মানচিত্র : বাংলাপেডিয়া। |
বাগেরহাট
বাংলাদেশের
খুলনা বিভাগের একটি জেলা।
ভৌগোলিক
স্থানাঙ্ক: ২১°৪৯´ থেকে ২২°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩২´ থেকে ৮৯°৯৮´ পূর্ব
দ্রাঘিমাংশ।
ভৌগোলিক অবস্থান:
জেলার
উত্তরে গোপালগঞ্জ এবং নড়াইল জেলা, দক্ষিণে
বঙ্গোপসাগর, পূর্বে গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলা, পশ্চিমে খুলনা জেলা।
আয়তন: ৩৯৫৯.১১ বর্গ কিমি।
এ
প্রশাসনিক বিভাজন
বর্তমানে এই জেলাটি ৯টি উপজেলায় বিভক্ত। এই
উপজেলাগুলো হলো—কচুয়া,
চিতলমারী, ফকিরহাট, বাগেরহাট সদর, মংলা, মোরেলগঞ্জ, মোল্লাহাট, রামপাল ও
শরণখোলা।
প্রধান নদী: ভৈরব, দড়াটানা, মধুমতি, বলেশ্বর, চিত্রা, পশর, মংলা, ভোলা,
ঘষিয়াখালী, পানশুচি, বিষখালি, শেলা গঙ্গা।
বাগেরহাট-এর নামকরণ
বাগের হাটের নামকরণ নিয়ে নানারকম গল্প আছে, এর কোনটি সত্য তা যথাযথভাবে বলা যায়
না। এই গল্পগুলো হলো–
W.W, Hunter-এর রচিত Statistical Accoount of Bengal, Vol. II, District of Nadiya & Jessor, 1875' গ্রন্থানুসারে জানা যায়, এখানে প্রতি রবিবার ও বুধবার হাট বসতো। সেসময় এই হাটকে গঞ্জ বলা হতো। কাড়াপাড়া জমিদার বংশের মাধব নামক এক ব্যক্তির নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছিল মাধবগঞ্জ। এই বর্ণনা থেকে বাগেরহাট নামকরণের কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না, কিন্তু অনুমান করা যায়, এর আদি নাম মাধবগঞ্জ ছিল।
বাখরগঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা আগা বাকেরের নামানুসারে এই স্থানের বা হাটের নামকরণ করা হয়েছিল বাকেরহাট। কালক্রমে তা বাগেরহাট-এ পরিণত হয়।
হযরত খানজাহান(রঃ) এর
প্রতিষ্ঠিত 'খলিফাত-ই-আবাদ’ এর বিখ্যাত ‘বাগ’ অর্থ বাগান, এ অঞ্চলে এতই সমৃদ্ধি
লাভ করে যে, তা থেকেই হয়ে দাঁড়িয়েছে বাগের আবাদ তথা ‘বাগেরহাট’।
প্রচুর গাছের সূত্রে এই স্থানকে বাগান অর্থে বাগেরহাট নামকরণ করা হয়েছিল।
সুন্দরবনের বাঘ থেকে বাঘেরহাট হয়, পরে তা লোকমুখে বাগেরহাট-নামে পরিণত হয়।
ভৈরব নদী কচুয়ার দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় যে স্থান বাঁক নিয়েছে, তার বিপরীত দিকে রয়েছে প্রাচীন নাগেরবাজার। অনেকের ধারণা এখানে পুরানো হাট বসতো। নদীর বাঁকে অবস্থিত বলে এ হাটের নাম হয়েছিল বাঁকের হাট। পরে তা বাগেরহাট-এ পরিণত হয়।
বাগেরহাটের ইতিহাস
এক সময় বাগেরহাট অঞ্চল ছিল
সুন্দরবন-
এর অংশ। এই অঞ্চলে অনার্যজাতির লোকেরা
আদিবসতি স্থাপন করেছিল। এরা ছিল মূলত অরণ্যচারী। আর্যদের বঙ্গদেশে আসার পর,
বঙ্গদেশের উত্তরাঞ্চলেই তাদের আনাগোনা ছিল। কালক্রমে এই অঞ্চলে ছোটো ছোটো হিন্দু
শাসিত এলাকায় বিভক্ত হয়ে যায়।
খলজি শাসন
(১২০৪-১২২৭ খ্রিষ্টাব্দ) শাসনামলেও বঙ্গদেশের দক্ষিণাঞ্চল মুসলামনদের অধিকারে
আসে নি। খুলনার দক্ষিণাঞ্চলে
সামসুদ্দিন
ইলিয়াস শাহ (১৩৪২-১৩৫৭ খ্রিষ্টাব্দ)-এর শাসনামলের কিছু মুদ্রা পাওয়ার সূত্রে
অনেকে অনুমান করেন যে, এই সময়ে দক্ষিণাঞ্চল মুসলমানদের অধিকারে এসেছিল।
ইলিয়াস শাহী রাজবংশ প্রথম পর্যায় শেষ হয় ১৪১৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এবং এরপর শুরু হয় রাজা গণেশের
রাজত্বকাল। বাংলার মুসলমান দরবেশরা হিন্দু রাজার বিরুদ্ধে
মুসলমান প্রজাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলেন। ইতিমধ্যে
১৪১২-১৪ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে হজরত
খানজাহান আলী (রঃ) তাঁর অনুগত শিষ্যদের নিয়ে ঝিনাইদহের
বাগবাজারের আস্তানা গড়ে তোলেন এবং সেখানে ইসলাম প্রচার
শুরু করেন। অচিরেই এই অঞ্চলে বহু লোক ইসলাম গ্রহণ করেন। এরা রাজার চেয়েএই ইসলাম
প্রচারকের অনুগত ছিল অনেক বেশি। রাজা গণেশের বিরুদ্ধে দরবেশদের বিদ্রোহের সময় খানজাহান
আলী অংশগ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়। কথিত আছে, রাজা গণেশের সৈন্যরা এই বিদ্রোহীদের দমন করার
জন্য সৈন্য পাঠালে, তারা খানজাহান আলীর অনুগত শিষ্যদের কাছে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায়।
যতদূর জানা যায়, এর কিছু পরে খানজাহান আলী তাঁর শিষ্যদের নিয়ে যশোর জেলার বারবাজার হয়ে ভৈরব নদী অতিক্রম করে বাগেরহাটে
পৌঁছেছিলেন। বাগেরহাট অঞ্চলে অবস্থানকালে তিনি স্থানীয় মানুষের
কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি এই অঞ্চলের পানীয় জলের অভাব দূর করার জন্য বহু
দীঘি খনন করেন। এই সময়ে এখানে ষাটগম্বুজসহ অসংখ্য মসজিদ, অগণিত
হাট-বাজার তৈরি করেন।
ইলিয়াস
শাহী রাজবংশ, দ্বিতীয় পর্যায়ে (১৪৪২-১৪৮৭ খ্রিষ্টাব্দ) বাংলার সিংহাসন অধিকার
করেন নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ (১৪৪২-১৪৫৯)। তখন হযরত খানজাহান(রঃ) এ অঞ্চলের নামকরণ করলেন ‘খলিফাত-ই-আবাদ’ বা প্রতিনিধির অঞ্চল। তাঁর মাজারগাত্রে উৎকীর্ণ
শীলালিপি হতে জানা যায় ২৬ জিলহজ্ব ৮৬৩ হিজরী (১৪৫৯ খ্রিঃ) তে তিনি
মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
হযরত খানজাহান আলী (রঃ)
এর মৃত্যুর পর
হুসেন শাহী রাজবংশের শাসকরা (১৪৯৩-১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দ) এ অঞ্চল শাসন করতেন। অনেকে
মনে করেন বাংলা সুলতান
নসরৎ শাহ
টাকশাল বাগেরহাট শহরের নিকটবর্তী মিঠাপুকুরের নিকটে অবস্থিত ছিল। উল্লেখ্য
মিঠাপুকুর পাড়ে সে আমলের একটি মসজিদ আছে।
বঙ্গদেশে ইংরেজদের অধিকারে আসার পর, এই অঞ্চল প্রথমে
ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং পরে ব্রিটিশ শাসনে চলে যায়। ১৭৮৬
খ্রিষ্টাব্দে লর্ড কর্ণওয়ালিসের শাসন আমলে যশোরকে জেলায় পরিণত করা হয়। ১৮৪২
খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত খুলনা ছিল যশোর জেলার একটি মহকুমা, এবং বাগেরহাট ছিল খুলনা
মহকুমার একটি থানা।
১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে মোড়েল উপাধিধারী দু’জন ইংরেজ বাগেরহাটে মোড়েলগঞ্জ নামক একটি
বন্দর স্থাপন করেন। ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে নভেম্বর ‘মোড়েল-রহিমুল্লাহ’ নামক এক
রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। উল্লেখ্য এই সময় সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র খুলনার ডেপুটি
ম্যাজিস্ট্রেট। সেই সংঘর্ষের কারণেই তিনি প্রশাসনিক প্রয়োজনে বাগেরহাটে একটি মহকুমা
স্থাপন করার সুপারিশ করেন। এই সুপারিশের সূত্রে ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে বাগেরহাট
মহকুমা হিসেবে যশোর জেলার অন্তর্গত হয়। ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে খুলনা, সাতক্ষিরা ও
বাগেরহাট মহকুমা নিয়ে খুলনা জেলা গঠিত হয়। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে ফেব্রুয়ারি
বাগেরহাট মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়।
বাগেরহাটের দর্শনীয় স্থান
খাঞ্জেলী দীঘি
অযোধ্যা মঠ/কোদলা মঠ
মংলা বন্দর
রেজা খোদা মসজিদ
জিন্দা পীর মসজিদ
ঠান্ডা পীর মসজিদ
সিংগাইর মসজিদ
বিবি বেগুনি মসজিদ
চুনাখোলা মসজিদ
নয় গম্বুজ মসজিদ
কোদাল মঠ
রণবিজয়পুর মসজিদ
দশ গম্বুজ মসজিদ
সুন্দরবন এর করমজল
সূত্র :
বিবর্তিত বাগেরহাট। মোহাম্মদ রেজওয়ানউল হক। গতিধারা, ঢাকা। শ্রাবণ
১৪০৯ বঙ্গাব্দ।
http://www.bagerhat.gov.bd/node/1079482
http://www.banglapedia.org/