ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি
রুদ্রচণ্ড
নবম দৃশ্য
নগর। রুদ্রচণ্ড | ||
রুদ্র । | বেধেছে তুমুল রণ; কোথা পৃথ্বীরাজ! | |
ওরে রে সংগ্রামদৈত্য শোণিতপিপাসী, সমস্ত হস্তিনা তুই করিস রে গ্রাস, পৃথ্বীরাজে রেখে দিস এ ছুরিকা-তরে। পৃথ্বীরাজ আছে কোন্ শিবিরে না জানি! ভ্রমিতেছি তার তরে প্রভাত হইতে। আজ তার দেখা পেলে পুরাইব সাধ। একি ঘোর কোলাহল নগরের পথে, সম্মুখে, দক্ষিণে বামে সহস্র বর্ব্বর গায়ের উপর দিয়া যেতেছে চলিয়া! চারি দিকে রহিয়াছে প্রাসাদের বন, বাতায়ন হতে চেয়ে শত শত আঁখি! এত লোক, এত গোল সহ্য নাহি হয়! [একজন পান্থের প্রতি] কে গো তুমি মহাশয়, মুখপানে মোর একেবারে চেয়ে আছ অবাক্ হইয়া? কখন কি দেখ নাই মানুষের মুখ? যেথা যাই শত আঁখি মোর মুখ চেয়ে, আঁখিগুলা বুঝি মোরে পাগল করিবে! যেথা হেরি চারি দিকে সূর্য্যের আলোক, নয়ন বিঁধিছে মোর বাণের মতন! একটু আড়াল পাই, একটু আঁধার, বাঁচি তবে দুই দণ্ড নিশ্বাস ফেলিয়া! একি হেরি? ঊর্দ্ধশ্বাসে নাগরিকগণ কোথায় ছুটেছে সব অস্ত্র শস্ত্র লয়ে? ওগো পান্থ, বল মোরে ত্বরা ক'রে বল! মরেছে কি পৃথ্বীরাজ? ত্বরা ক'রে বল! |
||
পান্থ । | কে তুমি অসভ্য বন্য, কোথা হতে এলি? | |
অকল্যাণ বাণী যদি উচ্চারিস মুখে রসনা পুড়াব তোর জ্বলন্ত অঙ্গারে! [প্রস্থান |
||
রুদ্র । | [আর একজনের প্রতি] | |
শোন পান্থ, বল মোরে কোথা যাও সবে, রণক্ষেত্রে অমঙ্গল ঘটে নি ত কিছু! [উত্তর না দিয়া পান্থের প্রস্থান |
||
রুদ্র । | [একজন পান্থকে ধরিয়া] | |
অসভ্য বর্ব্বর যত, বল্ মোরে বল্! ছাড়িব না, যতক্ষণ না দিবি উত্তর! বল্ শুধু পৃথ্বীরাজ রয়েছে বাঁচিয়া! [বলপূর্ব্বক ছাড়াইয়া লইয়া পান্থের প্রস্থান |
||
রুদ্র । | নগরকুক্কুর যত মরুক-- মরুক! | |
হীন অপদার্থ যত বিলাসীর পাল, যুদ্ধের হুঙ্কার শুনে ডরিয়া মরুক! নবনীগঠিত যত সুখের শরীর– নিজের অস্ত্রের ভারে পিষিয়া মরুক! ঐশ্বর্য্যধূলায় অন্ধ নগরের কীট নিজের গরবে ফেটে মরুক– মরুক! |