আকাশ হতে আকাশ-পথে হাজার স্রোতে
ঝরছে জগৎ ঝরনাধারার মতো॥
আমার শরীর মনের অধীর ধারা সাথে সাথে বইছে অবিরত।
দুই প্রবাহের ঘাতে ঘাতে উঠতেছে গান দিনে রাতে,
সেই গানে গানে আমার প্রাণে ঢেউ লেগেছে কত।
আমার হৃদয়তটে চূর্ণ সে গান ছড়ায় শত শত।
ওই আকাশ-ডোবা ধারার দোলায় দুলি অবিরত॥
এই নৃত্য-পাগল ব্যাকুলতা বিশ্বপরানে
নিত্য আমায় জাগিয়ে রাখে, শান্তি না মানে।
চিরদিনের কান্নাহাসি উঠছে ভেসে রাশি রাশি—
এ-সব দেখতেছে কোন্ নিদ্রাহারা নয়ন অবনত।
ওগো, সেই নয়নে নয়ন আমার হোক-না নিমেষহত—
ওই আকাশ-ভরা দেখার সাথে দেখব অবিরত॥
উল্লেখ্য, এ গানটি সম্পর্কে সীতাদেবী তাঁর পূণ্যস্মৃতি' গ্রন্থে লিখেছেন,
-শ্রীপঞ্চমীর দিন ছেলেরা দল বাঁধিয়া
সুরুলে বনভোজন করিতে চলিল। ... সুরুলে তখন একখানি মাত্র বড় দোতলা
বাড়ি, ইহা লর্ড সিংহের নিকট হইতে বোধহয় রবীন্দ্রনাথ ক্রয়
করিয়াছিলেন। ইহারই দালানে বসিয়া খানিকক্ষণ বিশ্রাম করা গেল।....
কবি নিজের দুই-একটি কবিতা পড়িয়া শুনাইলেন, তাহার পর শুরু হইল গানের পালা। পণ্ডিত
ভীমরাও শাস্ত্রী কয়েকটি হিন্দী গান করিলেন, তাহার পর 'ফাল্গুনী'
উজাড় করিয়া বসন্তের গান চলিল। 'আজি বিজন ঘরে নিশীথ রাতে
আসবে যদি শূন্য হাতে' গানটি কবি সেই
দিনই রচনা করিয়াছিলেন বোধহয়, সর্বশেষে
সেই গানটি তিনি একলা গাহিয়া শুনাইলেন। [সূত্র : গীতবিতান কালানুক্রমিক সূচী/প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়।]