ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি
রুদ্রচণ্ড
পঞ্চম দৃশ্য
অমিয়া। রাজপথে প্রাসাদসম্মুখে | ||
অমিয়া । | আর ত পারি না, শ্রান্ত ক্লান্ত কলেবর। | |
সঘনে ঘুরিছে মাথা, টলিছে চরণ। বহিছে বহুক ঝড়, পড়ুক অশনি, ঘোর অন্ধকার মোরে ফেলুক গ্রাসিয়া। এ কি এ বিদ্যুৎ মাগো! অন্ধ হ'ল আঁখি। চাঁদ, চাঁদ, কোথা গেলে ভাইটি আমার! সারাদিন উপবাসে পথে পথে ভ্রমি 'চাঁদ চাঁদ' ব'লে আমি খুঁজেছি তোমায়। কোথাও পেনু না কেন ভাই গো আমার? অতি ভয়ে ভয়ে গেছি পান্থদের কাছে– শুধায়েছি, কেহ কেন বলে নি আমারে? এ প্রাসাদ যদি হয় তাঁহারি আলয়! যদি গো এখনি চাঁদ বাহিরিয়া আসে, হেথা মোরে দেখিয়া কি করেন তা হ'লে? হয়ত আছেন তিনি, যাই একবার। উহু কি বাতাস! শীতে কাঁপি থর থর! যদি না থাকেন তিনি, আর কেহ এসে যদি কিছু বলে মোরে, কি করিব তবে? কে আছ গো, দ্বার খোল– আমি নিরাশ্রয়, অমিয়া আমার নাম, এসেছি দুয়ারে। |
||
দ্বার খুলিয়া একজন।
কে তুই? অমিয়া । (সভয়ে) অমিয়া আমি। দ্বাররক্ষক । হেথা কেন এলি? অমিয়া । চাঁদ কবি ভাই মোর আছেন কি হেথা? |
||
বড় শ্রান্ত ক্লান্ত আমি চাহি গো আশ্রয়। | ||
দ্বাররক্ষক । | এ রাত্রে দুয়ারে মিছা করিস নে গোল। | |
হেথা ঠাঁই মিলিবে না, দূর হ ভিখারী। [দ্বাররোধন। একটি পান্থের প্রবেশ] |
||
পান্থ । | উঃ! একি মুহুর্মুহু হানিছে বিদ্যুৎ! | |
এ দুর্য্যোগে পথপার্শ্বে কে বসিয়া হোথা? এমন বহিছে ঝড়, গর্জ্জিছে অশনি, আর রাত্রে গৃহ ছেড়ে পথে কে রে তুই! [কাছে আসিয়া] একি বাছা, হেথা কেন একেলা বসিয়া? পিতা মাতা কেহ তোর নাই কি সংসারে? |
||
অমিয়া । | [কাঁদিয়া উঠিয়া ] | |
ওগো পান্থ, কেহ নাই, কেহ নাই মোর। অমিয়া আমার নাম, বড় শ্রান্ত আমি, সারাদিন পথে পথে করেছি ভ্রমণ। |
||
পান্থ । | আয় মা, আমার সাথে আয় মোর ঘরে। | |
অরণ্যে আমার কুঁড়ে, বেশি দূর নয়। আহা দাঁড়াবার বল নাই যে চরণে। আয়, তোরে কোলে ক'রে তুলে নিয়ে যাই। |
||
অমিয়া । | চাঁদ কবি, ভাই মোর, তারে জান তুমি? | |
কোথায় থাকেন তিনি পার কি বলিতে? | ||
পান্থ । | জানি নে মা, কোথাকার কে সে চাঁদ কবি। | |
আমরা বনের লোক, কাঠ কেটে খাই, নগরে কে কোথা থাকে জানিব কি ক'রে? চল্ মা, আজি এ রাত্রে মোর ঘরে চল্। |