৫৬ বৎসর অতিক্রান্ত বয়স
২৫ বৈশাখ ১৩২৪ বঙ্গাব্দ থেকে ২৪ বৈশাখ ১৩২৫ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত (৭ মে ১৯১৭- ৬ মে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ)


গত বছরের শেষে অর্থাৎ ৩১শে চৈত্র দুপুরে রামানন্দ, তাঁর দুই কন্যা শান্তা ও সীতা, প্রশান্ত মহলানবীশ, তাঁর বোন নীলিমা, অজিতকুমার চক্রবর্তী, চারুচন্দ্র এবং অন্যান্য কয়েকজনকে নিয়ে, রবীন্দ্রনাথ কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতন আসেন। এঁরা সবাই এসেছিলেন শান্তিনিকেতনে বর্ষশেষ এবং নববর্ষের উৎসবে যোগদানের জন্য। শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতায় আসেন ৭ বৈশাখ [শুক্রবার, ২০ এপ্রিল]। এরপর আবার শান্তিনিকেতনে আসেন ১৭ই বৈশাখ [সোমবার ৩০ এপ্রিল]। ২০শে বৈশাখ [বৃহস্পতিবার, ৩ মে] শান্তিনিকেতনে ডাকঘর মঞ্চস্থ হয়। আর ২৫ শৈ বৈশাখ [মঙ্গলবার ৮ মে],  রবীন্দ্রনাথের ৫৭তম জন্মদিন পালিত হয়।

এই বৎসরের প্রথম ৩ মাস রবীন্দ্রনাথের কোনো গানের সন্ধান পাওয়া যায় নি। এই বছরে প্রথম গানটি রচিত হয় শ্রাবণ মাসের ৯-১০ তারিখে। গানটি হলো-
           
দেশ দেশ নন্দিত করি মন্দ্রিত তব ভেরী

উল্লেখ্য শ্রাবণ মাসের ৩ বা ৪ তারিখে রবীন্দ্রনাথ পূণ্যাহ উপলক্ষে শিলাইদহ যান। ৯ শ্রাবণ কলকাতা ফিরে আসেন। সেখানে ১০ শ্রাবণ কালিদাস নাগ লিখেছেন- '... কবির কাছে আসা গেল
—Home Rule ায় গাইবার এক অপূর্ব কোরাস শোনালেন।' গানটি  ছিল  'দেশ দেশ নন্দিত করি মন্দ্রিত তব ভেরী।  কিন্তু কালিদাস নাগের লেখা অনুসারে ধারণা করা যায়, গানটি রচিত হয়েছিল ৯-১০ শ্রাবণে। উল্লেখ্য পাণ্ডুলিপিতে গানটির রচনার তারিখ পাওয়া যায় নাই। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় তাঁর গীতবিতান কালানুক্রমিক সূচী গ্রন্থে গানটির রচনার তারিখ উল্লেখ করেছেন ১৯ শ্রাবণ। কিন্তু কালিদাস নাগের লেখা অনুসারে এই তারিখ গ্রহণ করা যায় না।

সবুজপত্র পত্রিকার ভাদ্র ১৩২৪ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়, রবীন্দ্রনাথের 'সঙ্গীতের মুক্তি' নামক প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধে তিনি উদাহরণ স্বরূপ বেশ কয়েকটি গান ব্যবহার করেছেন। এর ভিতরে চারটি গান ছিল নতুন। এই গানগুলো হলো

            কাঁপিছে দেহলতা থরথর [প্রকৃতি-৩৫] [তথ্য]
            ব্যাকুল বকুলের ফুলে
            যে কাঁদনে হিয়া কাঁদিছে
            দুয়ার মম পথপাশে

একই উদ্দেশে তিনি আরও একটি গান রচনা করেছিলেন। কিন্তু গানটি এই প্রবন্ধে যুক্ত করেন নি। এই গানটি হলো
            একদা তুমি প্রিয়ে আমারি তরুমূলে

১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ নভেম্বর, জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর আটান্নতম জন্মদিনে বিজ্ঞানমন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রস্তুতি সম্পূর্ণ না হওয়ার কারণে এই আয়োজন পিছিয়ে যায়। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হলে, জগদীশচন্দ্র বসু রবীন্দ্রনাথকে একটি গান রচনা করে দিতে বলেন। সেই সূত্রে তিনি এই গানটি রচনা করেন।
            মাতৃমন্দির-পূণ্য অঙ্গন কর

শান্তিনিকেতনের ডাকঘর নাটক মঞ্চস্থ হয় ২৪ আশ্বিন [বুধবার ১০ অক্টোবর]-এ।  এই নাটকের মঞ্চস্থ হওয়ার সময় রবীন্দ্রনাথ তাৎক্ষণিকভাবে একটি গান রচনা করেন। এ বিষয়ে আশামুকুলের বর্ণনা থেকে থেকে জানা যায়- "...দইওয়ালা আসার কথা- কিন্তু তার জন্য প্রতীক্ষার আগেই উইংসের পাশ থেকে গুরুদেব হাত তুলে জানালেন ড্রপ পড়বে। ড্রপ পড়ল। আমাকে ডাকলেন। বারান্দার দিকে গ্রীনরুমে গিয়ে একটা টেবিলের উপর বসলেন। আমি পাশে দাঁড়িয়ে। একটা কাগজে গান গেয়ে গেয়ে রচনা করে চললেন, "ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে"। সমস্ত গানটা একনাগাড়েই লেখা হয়ে গেল। আমাকে বললেন, "গাইতে পারবি?" সুরটা যদিও শুনলাম তবুও ভরসা পেলাম না। আবার স্টেজে গিয়ে বসলাম। গুরুদেব গানটা গাইলেন। ড্রপ উঠলো। দইওয়ালা হাঁক শোনা গেল।' [সূত্র : রবিজীবনী সপ্তমখণ্ড। প্রশান্তকুমার পাল। পৃষ্ঠা: ২৯১]

এই বিচারে এই নতুন গানটি রচিত হয়েছিল ২৪শে আশ্বিন। এই গানটি হলো–

ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমার। [পূজা-৫৮] [তথ্য]

Ms.111 পাণ্ডুলিপি অনুসারে দুটি গানের রচনা কাল পাওয়া যায়। গান দুটি হলো-
            [২২ ভাদ্র]
ও দেখা দিয়ে যে চলে গেল [প্রেম-২৯৫] [তথ্য]
            [১৭ পৌষ, জানুয়ারি ১৯১৮]। আমি যখন তাঁর দুয়ারে

এই পাণ্ডুলিপিতে তারিখ বিহীন আরও ২টি গান পাওয়া যায়। গানটি হলো
            বলো বলো, বন্ধু বলো তিনি তোমার কানে কানে

সীতাদেবী তাঁর পূণ্যস্মৃতি গ্রন্থে লিখেছেন
"শ্রীপঞ্চমীর দিন [৩ ফাল্গুন শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি] ছেলেরা দল বাঁধিয়া সুরুলে বনভোজন করিতে চলিল। রবীন্দ্রনাথও  বিকালে সেখানে যাইবেন শুনিয়া আমরা মেয়ের দলও উৎসাহ করিয়া চলিলাম।...নিজের দুই-একটি কবিতা পড়িয়া শুনাইলেন, তাহার পর শুরু হইল গানের পালা। পণ্ডিত ভীমরাও শাস্ত্রী কয়েকটি হিন্দী গান করিলেন, তাহার পর 'ফাল্গুনী' উজাড় করিয়া বসন্তের গান চলিল। 'আজি বিজন ঘরে নিশীথরাতে আসবে যদি শূন্যহাতে' গানটি কবি সেই দিনই রচনা করিয়াছিলেন বোধ হয়, সর্বশেষে সেই গানটি তিনি একলা গাহিয়া শুনাইলেন।"  এই বিচারে এই গানটির রচনাকাল ধরা যায়-
         [৩ ফাল্গুন শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি] 
আজি বিজন ঘরে নিশীথরাতে [পূজা-২০২] [তথ্য]

উল্লেখ্য,
প্রশান্তকুমার পাল তাঁর রবিজীবনী সপ্তম খণ্ডে  'আজি বিজন ঘরে নিশীথরাতে' গানটির বিষয়ে বলতে গিয়ে-পাণ্ডুলিপি Ms.111 -এর উল্লেখ করেছেন। এই পাণ্ডুলিপির ১২৮ পৃষ্ঠায় 'কান্নাহাসির দোল-দোলানো পৌষ ফাগুনের পালা' গানটি পাওয়া যায়। গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল '
মানসী ও মর্ম্মবাণী ' পত্রিকার- চৈত্র ১৩২৪ সংখ্যায়।


রবীন্দ্রনাথের পাণ্ডুলিপি
RBVBMS 111-র পাণ্ডুলিপির ১২৭ পৃষ্ঠায় 'The lamp is trimmed' কবিতাটির সাথে তারিখ উল্লেখ আছে ৩১ জানুয়ারি। বঙ্গাব্দের হিসেবে দাঁড়ায় ১৮ মাঘ। এই পাণ্ডুলিপির আগের পৃষ্ঠায় লিখিত হয়েছিল-

প্রশান্তকুমার পাল তাঁর রবিজীবনী সপ্তম খণ্ডে আজি বিজন ঘরে নিশীথরাতে গানটির বিষয়ে বলতে গিয়ে-পাণ্ডুলিপি Ms.111 এর উল্লেখ করেছেন। এই পাণ্ডুলিপিতে যে গানগুলো এই সময়ের রচিত বলে অনুমান করা হয়েছে, সেগুলোর তালিকা দেওয়া হলো।

আজি বিজন ঘরে নিশীথরাতে [তথ্য]
সবার সাথে চলতেছিল অজানা
জাগরণে যায় বিভাবরী

কোন সুদূর হতে আমার মনোমাঝে
আয় আয় রে, পাগল, ভুলবি রে চল্
অনেক পাওয়ার মাঝে
আমার সকল দুখের প্রদীপ  [তথ্য]
তুমি একলা ঘরে ব'সে ব'সে কী সুর বাজালে [পূজা-৩৬] [তথ্য]
আমার পাত্রখানা যায় যদি যাক ভেঙেচুরে [পূজা-৯৬] [তথ্য]
ছিল যে পরানের অন্ধকারে

পাণ্ডুলিপি অনুসারে অপর একটি গান পাওয়া যায়। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, তাঁর গীতবিতান কালানুক্রমিক সূচী গ্রন্থে এই ২টি গানের উল্লেখ রয়েছে। গান দুটির  রচনাকাল যথাক্রমে ফাল্গুন ও চৈত্র ১৩২৪। এই গান দুটি হলো           

          ফাল্গুন ১৩২৪।
ওহে সুন্দর,মরি মরি [পূজা-৫৩০] [তথ্য]
          চৈত্র ১৩২৪। কান্নাহাসির
-দোল-দোলানো পৌষ-ফাগুনের পালা [পূজা-১] [তথ্য]

প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় তাঁর গীতবিতান কালানুক্রমিক সূচী গ্রন্থে ১৩২৫ খ্রিষ্টাব্দের আশ্বিন মাসে রচিত গানের তালিকা দিয়েছেন, তার ভিতরে 'অশ্রুনদীর সুদূর পারে' গানটি ভারতী পত্রিকার বৈশাখ ১৩২৫ সংখ্যায় একটি গান প্রকাশিত হয়েছিল।

 

প্রবাসী পত্রিকার বৈশাখ ১৩২৫ সংখ্যায় একটি গান প্রকাশিত হয়। ধারণা করা হয় এই গানটিও চৈত্র মাসে রচিত হয়েছিল। এই গানটি হলো
        সে কোন্ বনের হরিণ ছিল আমার মনে।

এই গানটির রচনার প্রেক্ষাপট হিসাবে শান্তিদেব ঘোষ তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীত [বিশ্বভারতী পৌষ ১৪০৮] নামক গ্রন্থে লিখেছেন ১৩২৪ সালে দিনেন্দ্রনাথের একটি পোষা হরিণ হঠাৎ শান্তিনিকেতন থেকে পালিয়ে যায়, পরে দূরবর্তী এক গ্রামে সাঁওতালরা তাকে মেরে ফেলে। এই সংবাদে দিনেন্দ্রনাথের পত্নী শ্রীযুক্তা কমলাদেবী অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়েন। এই সময় তাঁকে সান্ত্বনা দেবার জন্য 'সে কোন্ বনের হরিণ ছিল আমার মনে' গানটি রচনা করেন।

ভারতী পত্রিকার বৈশাখ ১৩২৫ সংখ্যায় একটি গান প্রকাশিত হয়। ধারণা করা হয় এই গানটিও চৈত্র মাসে রচিত হয়েছিল। এই গানটি হলো
         
অশ্রুনদীর সুদুর পারে