যদি ঝড়ের মেঘের মতো আমি ধাই চঞ্চল-অন্তর
তবে দয়া কোরো হে, দয়া কোরো হে, দয়া কোরো হে ঈশ্বর ॥
ওহে অপাপপুরুষ, দীনহীন আমি এসেছি পাপের কূলে-
প্রভু, দয়া কোরো হে, দয়া কোরো হে, দয়া করে লও তুলে ॥
আমি জলের মাঝারে বাস করি, তবু তৃষায় শুকায়ে মরি-
প্রভু দয়া কোরো হে, দয়া করে দাও সুধায় হৃদয় ভরি ॥
এটি একটি ভাঙা গান। মূল অংশ ঋগ্বেদের দুটি সূক্তের অংশ বিশেষের অনুবাদ অনুসারে এই গানটি রচিত হয়েছে। নিচে মূল সূক্ত দুটির প্রাসঙ্গিক অংশ ও তার অনুবাদ তুলে ধরা হলো। উল্লেখ নিচের এই অংশের মূল অংশ এবং অনুবাদ গ্রহণ করা হয়েছে- রমেশচন্দ্র দত্তের ঋগ্বেদ সংহিত প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড থেকে। [হরফ প্রকাশনী। শুক্রবার ১১ জিলকদ ১৪২০, ১৮ই ফেব্রুয়ারী ২০০০, ৫ ফাল্গুন ১৪০৬ ]
মূল মন্ত্র :
ঋগ্বেদ।
৭ মণ্ডল।
৮৯
সূক্ত। রবীন্দ্রনাথ গ্রহণ করেছিলেন ২-৫ সূক্ত
মো ষু বরুণ মৃন্ময়ং রাজন্নহং গমম্। মৃলা সুক্ষত্র মৃলয়॥
১
যদেমি প্রস্ফুরন্নিব দৃতির্ণ ধ্মাতো অদ্রিবঃ। মৃলা সুক্ষত্র মৃলয়॥
২
ক্রত্বঃ সমহ দীনতা প্রতীপং জগমা শুচে। মৃলা সুক্ষত্র মৃলয়॥
৩
অপাং মধ্য তস্থিবাংসং তৃষ্ণাবিদজ্জরিতারম্। মৃলা সুক্ষত্র মৃলয়॥
৪
যৎকিং চেদং বরুণ দৈব্যে জনেহভিদ্রোহং মনুষ্যাশ্চরামসি।
অচিত্তী যত্তব ধর্মা যুয়োপিম মা নস্তস্মদেনসো দেব রীরিষঃ ॥ ৫
অনুবাদ :
১। হে রাজ বরুণ! মৃন্ময় গৃহ যেন আমি প্রাপ্ত না হই। হে সুক্ষত্র (অতিশয় বলবান)।! দয়া
কর দয়া কর।
২। হে আয়ুধবান বরুণ ! আমি কম্পান্বিত কলেবরে বায়ুচালিত মেঘের ন্যায় যাচ্ছি। হে
সুক্ষত্র।! দয়া কর দয়া কর।
৩। হে ধনবান, নির্মল বরুণ! অশক্তিপ্রযুক্ত কর্মের প্রতিকূল্য প্রাপ্ত হয়েছি। হে
সুক্ষত্র।! দয়া কর দয়া কর।
৪। জলমধ্যে বাস করলেও তোমার স্তোতাকে তৃষ্ণাপ্রাপ্ত হয়েছিল। হে সুক্ষত্র।! দয়া কর
দয়া কর।
৫। হে বরুণ! আমরা মনুষ্য, দেবগণের সম্বন্ধে আমরা যে কিছু বিরুদ্ধাচরণ করেছি, অজ্ঞানবশত তোমার যে কর্মে অনবধানতা করেছি, সে সকল পাপ প্রযুক্ত আমাদের হিংসা করো না।
মূল মন্ত্র :
ঋগ্বেদ।
২
মণ্ডল। ২৮ সূক্ত। রবীন্দ্রনাথ
গ্রহণ করেছিলেন ৬-৯ সূক্ত। নিচে এই অংশটুকুই তুলে ধরা হলো।
অপো সু ম্যক্ষ বরুণ ভিয়সং মৎসম্রালৃতাবোহনু মা গৃভায়।
দামেব বৎসাদ্বৃমামুগ্ধ্যংহো নহি ত্বদারে নিমিষশ্চনেশে॥
৬
মা নো বধৈর্বরুণ ষে ত ইষ্টাবেনঃ কৃণ্ববন্তমসুর ভ্রীণন্তি।
মা জ্যোতিষঃ প্রবসথানি গন্ম বি ষু মৃধঃ শিশ্রথো জীবসে নঃ॥
৭
নমঃ পুরা তে বরুণোত নূনমুতাপরং তধবিজাত ব্রবাম।
তে হি কং পর্বতে ন শ্রিতান্যপ্রচ্যুতানি দূলভ ব্রতানি॥ ৮
পর ঋণা সাবীরধ মৎকৃতানি মাহং রাজন্নন্যকৃতেন ভোজম্।
অব্যুষ্টা ইন্নু ভূয়সীরুষাস আ নো জীবাম্বরুণ তাসু শাধি॥ ৯
অনুবাদ :
৬। হে বরুণ! আমার নিকট হতে ভয় দূর করে দাও। হে সম্রাট ও সত্যবান! আমার প্রতি অনুগ্রহ কর। বৎস হতে বন্ধন রজ্জুর ন্যায় আমা হতে পাপ মোচন কর, কারণ তোমার থেকে পৃথক হয়ে কেউ এক নিমেষের জন্যও আধিপত্য করতে পারে না।
৭। হে অসুর বরুণ! তোমার যজ্ঞে যারা অপরাধ করে, তাদের যে আয়ুধ সকল হিংসা করে, আমাদের যেন সে আয়ুধ হিংসা না করে। আমরা যেন আলোক হতে নির্বাসিত না হই, আমাদের জীবনের জন্য হিংসককে বিশ্লিষ্ট কর।
৮। হে বহুস্থানোৎপন্ন বরুণ! আমরা অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কালে তোমার উদ্দেশে নমঃ শব্দ উচ্চারণ করব, যেহেতু হে অহিংসনীয় বরুণ! পর্বতের ন্যায় তোমাতে অচ্যূত কর্ম সকল আশ্রয় করে থাকে।
৯। হে বরুণ! পূর্ব পুরুষেরা যে ঋণ করেছিলেন তা পরিশোধ কর এবং সম্প্রতি আমিও যে ঋণ করছি, তাও পরিশোধ কর। হে বরুণ! আমাকে যেন অন্যের উপার্জিত ধন ভোগ করতে না হয়। অনেক ঊষা যেন উদিত হয় নি। হে বরুণ! আমরা যেন সে সকল ঊষায় জীবিত থাকতে পারি এরূপ আজ্ঞা কর।
এই ঋকগুলোর সুর করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই বেদমন্ত্রটির সুর-তাল হিসাবে উল্লেখ আছে- ইমনকল্যাণ। বিলম্বিত ত্রিতাল। ষড়বিতান ৬৪-তে স্বরলিপিসহ গানটি মুদ্রিত আছে। কিন্তু বাংলা অনুবাদের যে অংশের সুর করেছিলেন- তা ঋগ্বেদ। ৭ মণ্ডল। ৮৯ সূক্ত। রবীন্দ্রনাথ গ্রহণ করেছিলেন ২-৫ সূক্ত পর্যন্ত।
স্বরলিপি:
স্বরলিপিকার: প্রতিভা দেবী।
বিষয়াঙ্গ: ব্রহ্মসঙ্গীত।
সুরাঙ্গ:
গ্রহস্বর: সা।
লয়: মধ্য।