বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
১৯ মার্চ (৫ 
	চৈত্র ১৩৭৭ বঙ্গাব্দ। শুক্রবার)
গাজীপুর
	- 
২৬শে 
মার্চের পূর্বে সংঘটিত পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে বাঙালি সৈন্য ও জনতার প্রথম 
সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল গাজীপুরে।
 
 এই দিনে 
	
	গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে ভাওয়াল রাজবাড়িতে তৎকালীন সেনানিবাসে দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার উদ্দেশ্যে ব্রিগেড কমান্ডার জাহানজেবের নেতৃত্বে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একদল সেনা জয়দেবপুর সেনানিবাসে যাওয়ার 
উদ্যোগ নেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে, জয়দেবপুরের সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। 
এই সময় জয়দেবপুরের মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, ডিজেল প্ল্যান্ট ও সমরাস্ত্র কারখানায় 
শ্রমিকরা জয়দেবপুরে চলে আসে। এক ঘণ্টার ভিতরে হাজার খানেক শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ চারদিক থেকে লাঠিসোঁটা, 
দা, কাতরা, ছেন, দোনলা বন্দুকসহ জয়দেবপুরে উপস্থিত হয়। সেদিন জয়দেবপুর হাটের দিন ছিল। 
হাটে আসা মানুষ, জয়দেবপুর রেলগেটে মালগাড়ির বগি, রেলের অকেজো 
রেললাইন, স্লিপারসহ বড় বড় গাছের গুঁড়ি, কাঠ, বাঁশ, ইট ইত্যাদি একটি বিশাল ব্যারিকেড তৈরি করে। 
এরা জয়দেবপুর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত আরও পাঁচটি 
ব্যারিকেড দেওয়া হয়, যাতে পাকিস্তানি বাহিনী অস্ত্র নিয়ে ফেরত যেতে না পারে।
 
 এই সময় জয়দেবপুর সেনানিবাসের 
বাঙালি  অধিনায়ক ছিলেন  মেজর কে এম সফিউল্লাহ। গাজীপুরের রাজনৈতিক নেতা (সাবেক মন্ত্রী) মরহুম শামসুল হক পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। 
ব্যারিকেট তৈরির সময়, টাঙ্গাইল থেকে রেশন নিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি কনভয় 
জয়দেবপুরে পৌঁছায়। স্থানীয় জনগণ এই কনভয় অবরোধ করে, সৈন্যদের কাছ থেকে পাঁচটি চায়নিজ অটোমেটিক রাইফেল ছিনিয়ে নেয়।
	দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গলের রেজিমেন্টকে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব বাঙালি সৈন্যদের সামনে দিয়ে পাঞ্জাবি সৈন্যদের পিছনে সরিয়ে নেয়। 
এই অবস্থায় জাহান জেব মেজর সফিউল্লাহকে জনগণের ওপর গুলিবর্ষণের আদেশ দেয়। কিন্তু বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা জনতার 
উপর গুলিবর্ষণ না করে আকাশের দিকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে অগ্রসর হয়।
 
 এই অবস্থায় সাধারণ জনসাধারণ বর্তমান গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ওপর অবস্থান নেয়। এরা বন্দুক এবং পাকিস্তানি 
সৈন্যদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলিবর্ষণ করতে থাকে।
পাকিস্তানি সৈন্যরা জয়দেবপুর মোড়ে অবস্থান সুদৃঢ় করে কার্ফিউ জারি করে। এবং চারদিকে এলোপাথারি গুলি করতে থাকে। 
ফলে ঘটনা স্থলে শহীদ হন নেয়ামত ও মনু খলিফা এবং আহত হন ডা. ইউসুফসহ শত শত মানুষ।
 
 হুরমত নামক এক অসীম সাহসী কিশোর পাঞ্জাবি সৈন্যের রাইফেল কেড়ে নেওয়ার সময় 
	অপর সৈন্যের গুলিতে নিহত হন। এছাড়া কানু মিয়া নামে অপর একজন  আহত হয়ে পরে মারা 
	যান।
 
 স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, শহিদদের স্মরণে গাজীপুর 
	সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে নির্মাণ করা হয়েছে স্মারক ভাস্কর্য ‘অনুপ্রেরণা ১৯’ এবং এঁদের স্মরণে এই
জাগ্রত চৌরঙ্গী নামে গাজীপুরে জয়দেবপুর চৌরাস্তার সড়ক-দ্বীপে নির্মিত হয়েছে 
	স্মৃতিসৌধ
	
	অনুপ্রেরণা ১৯।
সূত্র :