জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
সূত্র: বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন
http://www.ecs.gov.bd/Bangla

নিবন্ধন নম্বর

০২৩

নিবন্ধন তারিখ

১৩/১১/২০০৮

প্রতীক

খেজুরগাছ

প্রতীক নমুনা

সভাপতি

মাওলানা শায়েখ আবদুল মোমিন

মহাসচিব

মাওলানা নূর হোছাইন কাসেমী

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা

লেভেল ১০, রুম নং ১০০৩/এ, ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা।

মোবাইল

০১৭১২৭৮৯২২০, ০১৭১৫৯৭০৭২৯

ইমেইল

jamiateulamaeislambangladesh@gmail.com

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
বাংলাদেশের একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল।

১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের দিকে  ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারান পুর জেলারা দেওবন্দ নামক স্থানের দারুল উলুম মাদ্রাসার কয়েকজন ইসলামী পণ্ডিত একটি ইসলামী সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। এই সংগঠনের প্রধান ছিলেন মাওলানা মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবি। এছাড়া এই সংগঠনের বিশিষ্ট নেতা ছিলেন মাওলানা রশিদ আহমেদ গাঙ্গোহি ও হাজি সাইদ আবিদ হুসাইন।

১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে মার্চ  থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুর দিকে এরা ভারত বিভাজনের বিরোধিতা করেছিল। এদের ভিতরে মাওলানা হুসাইন আহমেদ মাদানি পাকিস্তান নামক পৃথক রাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছিলেন। এ সময় তিনি মাদরাসার শায়খুল হাদিস হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং আলেমদের সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের নেতৃত্ব দেন। এই সংগঠনটি সকল ধর্মের মানুষ নিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রের স্থাপনের জন্য প্রচারণা চালিয়েছিলেন। এই সূত্রে এই সংগঠন সকল প্রকার সহিংসতা থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন।

এই সংগঠনটি 'জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ' নাম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছিল। এই সময়ে এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন- মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা হুসাইন আহমেদ মাদানি, মাওলানা আহমেদ সাইদ দেহলভি, মুফতি কিফায়েতুল্লাহ দেহলভি, মুফতি মুহাম্মদ নাইম লুধিয়ানভি, মাওলানা আহমেদ লাহোরি, মাওলানা বশির আহমেদ ভাট্টা, মাওলানা সৈয়দ গুল বাদশা, মাওলানা হিফজুর রেহমান সিউহারভি ও মাওলানা আবদুল বারি ফিরাঙ্গি মেহলি কর্তৃক এটি গঠিত হয়।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারি জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ-ই সর্বপ্রথম ভারতবর্ষের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দাবি করে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে জমিয়ত নেতৃবৃন্দ জেল-জুলুম-নির্যাতন ভোগ করেন। পরবর্তী সময়ে মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি (পাকিস্থানের) দাবিকে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পাকিস্থানের অঞ্চলের ওলামায়ে কেরাম পূর্ণ সমর্থন করেন। এই সূত্রে ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ও ২৯ অক্টোবর কলিকাতার মুহাম্মদ আলী পার্কে মুসলিম লীগের প্রত্যক্ষ সমর্থনে একটি উলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন থেকে প্রতিষ্ঠিত হয় 'নিখিল ভারত জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম' নামে একটি নতুন সংগঠন। এই নতুন জমিয়ত পাকিস্তান প্রশ্নে মুসলিম লীগের পক্ষ নেয়।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাক-ভারত বিভাজনের পর, পাকিস্তানের অবস্থিত দলটির সদস্যরা স্থাপন করেন- জমিয়তে উলামা পাকিস্তান।  পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর, পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে দলের পক্ষে প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের সভাপতি মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানি এবং ঢাকায় উত্তোলন করেন মাওলানা জাফর আহমদ উসমানি।

১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে ইসলামী শাসনতন্ত্রের দাবিতে সিলেটে এই দলের উদ্যোগে উলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে করাচিতে জমিয়তের উদ্যোগে সর্বদলীয় সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে ইসলামী শাসনতন্ত্রের ঐতিহাসিক ২২ দফা মূলনীতি প্রণীত হয়। নব্য পাকিস্তানে 'নেজামে ইসলাম' তথা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়া সুদূর পরাহত দেখে দলের অনেকে হতাশ হয়ে পড়েন। তাই ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে নিখিল ভারত জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতৃবৃন্দের একটি অংশ মুসলিম লীগের সঙ্গ ত্যাগ করে 'নেজামে ইসলাম পাটি' নামে পৃথক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই বছরের ১৮, ১৯ ও ২০ মার্চ বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার হযরত নগরে দলটির কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অধিবেশনেই মাওলানা আতহার আলীকে সভাপতি, মাওলানা সৈয়দ মুসলেহ উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক এবং মাওলানা আশরাফ আলী ধর্মন্ডলীকে সহকারী সম্পাদক নির্বাচিত করে 'নেজামে ইসলাম পার্টি'র কার্যক্রম শুরু হয়।

১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার পল্টন ময়দানে জমিয়তের উদ্যোগে নেজামে ইসলাম তথা ইসলামী শাসন ব্যবস্থার দাবিতে দুই দিনব্যাপী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই বছরেরই উভয় পাকিস্তানে খতমে নবুওয়াত আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই সময় এরা কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করে আন্দোলন শুরু করে। যদিও এই দলটি শুরু দিকে
সকল প্রকার সহিংসতা থেকে নিজেকে দূরএ রাখার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তৎকালীন জামায়েত-ই-ইসলামী-র সহযোদ্ধা হিসেবে কাদিয়ানি মুসলমানদের নিধনকর্মে অংশগ্রহণ করে। পাকিস্তানের কুখ্যাত 'লাহোর-৫৩' নামক দাঙ্গায় প্রায়
সমগ্র দাঙ্গায় প্রায় ১০,০০০ লোক নিহত হয়। ভারত-পাকিস্তানের বিভাজনের পর একটি দাঙ্গায় এত লোক নিহত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম।

সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শল আয়ুব খান-এর বিরদ্ধে আন্দোলনে জমিয়ত নেতৃবৃন্দ সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। এছাড়া আইয়ুব খান কর্তৃক নিয়োজিত ইসলামী গবেষণা পরিষদের ডিরেক্টর ড. ফজলুর রহমানের ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জমিয়ত দেশব্যাপী জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলে।

১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে নেজামে ইসলাম পার্টি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। এই নির্বাচনে তাদের এককালের পৃষ্ঠপোষক ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে পরাজিত করার লক্ষ্যে অপরাপর বিরোধী দলগুলোর সমন্বয়ে একটি যুক্তফ্রন্টও গঠন করা হয়। এই ফ্রন্টে নেজামে ইসলাম পার্টি ছাড়া আরও যে সব দল ছিল সেগুলো হলো আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ ও কৃষক শ্রমিক পার্টি। উল্লেখ্য এই সময় যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতীক ছিল 'নৌকা'। যা বর্তমানে আওয়ামী লীগের পরিচয় চিহ্নে পরিণত হয়েছে।

এই ফ্রন্টের পক্ষ থেকে ২১-দফা দাবি সম্বলিত একটি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা হয়। এর ভূমিকায় বলা হয় : 'কুরআন ও সুন্নাহ-বিরোধী কোন আইন প্রণয়ন করা হবে না।' যুক্তফ্রন্ট সরকারে নেজামে ইসলাম পার্টি অংশ নেয় এবং মন্ত্রিত্ব লাভের সুবাদে গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারনী ভূমিকা পালন করে। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে দলটির ৩৬ জন নেতা নির্বাচিত হন। জাতীয় পরিষদে সংসদীয় দলের নেতা ছিলেন দলীয় সভাপতি মাওলানা আতহার আলী। এডভোকেট মৌলভী ফরিদ ছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রী। প্রাদেশিক পরিষদের স্পীকার ছিলেন আব্দুল ওহাব খান। এছাড়া আইন, ভূমি ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ও ছিল নেজামে ইসলাম পার্টির মন্ত্রীদের দায়িত্বে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী মুহাম্মদ আলী পরবর্তীতে নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগ দিলে তাকে দলের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে পূর্ব-পাকিস্তানে অবস্থিত এই দলটির জমিয়তে উলামা পূর্ব-পাকিস্তান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই দলের নামকরণ করা হয় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। এই দলের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন শায়খুল হাদিস আল্লামা আজীজুল হক।

স্বাধীন বাংলার প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন- মাওলানা তাজাম্মুল আলী। এরপর সভাপতি নির্বাচিত হন- শায়খুল হাদীস মাওলানা আজীজুল হক। পরবর্তি সভাপতি- হাফিজ মাওলানা আব্দুল করীম শায়খে কৌড়িয়া-কে নির্বাচিত করা হয়। তিনি ২০০১ পর্যন্ত এ পদে বহাল ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর জমিয়তের সভাপতি নির্বাচিত হন- মাওলানা শায়খ আশরাফ আলী বিশ্বনাথী।

১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, ছয়টি ইসলামি দল নিয়ে এই ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল। এই জোটের নামকরণ করা হয়েছিল- ইসলামী ঐক্যজোট। এই জোটের অন্যান্য দলগুলো ছিল-খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলামী পার্টি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন (বর্তমান ইসলামী আন্দোলন) ও ফরায়েজী আন্দোলন।

২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে শায়খে বিশ্বনাথীর মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বপালন করেন মাসিক মদীনা সম্পাদক ‘মাওলানা মুহিউদ্দীন খান’। পরবর্তী সময় কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন- খলিফায়ে মাদানী শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়খে ইমামবাড়ী (হাফিযাহুল্লাহ)। তিনি অদ্যাবধি সভাপতির পদে আছেন। এই দলের  প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন শায়খুল হাদিস আজিজুল হক (পণ্ডিত)।

২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর মুফতি আমিনী'র নেতৃত্বাধীন ইআলামী ঐক্যজোট নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়। এই বছরই জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এই জোট ত্যাগ করে নিজ নামে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়।