | পিতা, পিতা, পায়ে পড়ি, শতবার আমি | |
দূর হয়ে যাইতেছি এ কুটীর হ'তে– বোলো না, অমন ক'রে বোলো না আমারে। বুঝিতে পারি নে যে গো কি আমি করেছি। চাঁদের সহিত দুটি কথা কয়েছিনু– কেন পিতা, তার তরে এত শান্তি কেন? |
||
রুদ্রচণ্ড । | চুপ কর্, ;কেন' 'কেন' শুধাস নে আর। | |
"দুর হ রাক্ষসি' এই আদেশ আমার! দিনরাত্রি, পাপিয়সি, 'কেন কেন' করি করিস নে মোর আদেশের অপমান। |
||
অমিয়া । | কোথা যাব পিতা, আমি পথ যে জানি নে। | |
কারেও চিনি নে আমি–
কি হবে আমার! পিতা গো, জান ত তুমি, অমিয়া তোমার নিতান্ত নির্ব্বোধ মেয়ে কিছু সে বুঝে না– না বুঝে করেছে দোষ ক্ষমা কর তারে। |
||
রুদ্রচণ্ড । | হতভাগী! | |
অমিয়া । | ক্ষমা কর, ক্ষমা কর পিতা! | |
আজ রাত্রে দূর ক'রে দিও না আমারে, এক রাত্রি তরে দাও কুটীরে থাকিতে। |
||
রুদ্রচণ্ড । | শিশুর হৃদয় এ কি পেয়েছিস তুই! | |
দুই ফোঁটা অশ্রু দিয়ে গলাতে চাহিস! এখনি ও অশ্রুজল মুছে ফেল্ তুই। অশ্রুজলধারা মোর দু-চক্ষের বিষ। আর নয়, শোন্ শেষ আদেশ আমার– দূর হ রে– |
||
অমিয়া । রুদ্রচণ্ড । |
ধর পিতা, ধর গো আমায়– ছুঁস্ নে, ছুঁস্ নে মোরে, রাক্ষসি, ছুস্ নে। |
|
[অমিয়ার মূর্চ্ছিত হইয়া পতন ও তাহাকে তুলিয়া লইয়া বনান্ত-উদ্দেশে রুদ্রচণ্ডের প্রস্থান] |