সুজানগর
বাংলাদেশের
পাবনা
জেলার একটি উপজেলা। এই
উপজেলার উত্তরে সাঁথিয়া উপজেলা, দক্ষিণে
রাজবাড়ি সদর উপজেলা ও পাংশা উপজেলা (পদ্মা
নদীর অপর পারে), পূর্বে বেড়া উপজেলা এবং পশ্চিমে পাবনা
সদর উপজেলা। আয়তন ৩৩৪.৪০ বর্গকিলোমিটার।
মোগল সম্রাট শাহ সুজা এই অঞ্চলের নামকরণ করেছিলেন। ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহকালে তাঁতিবন্দের জমিদার গোবিন্দ চৌধুরী ব্রিটিশ শাসকদের সন্তুষ্ট করার জন্য, বিদ্রোহী সৈন্যদের পদ্মা ও যমুনা নদী তীরে তাঁর নিজস্ব পাইক-বরকন্দাজ নিয়োগ করেন এবং এই অঞ্চলে আগত বিদ্রোহীদের ধরা বা বিনাশ করার জন্য সার্বিক সহায়তা করেন। এই কারণে জমিদার গোবিন্দ চৌধুরী তৎকালীন স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে তীব্রভাবে নিন্দিত হয়েছিলেন। কিন্তু লর্ড মেও বিভিন্নভাবে এই জমিদারকে পুরস্কৃত করেন এবং তাঁতিবন্দে রাজবাড়িতে এসে জমিদারকে সম্মানিত করেন।
১৮৩২
খ্রিষ্টাব্দে পাবনাকে যখন জেলাতে পরিণত করা হয়, তখন এই অঞ্চলটি একটি কৃষি
সমৃদ্ধ অঞ্চল ছিল। ১৮৭২-৭৩ খ্রিষ্টাব্দে কর বৃদ্ধির কারণে পাবনাতে জমিদারদের
বিরুদ্ধে প্রজাবিদ্রোহ শুরু হলে, এই অঞ্চলের কৃষকরা এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেন। এই
সময় ব্রিটিশ
সরকার কঠোরভাবে এই বিদ্রোহ দমন করে। এই সূত্রে এখানে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন হয় এবং পরে
সুজানগরকে একটি স্থায়ী থানায় পরিণত করা হয়। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এই থানাকে পাবনা
জেলার উপজেলায় পরিণত করা হয়।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই মে তারিখে এই উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনয়নের নিশ্চিন্তপুর,
কুড়িপাড়া, সাতবাড়িয়া গ্রামের প্রায় ৩০০ জন সাধারণ মানুষকে পাকিস্তানী বাহিনী হত্যা
করে। অনুরূপ হত্যাকাণ্ড ঘটনা ঘটানো হয়েছিল ভাবনীপুর নামক গ্রামে। ১৯৭১
খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে এই অঞ্চলে পাকিস্তানী বাহিনী এবং এর দোসর রাজাকার বাহিনী
ব্যাপকভাবে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এই সময় কুখ্যাত জামাত নেতা সুবাহান মওলানা পাবনার
পাকিস্তানী বাহিনীর পৃষ্ঠপোষক হিসাবে পাক-বাহিনীকে সহায়তা করে।
সুজানগর উপজেলা সদরটি ৯টি ওয়ার্ড এবং ১২টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। এই উপজেলাটিতে রয়েছে ১০টি ইউনিয়ন, ১৯১টি মৌজা এবং ১৯৫টি গ্রাম। এই উপজেলার ইউনিয়নগুলো হলো— সুজানগর সদর, তাঁতিবন্দ, সাতবাড়িয়া, মানিকহাট, দুলাই, হাটখালী, নাজিরগঞ্জ, সাগরকান্দি, রাণীনগর ও আহম্মেদপুর।