হুসাম উদ্দিন আইওয়াজ
খলজি শাসন (১২০৫-১২২৭ খ্রিষ্টাব্দ) আমলের সুলতান।

১১৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ভাগ্যান্বেষে ভারতবর্ষে আসেন। এরপর দিল্লীর সুলতান কুতুব উদ্দিনের প্রিয়পাত্র হয়ে ‌উঠেন। এরপর তিনি ধীরে ধীরে বাংলার স্বাধীন সুলতান হিসেবে রাজত্ব করেন।

১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বত অভিযানের পর বখতিয়ার খলজি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মৃত্যুবরণ করেন। সেসময়ের অনেকেরই ধারণা হয় যে, আলী মার্দান খলজি বখতিয়ার খলজিকে হত্যা করেছেন। এই কারণে বখতিয়ার খলজির অপর অনুচর দ্রুত দেবকোটে ফিরে এসে আলী মার্দান খলজিকে আক্রমণ করেন। যুদ্ধে আলী মার্দান খলজি পরাজিত ও বন্দী হন। ১২০৭ খ্রিষ্টাব্দে লক্ষ্মণাবতীর প্রভাবশালী আমিররা মহম্মদ সিরান খলজিকে গৌড়ের রাজা হিসেবে নির্বাচিত করেন।

মহম্মদ সিরান খলজি অত্যন্ত সুচতুর এবং বিচক্ষণ ছিলেন। তিনি কৌশলে অন্যান্য আমিরদের সন্তুষ্ট করে রাজত্ব শুরু করেন। নিজেকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা না দিয়ে দিল্লীর সুলতানদের আনুগত্য ধরে রাখতে সক্ষম হন। দেশে শান্তি ফিরে আসার পর, তিনি আলী মার্দান খলজিকে মুক্ত করে দেন। মুক্তি পাওয়ার পর আলী মার্দান
দিল্লীতে কুতুবুদ্দিন আইবকের রাজদরবারে যান এবং বাংলা আক্রমণের জন্য উত্তেজিত করতে থাকেন। অবশেষে কুতুবুদ্দিন আইবকের বাংলা দখলের জন্য সৈন্য পাঠান। এই সময় তাঁর আমিরদের বিশ্বাস ঘাতকতায় কুতুবুদ্দিন আইবকের সৈন্যরা জয়লাভ করতে সক্ষম হয়। ১২০৮ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লীর সুলতানের মনোনীত প্রার্থী হুসাম উদ্দিন আইওয়াজ গৌড়ের রাজা হন। এই সময় আলী মার্দান দিল্লীতে কুতুবুদ্দিন আইবকের সাথে থেকে নানাভাবে সাহায্য করেন। বিশেষ করে কুতুবুদ্দিন আইবকের গজনী অভিযানে তিনি তাঁর প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেন। এই সূত্রে কুতুবুদ্দিন আইবক তাঁকে বাংলার শাসন কর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। ১২১০ খ্রিষ্টাব্দে আলী মার্দান এক বিরাট সৈন্যবাহিনী নিয়ে বাংলার অভিমুখে রওনা দেন। কিন্তু হুসাম উদ্দিন তাঁর সাথে যুদ্ধ করার পরিবর্তে অভ্যর্থনা করে লক্ষ্মণাবতীতে নিয়ে আসেন। ফলে আলী মার্দান গৌড়ের নতুন শাসনকর্তা হন। ১২১০ খ্রিষ্টাব্দে  কুতুবুদ্দিন আইবকের মৃত্যুর পর, তাঁর উত্তরাধিকারদের মধ্যে গোলোযোগ সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে আলী মার্দান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ক্রমে ক্রমে তিনি অত্যাচারী সুলতান হয়ে উঠেন, ফলে বাংলার খলজি আমিররা যড়যন্ত্র করে তাঁকে হত্যা করে এবং নতুন সুলতান হিসেবে হুসাম আইওয়াজ সিংহাসনে বসেন।

১২১৩ খ্রিষ্টাব্দে নতুন সুলতান হিসেবে নাম গ্রহণ করেন হুসাম-উদ্দিন আইওয়াজ গিয়াস উদ্দিন আইওয়াস। তিনি নিজের নামে মুদ্রা প্রচলন করেন। তিনি নানাবিধ সংস্কার করে রাজ্যের ভিতর শান্তিস্থাপন করতে সমর্থ হন।

১২২৫ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লীর সুলতান ইলতুৎমিস বাংলা ও বিহার দখলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বিহারে উভয় বাহিনী মুখোমুখী হলে শান্তি চুক্তি হয়। এই চুক্তি বলে, আইওয়াজ দিল্লীর অনুগত্য স্বীকার করে নেন। ফলে বাংলার শাসনকর্তা হিসেবে তিনি থেকেই যান। ইলতুৎমিস দিল্লীতে ফিরে গেলে, আইওয়াজ পুনরায় স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই অবস্থায় ইলতুৎমিস তাঁর পুত্র নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি সেনাবাহিনী পাঠান। ১২২৭ খ্রিষ্টাব্দে উভয় বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হলে, আইওয়াজ সপরিবারে নিহত হন। এরপর বাংলার শাসনক্ষমতা লাভ করেন নাসির উদ্দিন।


সূত্র :
বাংলাদেশের ইতিহাস/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।