খিলজী শাসন
১২০৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বখতিয়ার খিলজী নামক জনৈক তুর্কি সেনাপতি আকস্মিকভাব সেনবংশের রাজা লক্ষ্মণসেন (১১৭৯-১২০৬ খ্রিষ্টাব্দ)-এর অস্থায়ী রাজধানী নদীয়া আক্রমণ করে দখল করে নেন। এই সময়  লক্ষ্মণসেন পালিয়ে পূর্ববঙ্গে আশ্রয় নেন। এই সূত্রে বাংলাদেশের খিলজী শাসনের সূত্রপাত হয়। এই ধারায় যে কয়জন সুলতানের নাম পাওয়া যায়, তাঁরা হলেন-

হুসাম উদ্দীন আইওয়াজ ছিলেন গৌড়ের স্বাধীন সুলতান। ১২২৫ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লীর সুলতান লতুৎমিস বাংলা ও বিহার দখলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বিহারে উভয় বাহিনী মুখোমুখী হলে শান্তি চুক্তি হয়। এই চুক্তি বলে, আইওয়াজ দিল্লীর অনুগত্য স্বীকার করে নেন। ফলে বাংলার শাসনকর্তা হিসেবে তিনি থেকেই যান। লতুৎমিস  দিল্লীতে ফিরে গেলে, আইওয়াজ পুনরায় স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই অবস্থায় লতুৎমিস তাঁর পুত্র নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি সেনাবাহিনী পাঠান। ১২২৭ খ্রিষ্টাব্দে উভয় বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হলে, আইওয়াজ সপরিবারে নিহত হন। এরপর বাংলার শাসনক্ষমতা লাভ করেন নাসির উদ্দিন। এই সময় নাসিরুদ্দিন বাংলার সাথে অযোধ্যাকে যুক্ত করেছিলেন। ১২২৯ খ্রিষ্টাব্দে নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর পর,  হুসাম উদ্দীন আইওয়াজ-এর বল্কা নামক এক অনুচর নিজেকে স্বাধীন সুলতান হিসেবে ঘোষণা দেন। ফলে ১২৩০ খ্রিষ্টাব্দে লতুৎমিস পুনরায় বাংলা আক্রমণ করেন। যুদ্ধে বল্কা পরাজিত ও নিহত হন। এরপর আলাউদ্দিন জনিকে বাংলা শাসনকর্তা নিযুক্ত করে আবার দিল্লীতে ফিরে যান। মাঝের এই বল্কা'র এই বিদ্রোহ ছাড়া বাংলাদেশে ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তুর্কি শাসনই বলবৎ ছিল। [দ্রষ্টব্য: বাংলার তুর্কি শাসন]


সূত্র :
বাংলাদেশের ইতিহাস/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।