কাজল
[অভিধান: কাজল]

চোখের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ব্যবহৃত অঙ্গরাগ বিশেষ। সংস্কৃত কজ্জল শব্দ থেকে বাংলা কাজল শব্দের উৎপত্তি। প্রাচীন বাংলায় লেখা হতো ‌'কাজর‌'। প্রাচীন মিশর ও আরব উপদ্বীপে এর ব্যবহার ছিল। আরবি ভাষায় এর নাম ছিল কোহ‌ল (
كُحْل)।  আরবের কোহল শব্দটি ফার্সিতে ব্যবহৃত হতো সোরমেহ। বাংলাতে এই শব্দটি হয়েছে সুর্মা। বাংলাদেশে সুরমা এবং কাজল চোখের অঙ্গরাগ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও দুটি ভিন্ন অঙ্গরাগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

মধ্যপ্রচ্যের ইয়েমেন অঞ্চলে সৌ্ন্দর্য বর্ধন ছাড়াও চোখের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করা হতো। বিশেষ করে শিশুর দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে কোহ‌ল ব্যবহার করা হতো। এই অঞ্চলের মানুষ মনে করতো কোহ্‌ল মানুষের কুদৃষ্টি থেকে শিশুকে রক্ষা করবে। বঙ্গদেশে শিশুদের চোখে কাজল দেওয়া হতো সৌন্দর্যবরধন এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির জন্য। এর পাশাপাশি মানুষের কুদৃষ্টি থেকে শিশুকে রক্ষা করার জন্য কপালের এক পাশে কাজলের টিপ দেওয়া হতো।

প্রাগৈতিহাসিক মিশরের খ্রিষ্টপূর্ব ৩১০০ অব্দের দিকে মিশরের রানি, অভিজাত রমণী চোখের সৌন্দর্যবর্ধন ও চোখের উপকারের জন্য ব্যবহার করতেন সুরমা। এক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করতেন রসাঞ্জন
(stinite, Sb2S3) । তাঁর মনে করতেন চোখকে ঘিরে কালো কাজল অঙ্কন করলে, তীব্র সূর্যলোক থেকে চোখ রক্ষা পাবে। রসাঞ্জন ছাড়া ব্যবপক ব্যবহৃত হয়তো গ্যালেনা (PbS)

বঙ্গদেশে কাজল মেয়েরা ঘরে তৈরি করতো। সাধারণ, ন্যাকড়ার পলিতা তৈরি করে সরিষা তেলের প্রদীপ জ্বালানো হতো। এই প্রদীপের শিক্ষার উপর মাটি বা ধাতুর তৈরি পাত ধরলে, উক্ত পাতের গায়ে কালো বর্ণের প্রলেপ পরতো। এই প্রলেপকেই কাজল বলা হতো। শিশুদের জন্য বাংলার মায়েরা খুব যত্নের সাথে এই কাজল তৈরি করতেন। এছাড়া কিশোরী, তরুণী, যুবতীরা চোখের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ব্যবহার করতো। আধুনিক কালে শিশুর চোখের ক্ষতি হয়, এই বিবেচনায় কাজল পরানো হয় না। তবে মেয়েরা কাজল পরে থাকে। আধুনিক কালে মেয়েরা ঘরে তৈরি করা কাজলের পরিবর্তে বাজার থেকে উন্নতমানের কাজল ক্রয় করে তা ব্যবহার করে থাকেন।

আগের দিনে, মায়েরা শিশুর চোখের উপরের পাতা তুলে ধরে আঙুলের মাথায় কাজলের প্রলেপ নিয়ে চোখের নিচের পাতায় আলোতো স্পর্শে কাজল পরাতো। বড় মেয়েরা নিজেরাই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কাজল পরে থাকে। এছাড়া বিবাহাদি অনুষ্ঠানে সাজ-সজ্জার দোকানে গিয়ে কাজল পরে থাকে।