৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজা শশাঙ্ক-এর মৃত্যুর পর পরই ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে হিউয়েন সাঙ বঙ্গদেশের পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্যের রাজধানী পুণ্ড্রনগর (বাংলাদেশের মহাস্থানগর) ভ্রমণ করেন। তিনি বর্তমান নওগাঁ-এর সোমপুর মহাবিহারও পরিদর্শন করেন। সে সময়ের বঙ্গদেশ সম্পর্কে তিনি যে তথ্য লিপিব্ধ করেন, তা থেকে জানা যায়− দেশটির পরিসীমা ছিল প্রায় ৪০০০ লি (ছয় লি-তে এক মাইল) এবং এর রাজধানীর পরিসীমা প্রায় ৩০ লি। তিনি দেশটিকে ঘনবসতিপূর্ণ এবং সবধরনের খাদ্যশস্যে সমৃদ্ধ দেখতে পান। সে সময়ও পুরোপুরি গৌড় মাৎস্যনায় পতিত হয় নি। সুযোগ্য শাসকের অভাবে ৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে গৌড়ের কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা ভেঙ পড়ে এবং ছোটো ছোটো প্রজাতন্ত্রের সৃষ্টি হয়। এরপর প্রজাতন্ত্রের প্রধানদের অধিকাংশই অত্যাচরী জমিদারে পরিণত হয়।
৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দে হর্ষবর্ধনের মৃত্যু হলে, রাজা শশাঙ্কের পুত্র রাজত্ব পুনপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু সফল হতে পারেন নি। এই সময় জয়নাগ নামক জনৈক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি গৌড়ের সিংহাসন অধিকার করেন। তিনি প্রাথমিকভাবে নিজেকে রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। এরপর তিনি একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী তৈরি করেন, কামরূপের রাজা ভাস্করবর্মণ-এর সৈন্যদের পরাজিত করে শশাঙ্কের রাজধানী 'কর্ণসুবর্ণ' জয় করেন। জয়নাগের মৃত্যুর পর তিব্বতের রাজা আসাম করেন এবং গৌড় রাজ্যের সীমান্ত পর্যন্ত অগ্রসর হন। সে সময় গৌড়ে কোনো শক্তিশালী রাজা না থাকায়, তিব্বতীয় সৈন্যরা উত্তরবঙ্গের কিছুটা অধিকার করে নেন। স্থানীয় ছোট ছোট প্রজাতন্ত্রের শাসক এবং জনসাধারণের অসহযোগিতার কারণ, ৭০২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিব্বতীয়রা উত্তরবঙ্গ ত্যাগ করে।
অন্যদিকে, শশাঙ্কের মৃত্যুর পর কনৌজের রাজা যশোবর্মণ, বঙ্গদেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ অধিকাংশ অংশই দখল করে নেন। এই সময় কাশ্মীরের রাজা ললিতাদিত্য বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের কিছুটা দখল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই সকল ভিন্নদেশী শাসকদের দ্বারা বাংলাদেশ যখন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন, সেই সময় বাংলাদেশের প্রবীন ও প্রাজ্ঞ নেতারা আত্মকলহ ত্যাগ করে, গোপাল নামক এক জনপ্রিয় সামন্তকে রাজা হিসেবে নির্বাচিত করেন। এই গোপাল থেকেই বঙ্গদেশে পাল বংশের শুরু হয়। ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে গোপাল তাঁর রাজত্ব শুরু করেন। ১১৬২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পাল বংশ বাংলাদেশ শাসন করেছিল। [পালবংশীয় রাজত্বকাল]
সূত্র :
বাংলাদেশের
ইতিহাস (প্রাচীন যুগ)/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।