বিষয়:
রবীন্দ্রসঙ্গীত।
শিরোনাম: সর্ব খর্বতারে দহে তব ক্রোধদাহ
পাঠ ও পাঠভেদ:
- গীতবিতান
অখণ্ড (বিশ্বভারতী, কার্তিক ১৪১২ )-এর
পূজা
পর্যায়ের ২৩৪ সংখ্যক গান। উপবিভাগ
দুঃখ
৪৩,
সর্ব খর্বতারে
দহে তব ক্রোধদাহ—
হে ভৈরব, শক্তি দাও, ভক্ত-পানে চাহো ॥
দূর করো মহারুদ্র যাহা মুগ্ধ, যাহা ক্ষুদ্র—
মৃত্যুরে করিবে তুচ্ছ প্রাণের উৎসাহ॥
দুঃখের মন্থনবেগে উঠিবে অমৃত,
শঙ্কা হতে রক্ষা পাবে যারা মৃত্যুভীত।
তব দীপ্ত রৌদ্র তেজে নির্ঝরিয়া গলিবে যে
প্রস্তরশৃঙ্খলোন্মুক্ত ত্যাগের প্রবাহ
॥
পাঠভেদ: রবীন্দ্রনাথ গানটির প্রথম যে খসড়াটি
করেন, তা রবীন্দ্রভবনের আর্কাইভে
RBVBMS 019
নামক পাণ্ডুলিপিতে পাওয়া
যায়। এই খসড়ার সাথে বর্তমান পাঠের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
প্রথম খসড়া:
সর্ব খর্বতারে দহে তব বহ্নি দাহ
গীতবিতান :
সর্ব খর্বতারে দহে তব ক্রোধদাহ—
প্রথম খসড়া:
পাষাণ শৃঙ্খলমুক্ত ত্যাগের প্রবাহ॥
গীতবিতান : প্রস্তরশৃঙ্খলোন্মুক্ত ত্যাগের প্রবাহ॥
ক. রচনাকাল ও স্থান: গানটি রচনার উপলক্ষ সম্পর্কে শান্তিদেব ঘোষ তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীত গ্রন্থে লিখেছেন- '১৩৩৬ সালে যখন যতীন দাস লাহোর জেলে অনশন ব্রত অবলম্বন করেন, সে কথা সকলেরই স্মরণ আছে : তাঁর মৃত্যুপণের সংকল্প ভারতবাসীর চিত্তে খুব আলোড়ন এনেছিল। সেই বেদনাদায়ক আবহাওয়ার মধ্যে 'তপতী' লেখা হয়। আশ্রমবাসীদের নিয়ে গুরুদেব তার মহড়া দিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত যতীন দাসের মৃত্যু হল। সেই সংবাদ যখন শান্তিনিকেতনে এসে পৌঁছিল, সেইদিন গুরুদেব মনে যে বেদনা পেয়েছিলেন তা ভুলবার নয়। সন্ধ্যায় 'তপতী' অভিনয়ের মহড়া বন্ধ না রাখার কথা হল। কিন্তু বার বার তিনি তাঁর পাঠের খেই হারাতে লাগলেন, বহু বার চেষ্টা করেও কিছুতেই ঠিক রাখতে পারছিলেন না, অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ছিলেন। শেষ পর্যন্ত মহড়া বন্ধ করে দিলেন। সেই রাত্রেই লিখলেন 'সর্ব খর্বতারে দহে তব ক্রোধদাহ' গানটি। 'তপতী' নাটকে এটিকে পরে জুড়ে দিলেন।'
প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় তাঁর 'গীতবিতান কালানুক্রমিক সূচী' গ্রন্থে রচনার তারিখ উল্লেখ করেছেন- '২৮ ভাদ্র ১৩৩৬ (১৩ সেপ্টেম্বর ১৯২৯)। এই সময় রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল ৬৮ বৎসর ৫ মাস।
[রবীন্দ্রনাথের ৬৮ বৎসর বয়স রচিত গানের তালিকা]
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
- গ্রন্থ:
- প্রকাশের
কালানুক্রম:
স্বরবিতান সপ্তপঞ্চাশত্তম
-এর ৩৫ সংখ্যক পৃষ্ঠায় উল্লিখিত তথ্যানুযায়ী দশটি গানের স্বরলিপি সহ
তপতী
নাটকটি প্রথম প্রকাশিত হয় ভাদ্র ১৩৩৬ সালে। পরবর্তীকালে গ্রন্থটি আবার
মুদ্রিত হয় জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৮ ও বৈশাখ ১৩৫৬ সালে। এই গানটি সংযোজিত হয়
তপতীর
জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৮ সংস্করণে।
১৩৩৯
বঙ্গাব্দে প্রকাশিত
গীতবিতান
-এর
তৃতীয় খণ্ড, প্রথম সংস্করণ
তপতী নাটক থেকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এরপর
১৩৪৮
বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে প্রকাশিত
গীতবিতান
প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় সংস্করণ -এ গানটি অন্তর্ভুক্ত
হয়েছিল। এই সংস্করণে গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল পূজা পর্যায়ের উপ-বিভাগ:
দুঃখ-৪৩
হিসেবে।
১৩৭১ বঙ্গাব্দের আশ্বিন
মাসে প্রকাশিত অখণ্ড
গীতবিতান -এর
পূজা পর্যায়ের ২৩৪ সংখ্যক গান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত
হয়েছিল। গানটি একইভাবে অখণ্ড গীতাবিতানের তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল
পৌষ ১৩৮০ বঙ্গাব্দের পৌষ মাসে।
গ. সঙ্গীত বিষয়ক তথ্যাবলী:
- স্বরলিপিকার:
-
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। [স্বরবিতান সপ্তপঞ্চাশত্তম
-এর ৩৫ সংখ্যক পৃষ্ঠায় উল্লিখিত তথ্যানুযায়ী স্বতন্ত্রভাবে
তপতী
নাটকটি দশটি গানের স্বরলিপি সহ প্রকাশিত হয় চৈত্র ১৩৬৭ সালে। পূর্ববর্তী
মুদ্রনগুলোতে কোনো স্বরলিপিকারে নাম উল্লেখ না থাকলেও এই মুদ্রনে
স্বরলিপিকার হিসেবে দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম উল্লেখ করা হয়।]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ:
পূজা (দুঃখ)।
- সুরাঙ্গ: বাউলাঙ্গ।
- রাগ:
- তাল:
-
দাদরা।
- স্বরবিতান-৫৭-এ গৃহীত স্বরলিপিতে রাগ-তালের উল্লেখ
নেই। উক্ত স্বরলিপিতে ছন্দোবিভাজন ৩।৩ মাত্রা
ছন্দে দাদরা তালে নিবদ্ধ।
- [রবীন্দ্রসংগীত: রাগ-সুর নির্দেশিকা। সুধীর চন্দ।
প্যাপিরাস, ডিসেম্বর ২০০৬ । পৃষ্ঠা: ৮০]
- [রাগ-রাগিণীর এলাকায়
রবীন্দ্রসংগীত। প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী। পশ্চিমবঙ্গ
রাজ্য সংগীত আকাদেমি, জুলাই ২০০১। পৃষ্ঠা: ১
৪১
।]
[দাদরা
তালে নিবদ্ধ গানের তালিকা]
- গ্রহস্বর: পর্গা।
- লয়: দ্রুত।