কান্নাহাসির-দোল-দোলানো পৌষ-ফাগুনের পালা,
তারি মধ্যে চিরজীবন বইব গানের ডালা—
এই কি তোমার খুশি, আমায় তাই পরালে মালা
সুরের-গন্ধ-ঢালা?।
তাই কি আমার ঘুম ছুটেছে, বাঁধ টুটেছে মনে,
খ্যাপা হাওয়ার ঢেউ উঠেছে চিরব্যথার বনে,
কাঁপে আমার দিবানিশার সকল আঁধার আলা!
এই কি তোমার খুশি, আমায় তাই পরালে মালা
সুরের-গন্ধ-ঢালা?।
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি,
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাইনে আমি ছুটি।
শান্তি কোথায় মোর তরে হায় বিশ্বভুবন-মাঝে,
অশান্তি যে আঘাত করে তাই তো বীণা বাজে।
নিত্য রবে প্রাণ-পোড়ানো গানের আগুন জ্বালা—
এই কি তোমার খুশি, আমায় তাই পরালে মালা
সুরের-গন্ধ-ঢালা?।
"শ্রীপঞ্চমীর দিন [৩ ফাল্গুন শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি] ছেলেরা দল বাঁধিয়া সুরুলে বনভোজন করিতে চলিল। রবীন্দ্রনাথও বিকালে সেখানে যাইবেন শুনিয়া আমরা মেয়ের দলও উৎসাহ করিয়া চলিলাম।... তাহার পর কবি যেখানে বসিয়া ছিলেন সেইখানে গিয়া উপস্থিত হইলাম। তিনি আমাদের আকস্মিক আবির্ভাবে কিঞ্চিৎ বিস্মিত হইয়াছিলেন বোধ হয়, যাহা হউক, হাসিমুখেই বসিতে বলিলেন। নিজের দুই-একটি কবিতা পড়িয়া শুনাইলেন, তাহার পর শুরু হইল গানের পালা। পণ্ডিত ভীমরাও শাস্ত্রী কয়েকটি হিন্দী গান করিলেন, তাহার পর 'ফাল্গুনী' উজাড় করিয়া বসন্তের গান চলিল। 'আজি বিজন ঘরে নিশীথরাতে আসবে যদি শূন্যহাতে' গানটি কবি সেইদিনই রচনা করিয়াছিলেন বোধ হয়, সর্বশেষে সেই গানটি তিনি একলা গাহিয়া শুনাইলেন।"
প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, তাঁর গীতবিতান কালানুক্রমিক সূচী গ্রন্থে গানটির রচনাকাল উল্লেখ করেছেন- চৈত্র ১৩২৪। এই বিচারে গানটি রবীন্দ্রনাথ ৫৬ বৎসর ১১ মাস বয়সে রচনা করেছিলেন।
[দেখুন:
৫৬
বৎসর অতিক্রান্ত বয়সে রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
প্রথম সংস্করণ (বিশ্বভারতী, ১৩২৫ বঙ্গাব্দ)।
পৃষ্ঠা: ১-৫।
দ্বিতীয় সংস্করণ (বিশ্বভারতী
(১৩৫৮ বঙ্গাব্দ)।
পৃষ্ঠা: ১-৫। [নমুনা]
গীতি-চর্চ্চা
(পৌষ
১৩৩২ বঙ্গাব্দ)।
গান সংখ্যা ১৮২।
পৃষ্ঠা:
১৪২-১৪৩।
[নমুনা:
প্রথমাংশ,
শেষাংশ]
প্রবাহিনী
(বিশ্বভারতী
১৩৩২ বঙ্গাব্দ)।
গীতগান
২৩
। পৃষ্ঠা: ১৮-১৯। [নমুনা:
প্রথমাংশ,
শেষাংশ ]
রেকর্ডসূত্র:
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে
অজ্ঞাতনামা একটি রেকর্ড কোম্পানি এই গানটির রেকর্ড প্রকাশ করেছিল। শিল্পী ছিলেন গোপাল সেন।
[সূত্র: রেকর্ডে রবীন্দ্রসংগীত। সিদ্ধার্থ ঘোষ। ইন্দিরা
সংগীত-শিক্ষায়তন। নভেম্বর ১৯৮৯। পৃষ্ঠা: ৬৪]
প্রকাশের
কালানুক্রম: ১৩২৫ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে গানটি 'গীত-পঞ্চাশিকা' গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত
হয়েছিল। ১৩৩২ বঙ্গাব্দের
অগ্রহায়ণ
মাসে
প্রবাহিনী
নামক গ্রন্থে এবং
পৌষ মাসে
প্রকাশিত
গীতি-চর্চ্চা
-তে এই গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ১৩৩৮ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত
গীতবিতান-এর
দ্বিতীয় খণ্ডের প্রথম সংস্করণে এই গানটি গ্রহণ করা হয়েছিল 'গীত-পঞ্চাশিকা'
থেকে। এরপর ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত
গীতবিতান-এর
প্রথম খণ্ডের দ্বিতীয় সংস্করণে 'পূজা' পর্যায়ের 'গান-১' হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৩৭১ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে প্রকাশিত
গীতবিতানের অখণ্ড সংস্করণে
গানটি পূজা পর্যায়ের প্রথম গান
হিসেবেই অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৩৮০
পৌষ মাসে অখণ্ড গীতবিতানের তৃতীয় এবং সর্বশেষ সংস্করণে গানটি
পূজা পর্যায়ের প্রথম
গান হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
গ. সঙ্গীত বিষয়ক তথ্যাবলী:
স্বরলিপি:
স্বরলিপিকার:
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
[দিনেন্দ্রনাথ
ঠাকুরকৃত স্বরলিপির তালিকা]
রাগ ও তাল:
স্বরবিতান
ষোড়শ
(১৬,
গীতপঞ্চাশিকা।
আশ্বিন
১৪১৬)
খণ্ডে
গৃহীত স্বরলিপিতে রাগ-তালের উল্লেখ নেই।
উক্ত স্বরলিপিটি ৩।৩
মাত্রা ছন্দে
দাদরা'
তালে নিবদ্ধ।
দ্রুত লয়ে গাওয়ার জন্য এই গানে ব্যবহৃত তালটি 'দ্রুত দাদরা' হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
[দাদরা তালে
নিবদ্ধ রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
রাগ : কালাংড়া-বাউল। তাল: -দাদরা [রবীন্দ্রসংগীত : রাগ-সুর নির্দেশিকা। সুধীর চন্দ। প্যাপিরাস, ডিসেম্বর ২০০৬)]। পৃষ্ঠা: ৪৪
কীর্তন-দাদরা।
[রাগরাগিণীর এলাকায়
রবীন্দ্রসংগীত, প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমী,
জুলাই ২০০১।] পৃষ্ঠা: ৮০।
[কালাংড়া
রাগে নিবদ্ধ রবীন্দ্রসঙ্গীত]
বিষয়াঙ্গ: ভক্তিগীতি
সুরাঙ্গ:
বাউলাঙ্গ
[রবীন্দ্রনাথের রচিত বাউলাঙ্গ গানের তালিকা]
লয়: দ্রুত।