সিলেট জেলা
বাংলাদেশের
সিলেট বিভাগের সদর জেলা। [সিলেটের ইতিহাস]
এই জেলার সদর দফতর সিলেট শহর। শহরটিতে রয়েছে ২৭টি ওয়ার্ড ও ২১০টি মহললা। আয়তন ১০.৪৯ বর্গ কি.মি.। জনসংখ্যা ২৮৫৩০৮; পুরম্নষ ৫৪.৬৮%, মহিলা ৪৫.৩২%। জনসংখ্যার ঘনবসতি প্রতি বর্গ কি.মি. ২৭২২৪ জন। শিক্ষার হার ৬৬.৯%।
ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক: ২৪°৫৩' উত্তর ৯১°৫২' পূর্ব
ভৌগোলিক অবস্থান: এর উত্তরে ভারতের খাসিয়া-জৈয়ন্তীয়া পাহাড়, দক্ষিণে মৌলভীবাজার
জেলা, পূর্বে ভারতের কাছাড় ও করিমগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা।
আয়তন: নব গঠিত সিলেট জেলার মোট আয়তন ৩,৪৯০.৪০ বর্গ কি.মি.।
তাপমাত্রা:
বার্ষিক গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩.২০ সে., সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৬০ সে., বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাত ৩৩৩৪ মি.মি.।
নদনদী: সিলেটের প্রধান ও দীর্ঘতম নদী সুরমা (৩৫০ কি.মি.), অপর বৃহৎ নদী হলো কুশিয়ারা।
হাওড়-বিল: এ জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে মোট ৮২টি হাওর-বিল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে
উল্লেখযোগ্য বিলগুলো হলো-
- সিংগুয়া বিল (১২.৬৫ বর্গ কি.মি.)
- চাতলা বিল (১১.৮৬ বর্গ কি.মি.)।
বনভূমি: সিলেটে সর্বমোট রিজার্ভ ফরেষ্ট
২৩৬.৪২ বর্গ কি.মি.। জেলার উত্তর-পূর্ব কোণে ভারতের খাসিয়া ও জৈমিত্ময়া পাহাড়ের অংশ
বিশেষ বিদ্যমান। সিলেটে বেশ কিছু ছোট ছোট পাহাড় ও টিলা রয়েছে। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য
টিলগুলো হলো
- জৈয়ন্তপুর টিলা (৫৪ মিটার),
- শারি টিলা (৯২ মি.),
- লালাখাল টিলা (১৩৫ মি.),
- দক্ষিণের টিলা শ্রেণি (৭৭.৭ মি.)
প্রশাসনিক বিভাজন: ১২টি উপজেলা নিয়ে এই জেলা গঠিত। এগুলো
হলো- জৈন্তাপুর, দক্ষিণ সুরমা, সিলেট সদর, গোপালগঞ্জ, বিশ্বনাথ, কোম্পানিগঞ্জ,
গোয়াইন ঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ওসমানী নগর, জকিগঞ্জ ও বালাগঞ্জ।
সিলেট জেলার ইতিহাস
১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মার্চ প্রথম সিলেট জেলা গঠিত
হয়। ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে এই অঞ্চল ভারতের আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪৭
খ্রিষ্টাব্দে গণভোটের মাধ্যমে সিলেটের বড় অংশ নবসৃষ্ট পূর্ব-পাকিস্তানের অন্তরভুক্ত
হয়। এই সময় এই জেলার করিমগঞ্জ, পাথারকান্দি, বদরপুর ইত্যাদি অঞ্চল সিলেট থেকে বিচ্যূত হয়ে
আসাম তথা স্বাধীন ভারতের অঙ্গীভূত হয়ে পড়ে।
সিলেট পৌরসভার সৃষ্টি ১৮৭৮ খ্রিষ্টব্দে । ১৮৯৭ সালের ১২ জুন এক মারাত্মক ভূমিকম্প গোটা শহরটিকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলে। পরবর্তীতে ধ্বংসস্তূপের ওপর গড়ে উঠে ইউরোপীয় ধাঁচের আরও সুন্দর ও আধুনিক শহর। ১৮৯০ এর দশকের শেষ ভাগে বেশ কিছু
রাস্তাঘাট তৈরি করা হয়।
১১৯১২-১৫ খ্রিষ্টাব্দে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের একটি শাখা সিলেটের সাথে সংযুক্ত হলে- দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সিলেটের বিচ্ছিন্নতার
অবসান ঘটে। চা শিল্পের কারণে বিশ শতকের প্রথম দিকে সিলেট শহরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত বিভক্তির সময় গণভোটের
মাধ্যমে সিলেট জেলা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সাথে
যুক্ত হয়। তখন প্রশাসনিকভাবে সিলেট ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের
অন্তর্ভুক্ত।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব-পাকিস্তানে চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা হিসেবে
অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
১৯৫০ ও ১৯৬০ দশকে প্রবাসী সিলেটিদের এবং
সিলেট শহর দ্রুত নগরায়ণ ঘটতে থাকে এবং বর্তমানে ও তা অব্যাহত রয়েছে।
১৯৮৩-৮৪ সালে বৃহত্তর সিলেট জেলার চারটি মহকুমাকে জেলা
হিসেবে ঘোষণা করে। এই জেলাগুলো হলো- সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ।
এই চারটি ৪টি নতুন জেলা
তখন চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ১ আগষ্ট এই চারটি
জেলাকে নতুন বিভাগীয় প্রশাসনিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করে সিলেট বিভাগ ঘোষণা করা হয়।
এই সময় সিলেট শহরটি সিলেট বিভাগের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।
১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ১ আগষ্ট সিলেট দেশের ষষ্ঠ বিভাগ হিসেবে মর্যাদা পায় এবং মূলত বৃহত্তর সিলেট জেলার সীমানাই নতুন সিলেট বিভাগের আওতাভূক্ত করা হয়।
সূত্র:
- http://www.sylhetdiv.gov.bd/