ষাট গম্বুজ মসজিদ
অন্যান্য নাম : খান জাহাম আলীর মসজিদ, খানজাহান মসজিদ।

বাংলাদেশের একটি প্রাচীন
মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে, জেলা সদ থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ঘোড়াদিঘির পূর্ব পাড়ে এই মসজিদটি অবস্থিত।

মসজিদটির স্থপতি এবং নির্মাণের সময় সম্পর্কে সুষ্পষ্টাভাবে জানা যায় না। ধারণা করা হয়, গৌড়ের সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদের শাসনামলে খান আল-আজম উলুগ খান জাহান (সংক্ষেপে খান জাহান) দক্ষিণ বাংলার জয় করার পর, তিনি বর্তমান বাগেরহাট অঞ্চলের নামকরণ করেছিলেন ‘খলিফাত-ই-আবাদ’ এবং এই সময় তিনি এই মসজিদটি তৈরি করেছিলেন। উল্লেখ্য খান জাহান মৃত্যুবরণ করেছিলেন ১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দে। এই কারণে ধারণা করা হয় এই মসজিদটি ১৪৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তৈরি করা হয়েছিল। কালক্রমে এই মসজিদটি ধ্বংসের উপক্রম হলে প্রথম ব্রিটিশ সরকার এর কিছু সংস্করণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান সরকার এবং বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময়ে এর সংস্কার করেছে। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মধ্যে বাগেরহাটকে অন্তর্ভুক্ত করে। এই কারণে এই মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণে ইউনেস্কো বিশেষ দায়িত্ব পালন করে থাকে।

আদিতে এই মসজিদটি প্রাচীর বেষ্টিত ছিল। প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য পূর্ব ও উত্তর দিকে দুটি প্রবেশদ্বার ছিল। এর ভিতরে পূর্ব-দিকের দ্বারটি পুনরায় নির্মাণ করা হলেও, উত্তর দিকের দ্বারটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

এই মসজিদটি ষাটগম্বুজ বলা হলেও মূলত এর চতুষ্কোণ বুরুজের উপর দৃশ্যমান ৪টি গম্বুজসহ মোট ৮১টি গম্বুজ আছে। মসজিদটির সামনে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। পরিচিতিটি নিচে দেওয়া হলো।


মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরে দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকের প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮·৫ ফুট পুরু। এর গঠন অনেকটা বাংলা চৌচালা ঘরের মতো। এর পূর্ব দেয়ালে ১১টি বিরাট আকারের খিলানযুক্ত দরজা আছে। মাঝের দরজাটি অন্যগুলোর চেয়ে বড়। এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে আছে ৭টি করে দরজা। মসজিদের ৪ কোণে ৪টি মিনার আছে। এগুলোর নকশা গোলাকার এবং এরা উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে। এদের কার্ণিশের কাছে বলয়াকার ব্যান্ড ও চূঁড়ায় গোলাকার গম্বুজ আছে। মিনারগুলোর উচ্চতা ছাদের কার্নিশের চেয়ে বেশি। সামনের দুটি মিনারে প্যাঁচানো সিঁড়ি আছে এবং এখান থেকে আজান দেবার ব্যবস্থা ছিলো। এদের একটির নাম রওশন কোঠা, অপরটির নাম আন্ধার কোঠা। মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ আছে। এগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে ৬ সারিতে অবস্থিত এবং প্রত্যেক সারিতে ১০টি করে স্তম্ভ আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথর কেটে বানানো, শুধু ৫টি স্তম্ভ বাইরে থেকে ইট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এই ৬০টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ।

 
মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে ১০টি মিহরাব আছে। মাঝের মিহরাবটি আকারে বড় এবং কারুকার্যমণ্ডিত। এই প্রধান মিহরাবের দক্ষিণে ৫টি ও উত্তরে ৪টি মিহরাব আছে। শুধু মাঝের মিহরাবের ঠিক পরের জায়গাটিতে উত্তর পাশে যেখানে ১টি মিহরাব থাকার কথা সেখানে আছে ১টি ছোট দরজা।


সূত্র : http://www.banglapedia.org/httpdocs/HTB/105118.htm