ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি


সন্ধ্যসংগীত

 


 

        আবার

      তুমি কেন আসিলে হেথায়
      এ আমার সাধের আবাসে ?
      এ আলয়ে যে নিবাসী থাকে,
      এ আলয়ে যে অতিথি আসে,
সবাই আমার সখা,     সবাই আমার বঁধু,
            সবারেই আমি ভালোবাসি,
            তারাও আমারে ভালোবাসে

            তুমি তবে কেন এলে হেথা
            এ আমার সাধের আবাসে ?

            এ আমার প্রেমের আলয়,
            এ মোর স্নেহের নিকেতন;
            বেছে বেছে কুসুম তুলিয়া
            রচিয়াছি কোমল আসন।
            কেহ হেথা নাইকো নিষ্ঠুর,
            কিছু হেথা নাইকো কঠিন,
            কবিতা আমার প্রণয়িনী
           এইখানে আসে প্রতিদিন।
সমীর কোমলমন     আসে হেথা অনুক্ষণ,
            যখনি সে পায় অবকাশ
যখনি প্রভাত ফুটে,    যখনি সে জেগে উঠে,
           ছুটিয়া সে আসে মোর পাশে;
দুই বাহু প্রসারিয়া       আমারে বুকেতে নিয়া
           কত শত বারতা শুধায়,
           সখা মোর প্রভাতের বায়।
আকাশেতে তুলে আঁখি     বাতায়নে বসে থাকি
          নিশি যবে পোহায়-পোহায়,
উষার আলোকে হারা      সখী মোর শুকতারা
          আমার এ মুখপানে চায়।
নীরবে চাহিয়া রহে,      নীরব নয়নে কহে,
          "সখা, আজ বিদায়, বিদায়। "
 

           ধীরে ধীরে সন্ধ্যার বাতাস
           প্রতিদিন আসে মোর পাশ।
দেখে, আমি বাতায়নে,     অশ্রু ঝরে দু নয়নে,
         ফেলিতেছি দুখের নিশ্বাস।
         অতি ধীরে আলিঙ্গন করে,
         কথা কহে সকরুণ স্বরে,
         কানে কানে বলে, "হায় হায়"!
কোমল কপোল দিয়া        কপোল চুম্বন করি
         অশ্রু বিন্দু সুধীরে শুকায়।
         সবাই আমার মন বুঝে,
         সবাই আমার দুখ জানে,
         সবাই করুণ আঁখি মেলি
         চেয়ে থাকে এই মুখপানে।
         যে কেহ আমার ঘরে আসে
         সবাই আমারে ভালোবাসে
 
         তবে কেন তুমি এলে হেথা
         এ আমার সাধের আবাসে ?

ফেরো ফেরো, ও নয়ন          রসহীন ও বয়ন
         আনিয়ো না এ মোর আলয়ে

আমরা সখারা মিলি    আছি হেথা নিরিবিলি
         আপনার মনোদুঃখ লয়ে।
        এমনি হয়েছে শান্ত মন,
        ঘুচেছে দুঃখের কঠোরতা;
        ভালো লাগে বিহঙ্গের গান,
        ভালো লাগে তটিনীর কথা।
        ভালো লাগে কাননে দেখিতে
        বসন্তের কুসুমের মেলা,
        ভালো লাগে সারাদিন বসে
       দেখিতে মেঘের ছেলেখেলা।
       এইরূপে সায়াহ্নের কোলে
       রচেছি গোধূলি-নিকেতন,
       দিবসের অবসান-কালে
       পশে হেথা রবির কিরণ ।
       আসে হেথা অতি দূর হতে
       পাখিদের বিরামের তান,
       ম্রিয়মাণ সন্ধ্যা-বাতাসের
       থেকে থেকে মরণের গান।
       পরিশ্রান্ত অবশ পরানে
       বসিয়া রয়েছি এইখানে।

যাও মোরে যাও ছেড়ে   নিয়ো না নিয়ো না কেড়ে,
       নিয়ো না নিয়ো না মন মোর।
সখাদের কাছ হতে      ছিনিয়া নিয়ো না মোরে,
      ছিঁড়ো না এ প্রণয়ের ডোর।
আবার হারাই যদি      এই গিরি, এই নদী,
      মেঘ বায়ু কানন নির্ঝর,
আবার স্বপন ছুটে      একেবারে যায় টুটে
      এ আমার গোধূলির ঘর।
আবার আশ্রয়হারা,     ঘুরে ঘুরে হই সারা
      ঝটিকার মেঘখণ্ড-সম,
দুঃখের বিদ্যুৎ-ফণা   ভীষণ ভুজঙ্গ এক
      পোষণ করিয়া বক্ষে মম

তাহা হলে এ জনমে,    নিরাশ্রয় এ জীবনে
      ভাঙা ঘর আর গড়িবে না,
      ভাঙা হৃদি আর জুড়িবে না।
      কাল সবে গড়েছি আলয়,
      কাল সবে জুড়েছি হৃদয়
 
      আজি তা দিয়ো না যেন ভেঙে,
      রাখো তুমি রাখো এ বিনয়।


          পাষাণী

    জগতের বাতাস করুণা,
    করুণা সে রবিশশীতারা,
    জগতের শিশির করুণা
 
    জগতের বৃষ্টিবারিধারা।
    জননীর স্নেহধারা-সম
    এই-যে জাহ্নবী বহিতেছে,
    মধুরে তটের কানে কানে
    আশ্বাস-বচন কহিতেছে

    এও সেই বিমল করুণা
    হৃদয় ঢালিয়া বহে যায়,
    জগতের তৃষা নিবারিয়া
    গান গাহে করুণ ভাষায়।
    কাননের ছায়া সে করুণা,
    করুণা সে উষার কিরণ,
    করুণা সে জননীর আঁখি,
    করুণা সে প্রেমিকের মন।
    এমন যে মধুর করুণা,
    এমন যে কোমল করুণা,
    জগতের হৃদয়-জড়ানো
    এমন যে বিমল করুণা

    দিন দিন বুক ফেটে যায়,
    দিন দিন দেখিবারে পাই,
    যারে ভালোবাসি প্রাণপণে
    সে করুণা তার মনে নাই।
 পরের নয়নজলে    তার না হৃদয় গলে,
    দুখেরে সে করে উপহাস,
    দুখেরে সে করে অবিশ্বাস।
দেখিয়া হৃদয় মোর তরাসে শিহরি উঠে,
প্রেমের কোমল প্রাণে শত শত শেল ফুটে,
হৃদয় কাতর হয়ে নয়ন মুদিতে চায়,
   কাঁদিয়া সে বলে,  "হায় হায়,
   এ তো নহে আমার দেবতা,
   তবে কেন রয়েছে হেথায় ?"
 

   তুমি নও. সে জন তো নও,
   তবে তুমি কোথা হতে এলে ?
   এলে যদি এসো তবে কাছে,
   এ হৃদয়ে যত অশ্রু আছে
   একবার সব দিই ঢেলে,
   তোমার সে কঠিন পরান
   যদি তাহে একতিল গলে,
   কোমল হইয়া আসে মন
   সিক্ত হয়ে অশ্রুজলে-জলে।
   কাঁদিবারে শিখাই তোমায়
 
   পরদুঃখে ফেলিতে নিশ্বাস,
   করুণার সৌন্দর্য অতুল
   ও নয়নে করে যেন বাস।
   প্রতিদিন দেখিয়াছি আমি
   করুণারে করেছ পীড়ন,
   প্রতিদিন ওই মুখ হতে
   ভেঙে গেছে রূপের মোহন।
   কুবলয়-আঁখির মাঝারে
   সৌন্দর্য পাই না দেখিবারে,
   হাসি তব আলোকের প্রায়
   কোমলতা নাহি যেন তায়,
   তাই মন প্রতিদিন কহে,
   "নহে নহে, এ জন সে নহে। "

শোনো বন্ধু, শোনো, আমি করুণারে ভালোবাসি।
সে যদি না থাকে তবে ধূলিময় রূপরাশি।
তোমারে যে পূজা করি, তোমারে যে দিই ফুল,
ভালোবাসি বলে যেন কখনো কোরো না ভুল।
যে জন দেবতা মোর কোথা সে আছে না জানি,
তুমি তো কেবল তার পাষাণপ্রতিমাখানি।
তোমার হৃদয় নাই, চোখে নাই অশ্রুধার,
কেবল রয়েছে তব পাষাণ - আকার তার।


             দুদিন
আরম্ভিছে শীতকাল,    পরিছে নীহারজাল,
      শীর্ণ বৃক্ষশাখা যত ফুলপত্রহীন;
      মৃতপ্রায় পৃথিবীর মুখের উপরে
বিষাদে প্রকৃতিমাতা      শুভ্র বাম্পজালে-গাঁথা
      কুজ্ঝটি-বসনখানি দেছেন টানিয়া।
      পশ্চিমে গিয়েছে রবি, স্তব্ধ সন্ধ্যাবেলা
      বিদেশে আসিনু শ্রান্ত পথিক একেলা।

              রহিনু দু'দিন।
এখনো রয়েছে শীত,    বিহগ গাহে না গীত,
     এখনো ঝরিছে পাতা, পড়িছে তুহিন।
     বসন্তের প্রাণভরা চুম্বন-পরশে
সর্ব অঙ্গ শিহরিয়া        পুলকে-আকুল-হিয়া
     মৃতশয্যা হতে ধরা জাগে নি হরষে।
     এক দিন দুই দিন ফুরাইল শেষে,
     আবার উঠিতে হল,  চলিনু বিদেশে।

     এই-যে ফিরানু মুখ,  চলিনু পুরবে,
     আর কি রে এ জীবনে ফিরে আসা হবে!
     কত মুখ দেখিয়াছি দেখিব না আর।
ঘটনা ঘটিবে কত,     বরষ বরষ শত
    জীবনের 'পর দিয়া হয়ে যাবে পার
 
    হয়তো-বা একদিন অতি দূর দেশে,
আসিয়াছে সন্ধ্যা হয়ে,    বাতাস যেতেছে বয়ে,
    একেলা নদীর ধারে রহিয়াছি বসে

    হু হু করে উঠিবেক সহসা এ হিয়া,
    সহসা এ মেঘাচ্ছন্ন স্মৃতি উজলিয়া
    একটি অস্ফুট রেখা সহসা দিবে যে দেখা,
    একটি মুখের ছবি উঠিবে জাগিয়া,
    একটি গানের ছত্র পড়িবেক মনে,
    দু-একটি সুর তার উদিবে স্মরণে,
    অবশেষে একেবারে সহসা সবলে
বিস্মৃতির বাঁধগুলি     ভাঙিয়া চুর্ণিয়া ফেলি
     সেদিনের কথাগুলি বন্যার মতন
     একেবারে বিপ্লাবিয়া ফেলিবে এ মন।

     শতফুলদলে গড়া সেই মুখ তার
স্বপনেতে প্রতিনিশি      হৃদয়ে উদিবে আসি
     এলানো আকুল কেশে, আকুল নয়নে।
     সেই মুখ সঙ্গী মোর হইবে বিজনে,
     নিশীথের অন্ধকার আকাশের পটে
     নক্ষত্র-গ্রহের মতো উঠিবেক ফুটে
     ধীরে ধীরে রেখা রেখা সেই মুখ তার
     নিঃশব্দে মুখের পানে চাহিয়া আমার।
     চমকি উঠিব জাগি শুনি ঘুমঘোরে
    "যাবে তবে ? যাবে ?" সেই ভাঙা-ভাঙা স্বরে।

               ফুরাল দু'দিন
 
     শরতে যে শাখা হয়েছিল পত্রহীন
        এ দু'দিনে সে শাখা উঠে নি মুকুলিয়া,
     অচল শিখর-'পরি      যে তুষার ছিল পড়ি
        এ দু'দিনে কণা তার যায় নি গলিয়া,
        কিন্তু এ দু'দিন তার শত বাহু দিয়া
       চিরটি জীবন মোর রহিবে বেষ্টিয়া।
       দু'দিনের পদচিহ্ন চিরদিন-তরে
       অঙ্কিত রহিবে শত বরষের শিরে।


      পরাজয়-সঙ্গীত

ভালো করে যুঝিলি নে, হল তোরি পরাজয় 
কী আর ভাবিতেছিস, ম্রিয়মাণ, হা হৃদয় !
        কাঁদ্‌ তুই, কাঁদ্‌, হেথা আয়,
       একা বসে বিজনে বিদেশে।
       জানিতাম জানিতাম হা রে
       এমনি ঘটিবে অবশেষে।

সংসারে যাহারা ছিল সকলেই জয়ী হল,
      তোরি শুধু হল পরাজয়
 
প্রতি রণে প্রতি পদে একে একে ছেড়ে দিলি
      জীবনের রাজ্য সমুদয়।
      যতবার প্রতিজ্ঞা করিলি
      ততবার পড়িল টুটিয়া,
      ছিন্ন আশা বাঁধিয়া তুলিলি
      বার বার পড়িল লুটিয়া।
      "সান্ত্বনা সান্ত্বনা" করি ফিরি
      সান্ত্বনা কি মিলিল রে মন ?
      জুড়াইতে ক্ষত বক্ষঃস্থল
      ইচ্ছা, সাধ, আশা যাহা ছিল
      অদৃষ্ট সকলি লুটে নিল।

মনে হইতেছে আজি     জীবন হারায়ে গেছে,
       মরণ হারায়ে গেছে হায় !
কে জানে এ কী এ ভাব ?   শূন্যপানে চেয়ে আছি
       মৃত্যুহীন মরণের প্রায়।
পরাজিত এ হৃদয়     জীবনের দুর্গ মম
       মরণে করিল সমর্পণ,
       তাই আজ জীবনে মরণ।

জাগ্‌ জাগ্‌ জাগ্‌ ওরে, গ্রাসিতে এসেছে তোরে
         নিদারুণ শূন্যতার ছায়া,
         আকাশ-গরাসী তার কায়া।
গেল তোর চন্দ্র সূর্য,  গেল তোর গ্রহ তারা,
         গেল, তোর আত্ম আর পর।
         এই বেলা প্রাণপণ কর্‌।
         এইবেলা ফিরে দাঁড়া তুই,
         স্রোতোমুখে ভাসিস নে আর।
         যাহা পাস আঁকড়িয়া ধর্‌
 
         সম্মুখে অসীম পারাবার,
         সম্মুখেতে চির অমানিশি,
         সম্মুখেতে মরণ বিনাশ !
        গেল, গেল, বুঝি নিয়ে গেল
        আবর্ত করিল বুঝি গ্রাস !


             শিশির

শিশির কাঁদিয়া শুধু বলে,
"কেন মোর হেন ক্ষুদ্র প্রাণ
 
শিশুটির কল্পনার মতো
জনমি অমনি অবসান ?
ঘুম - ভাঙা উষা-মেয়েটির
একটি সুখের অশ্রু হায়,
হাসি তার ফুরাতে ফুরাতে
এ অশ্রুটি শুকাইয়া যায়।
টুকটুকে মুখখানি নিয়ে
গোলাপ হাসিছে মুচকিয়ে,
বকুল প্রাণের সুধা দিয়ে,
বায়ুর মাতাল করি তুলে
   
প্রজাপতি ভাবিয়া না পায়
কাহারে তাহার প্রাণ চায়,
তুলিয়া অলস পাখা দুটি
ভ্রমিতেছে ফুল হতে ফুলে
   
সেই হাসি - রাশির মাঝারে
আমি কেন থাকিতে না পাই!
যেমনি নয়ন মেলি, হায়,
সুখের নিমেষটির প্রায়,
অতৃপ্ত হাসিটি মুখে লয়ে
অমনি কেন গো মরে যাই!"

শুয়ে শুয়ে অশোক-পাতায়
মুমূর্ষু শিশির বলে,"হায়,
কোনো সুখ ফুরায় নি যার
তার কেন জীবন ফুরায় ?"
 

"আমি কেন হই নি শিশির ?"
কহে কবি নিশ্বাস ফেলিয়া।
"প্রভাতেই যেতেম শুকায়ে
প্রভাতেই নয়ন মেলিয়া।
হে বিধাতা, শিশিরের মতো
গড়েছ আমার এই প্রাণ,
শিশিরের মরণটি কেন
আমারে কর নি তবে দান ?"


        সংগ্রাম-সংগীত
 

           হৃদয়ের সাথে আজি
           করিব রে করিব সংগ্রাম।
           এতদিন কিছু না করিনু
           এতদিন বসে রহিলাম,
           আজি এই হৃদয়ের সাথে
           একবার করিব সংগ্রাম।

           বিদ্রোহী এ হৃদয় আমার
           জগৎ করিছে ছারখার।
গ্রাসিছে চাঁদের কায়া    ফেলিয়া আঁধার ছায়া
           সুবিশাল রাহুর আকার।
মেলিয়া আঁধার গ্রাস     দিনেরে দিতেছে ত্রাস
           মলিন করিছে মুখ তার।
           উষার মুখের হাসি লয়েছে কাড়িয়া,
           গভীর বিরামময় সন্ধ্যার প্রাণের মাঝে
           দুরন্ত অশান্তি এক দিয়াছে ছাড়িয়া।
           প্রাণ হতে মুছিতেছে অরুণের রাগ,
           দিতেছে প্রাণের মাঝে কলঙ্কের দাগ,
           প্রাণের পাখির গান দিয়াছে থামায়ে,
    বেড়াত যে সাধগুলি      মেঘের দোলায় দুলি
           তাদের দিয়াছে হায় ভূতলে নামায়ে।
           ক্রমশই বিছাইছে অন্ধকার পাখা,
           আঁখি হতে সবকিছু পড়িতেছে ঢাকা।
           ফুল ফুটে, আমি আর দেখিতে না পাই;
           পাখী গাহে, মোর কাছে গাহে না সে আর ;
           দিন হল, আলো হল, তবু দিন নাই,
           আমি শুধু নেহারি পাখার অন্ধকার।
           মিছা বসে রহিব না আর
           চরাচর হারায় আমার।
           রাজ্যহারা ভিখারির সাজে
 দগ্ধ ধ্বংস - ভস্ম-' পরি ভ্রমিব কি হাহা করি
           জগতের মরুভূমি - মাঝে ?


           আজ তবে হৃদয়ের সাথে
           একবার করিব সংগ্রাম।
           ফিরে নেব, কেড়ে নেব আমি
           জগতের একেকটি গ্রাম।
           ফিরে নেব রবিশশীতারা,
           ফিরে নেব সন্ধ্যা আর উষা
           পৃথিবীর শ্যামল যৌবন,
           কাননের ফুলময় ভূষা।
           ফিরে নেব হারানো সংগীত,
           ফিরে নেব মৃতের জীবন,
           জগতের ললাট হইতে
           আঁধার করিব প্রক্ষালন।
           আমি হব সংগ্রামে বিজয়ী,
           হৃদয়ের হবে পরাজয়,
           জগতের দূর হবে ভয়।

           হৃদয়েরে রেখে দেব বেঁধে,
           বিরলে মরিবে কেঁদে কেঁদে।
      দুঃখে বিঁধি কষ্টে বিঁধি     জর্জর করিব হৃদি
 
           বন্দী হয়ে কাটাবে দিবস,
           অবশেষে হইবে সে বশ,
           জগতে রটিবে মোর যশ।
     বিশ্বচরাচরময়     উচ্ছ্বসিবে জয় জয়,
            উল্লাসে পুরিবে চারি ধার,
     গাবে রবি, গাবে শশী,      গাবে তারা শূন্যে বসি,
            গাবে বায়ু শত শত বার।
            চারি দিকে দিবে হুলুধ্বনি,
            বরষিবে কুসুম-আসার,
           বেঁধে দেব বিজয়ের মালা
           শান্তিময় ললাটে আমার।