আলী মার্দানলজি
ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি'র অন্যতম সেনাপতি। ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দে গৌড় আক্রমণের সময় তিনি বখতিয়ার খলজি'র অন্যতম সেনাপতি ছিলেন। ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বত অভিযানের পর বখতিয়ার খলজি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মৃত্যুবরণ করেন। সেসময়ের অনেকেরই ধারণা হয় যে, আলী মার্দান বখতিয়ার খলজিকে হত্যা করেছেন। এই কারণে বখতিয়ার খলজির অপর অনুচর মহম্মদ সিরান খলজি দ্রুত দেবকোটে ফিরে এসে আলী মার্দানকে আক্রমণ করেন। যুদ্ধে আলী মার্দান পরাজিত ও বন্দী হন। এরপর ১২০৭ খ্রিষ্টাব্দে লক্ষ্মণাবতীর প্রভাবশালী আমিররা মহম্মদ সিরান খলজিকে গৌড়ের রাজা হিসেবে নির্বাচিত করেন।

দেশে শান্তি ফিরে আসার পর, মহম্মদ সিরান খলজি আলী মার্দান খলজিকে মুক্ত করে দেন। মুক্তি পাওয়ার পর আলী মার্দান দিল্লীতে কুতুবুদ্দিন আইবকের রাজদরবারে যান এবং বাংলা আক্রমণের জন্য উত্তেজিত করতে থাকেন। অবশেষে কুতুবুদ্দিন বাংলা দখলের জন্য সৈন্য পাঠান। এই সময় তাঁর আমিরদের বিশ্বাস ঘাতকতায় কুতুবউদ্দিনের সৈন্যরা জয়লাভ করতে সক্ষম হয়। ১২০৮ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লীর সুলতানের মনোনীত প্রার্থী হুসাম উদ্দীন আইওয়াজ গৌড়ের রাজা হন। এই সময় আলী মার্দান দিল্লীতে কুতুবুদ্দিন-এর সাথে থেকে নানাভাবে সাহায্য করেন। বিশেষ করে কুতুবুদ্দিনের গজনী অভিযানে তিনি তাঁর প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেন। এই সূত্রে কুতুবুদ্দিন তাঁকে বাংলার শাসন কর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন।

১২১০ খ্রিষ্টাব্দে আলী মার্দান এক বিরাট সৈন্যবাহিনী নিয়ে বাংলার অভিমুখে রওনা দেন। কিন্তু হুসাম উদ্দীন আইওয়াজ তাঁর সাথে যুদ্ধ করার পরিবর্তে, তাঁকে অভ্যর্থনা করে লক্ষ্মণাবতীতে নিয়ে আসেন। ফলে আলী মার্দান গৌড়ের নতুন শাসনকর্তা হন। ১২১০ খ্রিষ্টাব্দে  কুতুব উদ্দিনের  মৃত্যুর পর, তাঁর উত্তরাধিকারদের মধ্যে গোলোযোগ সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে আলী মার্দান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ক্রমে ক্রমে তিনি অত্যাচারী সুলতান হয়ে উঠেন, ফলে বাংলার খলজি আমিররা যড়যন্ত্র করে ১২১৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে হত্যা করে এবং নতুন সুলতান হিসেবে হুসাম উদ্দীন আইওয়াজ (সিংহাসনে বসেন।


সূত্র :
বাংলাদেশের ইতিহাস/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।