NASA Earth Observatory থেকে তোলা ছবিতে সুন্দরবনের অবস্থান

সুন্দরবন

বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় একটি গভীর অরণ্য এবং বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও খুলনা জেলার দক্ষিণাংশ এবং ভারতে পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগণা জেলার দক্ষিণ-পূর্বাংশ জুড়ে এই বনভূমি বিস্তৃত। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর ইউনিসেফ কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্য (World Heritage ) সম্পদ রূপে সুন্দরবনকে গ্রহণ করা হয়েছে । উল্লেখ্য এটা ৫২২তম বিশ্বঐতিহ্য অঞ্চল।

দূর অতীতে বৃহত্তর খুলনা, বরিশাল জেলার সমুদ্রসংলগ্ন বনভূমিতে জনবসতি ছিল। তবে তা ব্যাপক জনসংখ্যায় পরিণত হয় নি। কারণ ক্রমাগত নদীর দিক পরিবর্তন, সামুদ্রিক ঝড়; বাঘ, সাপ, কুমির, হাঙর ইত্যাদি হিংস্র প্রাণীর কারণে, এই অঞ্চল মানুষের জন্য খুব স্বচ্ছন্দে জীবনযাপনের উপযোগী ছিল না। ফলে সে সময়ে অবাধে বনাঞ্চল বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ ঘটেছিল। এর সাথে খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতকে পর্তুগিজদের আক্রমণ শুরু হয়। এদের অত্যাচারে স্থানীয় মানুষ ক্রমান্বয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে সরে আসে। ফলে সমুদ্রোপকুলের বিপুল অংশ জুড়ে সুন্দরবন আরও ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছিল। এছাড়া এই অঞ্চলের অনেক স্থানের মাটি বসে গিয়ে কিছু জনপদ জনহীন হয়ে পড়েছিল। সুন্দরবনের কোনো কোনো অংশের মাটির নিচে পুরানো ঘরবাড়ির নমুনা পাওয়া যায়। খুলনা জেলার শেখেরটেক, কালীবাড়ি ও কামারবাড়ী অঞ্চলে প্রাচীন জনবসতির নমুনা পাওয়া গেছে। মোগল রাজত্বের সময়, দুর্গম এবং জনবিরল এলাকা হিসাবে তোদরমলের ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দের ভূমি-জরিপ থেকে সুন্দরবনকে বাদ পড়ে। ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দে শাহ্ শুজা এই জরিপ সংশোধন করে সুন্দরবন এলাকাকে শাসনধীনে আনেন।
১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে মোগল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর এর কাছ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি স্বত্বাধিকার পাওয়ার পরপরই, তারা সুন্দরবন এলাকার মানচিত্র তৈরি করে ১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দে ক্লড রাসেল সুন্দরবন অঞ্চলে আবাদী জমি তৈরি করার উদ্যোগ নেন। ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য, পরবর্তী ৩০ বৎসর কৃষকদের রাজস্ব মওকুফ করার ঘোষণা দেন। ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে টিলম্যান হেঙ্কেল নব উদ্যোগে সুন্দরবন অঞ্চলে আবাদী জমি উদ্ধার এবং বসতি স্থাপনের উদ্যোগ নেন। তিনি বিহার থেকে কোল, ভিল, সাঁওতালদের জমির লোভ দেখিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে আবাদী জমি তৈরিতে ব্যবহার করেন। এই সময় আদিবাসী সাপ, বাঘ এবং বিভিন্ন রোগে প্রাণ হারায়। সাঁতালদের মূল অংশ কিছুটা জমি উদ্ধার করার পরও তাদের পিতৃভূমিতে ফিরে যায়। এরপর ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে হেনুকুল নামক জনৈক ইংরেজ সুন্দরবনের উত্তরাংশে আশপাশের জনবসতি থেকে আদিবাসীদের সৃষ্ট জমিতে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করেন। কিন্তু এই উদ্যোগ ততটা কার্যকরী হয় নি।

১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজরা সুন্দরবনের উপর পূর্ণ অধিকার অর্জন করে। ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে এল. টি হজেয সুন্দরবনের প্রথম জরিপ কার্য পরিচালনা করেন। ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভারতের তৎকালীন বাংলা প্রদেশে বনবিভাগ স্থাপন করে ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ভারতের বন আইন প্রণয়ন হয়। এই আইনের সূত্রে বন ব্যবস্থাপনা বিভাগের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে। এই আইনের  ধারা ৮-এর সূত্রে সুন্দরবনের একটি বড় অংশকে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় ১৮৭৫-৭৬ খ্রিষ্টাব্দে। আর ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে  সমগ্র সুন্দরবন এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয় এবং ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে সমগ্র সুন্দরবনের দায় দায়িত্ব বন বিভাগের উপর ন্যস্ত করা হয়। এই সময় এই বিভাগের সদর দপ্তর ছিল খুলনায় সুন্দরবনের প্রথম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ছিলেন M. U. Green। তিনি ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। সুন্দরবনের জন্য ১৮৯৩-৯৮ সময়কালে প্রথম বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণিত হয়

১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ-ভারতীয় সরকার ৫০ বৎসর মেয়াদি একটি আবাদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সুন্দরবনের উত্তরাংশ ক্রমে ক্রমে জনবসতি গড়ে উঠতে থাকে। এই সময়, নিম্নবর্ণের হিন্দু এবং অন্ত্যজ হিন্দুদের মধ্যে যারা ধর্মান্তিরত হয়ে মুসলমান হয়েছিল, তারা এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করা শুরু করে। এই সময় মেদেনীপুর এবং সাতক্ষিরা অঞ্চলে থেকে কিছু মানুষ জমি কোনে রায়তি ভূস্বামীতে পরিণত হন। এঁদের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে সুন্দরবনকে 'ট্র্যাক্ট আফ ওয়াস্ট ল্যান্ড' হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। সে সময় হুগলী নদীর মোহনা থেকে মেঘনা নদীর মোহনা পর্যন্ত প্রায় ১৬৫ মাইল (২৬৬ কি.মি.) এলাকা জুড়ে এর সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছিল। একই সাথে চব্বিশ পরগনা , খুলনা ও বাকেরগঞ্জ এই তিনটি জেলা অনুযায়ী এর আন্তঃসীমা নির্ধারণ করা হয়। সে সময় জলাধারসহ পুরো এলাকার আয়তন হিসেব করা হয় ৬,৫২৬ বর্গমাইল (১৬,৯০২ কি.মি)। বলাইবাহুল্য অসংখ্য নদীনালা, বাঘ ও অন্যান্য বন্য জন্তুর কারণে, এই জরিপ যথার্থ হয়েছিল এটা বলা যায় না।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাক-ভারত বিভাজনের সময় সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার তৎকালীন পাকিস্তানের অংশে পড়ে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে, সুন্দরবনের ওই অংশ বাংলাদেশের অধিকারে আসে।

ক্রমে ক্রমে জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণে সুন্দরবনের আয়তন কমতে থাকলে, ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে বন-সম্পদ সংরক্ষণের তাগিদে তৎকালীন সরকার সুন্দরবনে চাষাবাদ বা ঘরবাড়ি তোলা নিষিদ্ধ করে দেয়। বর্তমানে সুন্দরবন সংরক্ষিত বন হিসাবে স্বীকৃত। শুধু তাই নয়, এই অঞ্চলের বন্যপ্রাণী হত্যা, বৃক্ষ নিধন ইত্যাদিও নিষিদ্ধ। তারপরেও সুন্দরবন ক্রমাগত আয়তন হারাচ্ছে। কিছু মানুষ এখনও অবৈধভাবে গাছ কেটে চলেছে এবং হরিণ, গোসাপ-সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী হত্যা করছে।

সুন্দরী গাছের সারি

নামকরণ: এই বনের নাম নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে নানাবিধ মতভেদ আছে। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মত হলো- এই বনের সুন্দরী নামক গাছের নামানুসারে এর নাম সুন্দরবন হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, সমুদ্রকে স্থানীয় ভাষায় সমুন্দর বলা হয়। পরে সমুন্দরের বন থেকে সুন্দরবন নামটি এসেছে। বিভিন্ন জেলার গেজেটিয়ার প্রণেতা বিভারিজ বলেন বাখরগঞ্জ (বরিশাল) জেলার ‘সৃন্ধ্যা’ নামে নদী থেকে সুন্দরবন নাম হয়েছে। অন্যমতে পুরাকালে বাখরগঞ্জের অধীনে 'চন্দ্রদ্বীপ' নামে একটা প্রসিদ্ধ স্থান ছিল। এ চন্দ্রদ্বীপ নাম থেকে সুন্দরবনের নামের উৎপত্তি। কেউ কেউ মনে করেন, এক সময় বাখরগঞ্জে পটুয়াখালি এলাকায় চন্দ্রভণ্ড নামে এক জাতি বাস করতো। এই চন্দ্রভণ্ড নাম থেকেই সুন্দরবন নামের উৎপত্তি । প্রাচীন গ্রন্থাবলীতে হিমালয়ের পাদদেশ হতে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর বিস্তৃত এলাকায় গড়ে ওঠা সমুদ্রবেষ্টিত এই বনকে 'কালকবন' নামে অভিহিত করা হয়েছিল। উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যের সৌন্দর্যের অপার বিস্তার এই বন 'সুন্দরবন' নামেই অভিহিত হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। আবার এও মনে করা হয় যে-  উদ্ভিদ, প্রাণী, কীট-পতঙ্গ, ব্যাকটেরিয়া আর বিশেষত জলে কুমীর -ডাঙায় বাঘ এর এই সৌন্দর্য সুশোভিত বনের নাম সুন্দরবন হওয়াই স্বাভাবিক।

ভৌগলিক অবস্থান ও আয়তন: ২১ ডিগ্রি ৩০মিনিট থেকে ২০ ডিগ্রি ৩৬ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯-৯০ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা-র মধ্যে সুন্দরবন অবস্থিত। এর বর্তমান আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর ভিতরে বাংলাদেশ অংশে ৫,৭০৪ বর্গকিলোমিটার। অবশিষ্ট অংশ ভারতে অবস্থিত।

ভূপ্রকৃতি গঠন: উপমহাদেশের বৃহত্তম নদ-নদী ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা নদীর কর্তৃক হাজার হাজার বছর ধরে বয়ে আনা নুড়ি, বালি ও পলিমাটি জমে সমুদ্র উপকূলে জেগে উঠা চর সৃষ্টি হয়েছে। কালক্রমে সেই চরগুলো বৃদ্ধি পেয়ে বৃহৎ আকার ধারণ করেছে। ক্রমে ক্রমে এই সকল ভূখণ্ডে গাছে ছেয়ে গিয়ে বনের সৃষ্টি হয়েছে। এই বনে অসংখ্য ছোটো বড় নদী জালের ছড়িয়ে রয়েছে। এর দক্ষিণাঞ্চলে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। জোয়ারের সময় সাগরের লবণাক্ত জলে, এই বনের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। আবার ভাটার সময় সমুদ্রের পানি নেমে গেলে নদীর মিষ্টি পানি লবণাক্ত মাটিকে সিক্ত করে। ২৪ ঘণ্টায় দুই বারের জোয়ারভাটায় এই অঞ্চলের মাটি এবং পানি একটি বিচিত্র বৈশিষ্ট্য লাভ করেছে। এরই ভিতরে গজিয়ে উঠছে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদরাজি। লবণাক্ততার বিচারে এই অঞ্চলের মাটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগগুলো হলো

লবণমুক্ত ভূমি: এই বনের উঁচু অঞ্চলে লবণমুক্ত মাটি রয়েছে। এই অঞ্চলের মাটি কখনো সমুদ্রের পানিতে কখনও প্লাবিত হয় না।

মধ্য লবণাক্ত ভূমি: এই অঞ্চলে ভূমি স্বল্প সময়ের জন্য আংশিক প্লাবিত হয়। এর সাথে প্রবল বেগে নদীর মিষ্টি পানি মিশ্রিত হওয়ার ফলে মাটির লবণাক্ততার পরিমাণ কম থাকে।

লবণাধিক্য ভূমি : সমুদ্র নিকটবর্তী অঞ্চলে জোয়ারের প্রাথমিক অবস্থাতেই প্লাবিত হয় এবং দীর্ঘ সময় সমুদ্রের পানির নিচে থাকে। জোয়ারের শুরতেই এই অঞ্চল প্লাবিত হয় এবং জোয়ারের শেষ দশায় তা জলমুক্ত হয়।

এছাড়াও এই অঞ্চলে বছরে গড়ে ২০০ সে.মি. বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। বনের উঁচু অঞ্চলে বৃষ্টির পানি মাটির লবণাক্ততা হ্রাস করতে সহায়তা করে।

সুন্দরবনের উদ্ভিদ : নদীর মিষ্টি পানির সাথে বাহিত নানাবিধ জৈব উপকরণ, মাটি এবং  নোনা পানির প্রবাহের সংমিশ্রণে সৃষ্ট এই বনের মাটিকে ভিন্ন রকমের উর্বরতা দান করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ম্যানগ্রোভ বন যতো আছে, তাতে ৬০ প্রজাতির উদ্ভিদের কথা জানা যায়। এর ভিতরে ৩৩ প্রজাতির খাঁটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জন্মে সুন্দরবনে। এই জাতীয় উদ্ভিদের উর্দ্ধমুখী বায়বীয় মূল থাকে। এই মূলের সাহায্যে এরা শ্বসনের জন্যে বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। এই জাতীয় উদ্ভিদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো গাছ হলো সুন্দরী (Heritiera fomes)। এ ছাড়া রয়েছে,-কেওড়া (Sonneratia apetala), গেওয়া (Excoecaria agallocha), পশুর (Xylocarps cucullata), গরান (Ceriops decandra), গোলপাতা (Nypa frutieans), ধানি ঘাস (Porterasia Coarctata) হেঁতা (Phoenix pelludosa) ইত্যাদি

সুন্দরবনের প্রাণিজগত : এই বনভূমির বিচিত্র পরিবেশে জলে-স্থলে অসংখ্য অণুজীবী প্রাণী বসবাস করে। এদের প্রজাতির প্রকৃত সংখ্যা আজো নির্ণীত হয়নি। বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় আংশিকভাবে এর যে সংখ্যা ধরা হয়েছে, তা হলো এই বনে প্রায় ৫০ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া, দুই শতাধিক প্রজাতির ক্ষুদ্র ছত্রাক এবং কুড়িটারও বেশি প্রজাতির অণুশৈবাল আছে।

এই বনে রয়েছে বিখ্যাত
বাঘ [রয়েল বেঙ্গল টাইগার]। চিত্রল হরিণ, বুনো শুয়োর, রেসাস বানর , সোমালি শিয়াল, ধাড়ি ব্যান্ডিকুট ইঁদুর, বনবিড়াল, ভোঁদড়/ধেড়ে, গাঙ্গেয় শুশুক, ইরাবদ্দি শুঁশুক (শোঁশ)। আছে বিষাক্ত এবং বিষহীন বহু প্রজাতির সাপ।

সুন্দরবনের প্রায় সব জায়গাতেই বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়। স্থায়ীভাবে বসাবাসকারী পাখি ছাড়াও, বিভিন্ন ঋতুতে অতিথি পাখি দেখা যায়। বড় পাখীগুলো মধ্যে গাড়াপোলা ও মদনটাক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । এছাড়াও আছে
বাঁশ কুরাল, বিল শিকারী, করমমূলী, 
কাক, গয়ার, গাঙ শালিক, চিল, টিয়া, দুধরাজ, দোয়েল, পানকৌড়ি, ফিঙে,  বাটাঙ, বালিহাস, ভীমরাজ, মাছরাঙা, মানিকজোড়, রক্তরাজ, শকুন, শামুকখোল, শ্বেতকাক।

সুন্দরবন থেকে আহরিত সম্পদ: বাঘ, সাপ, কুমির, হাঙর উপেক্ষা করে বহু মানুষ সুন্দরবনে প্রবেশ করে। বৈধ বা অবৈধভাবে গোলাপাতা ও কাঠ সংগ্রহের জন্য বহু মানুষ বনে প্রবেশ করে। এদেরকে সাধারণত বাওয়ালি নামে অভিহিত করা হয়। এছাড়া একদল মানুষ এই বন থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকে। এদেরকে স্থানীয় ভাষায় মৌয়ালি বলা হয়। এক প্রকার সামুদ্রিক শামুক ও ঝিনুক পুড়িয়ে চুন তৈরি করা হয়। এই অঞ্চলের নদীগুলো থেকে মাছ ধরার জন্য প্রতিদিন বহু জেলে বনে প্রবেশ করে। সরকারি চেষ্টায় এই বন সংরক্ষণের জন্য বিশেষ বাহিনী থাকলেও, প্রকৃতপক্ষে এই বনকে রক্ষা করে চলেছে, বাঘ, সাপ, কুমির এবং হাঙরের মতো হিংস্র প্রাণীকুল। বাঘকে বলা হয় এই বনের প্রধান প্রহরী।

তথ্য
সূত্র :
সাতক্ষীরা তথ্য বাতায়ন ।
http://www.dcsatkhira.gov.bd/index.php?option=com_content&view=article&id=166

শিশু-বিশ্বকোষ। পঞ্চমখণ্ড। বাংলাদেশ শিশু একাডেমী। পৌষ ১৪০৪, ডিসেম্বর ১৯৯৭।