লুম্বিনী
নেপালের রূপানদেহি জেলায় অবস্থিত একটি বৌদ্ধ তীর্থক্ষেত্র। আনুমানিক ৫৬৭-৫৬৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে গৌতম বুদ্ধ এই স্থানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বৌদ্ধধর্মগ্রন্থ সুত্তা নিপোতায় বলা হয়েছে শাক্যদের একটি গ্রাম লুম্বিনিয়া জনপদে গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয়। হিন্দু বর্ণ অনুসারে, শাক্যরা ছিলেন ক্ষত্রিয়। বৌদ্ধ পুরাণ অনুযায়ী গৌতম বুদ্ধের মা মায়াদেবী শাক্য রাজধানী কপিলাবস্তু থেকে তার পৈতৃক বাসগৃহে যাচ্ছিলেন।

পথিমধ্যে লুম্বিনী গ্রামের একটি উদ্যানের ভিতর, একটি শালগাছের নিচে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর জন্মের আগে তাঁর মা মায়াদেবী এখানে একটি দীঘিতে স্নান করেন। গৌতমের জন্মের পর তাঁকেও এই দীঘিতে স্নান করানো হয়। এই কারণে এই জলাশয়টিকে পবিত্র পুষ্করিণী মান্য করা হয়। লুম্বিনীতে পরে মায়াদেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই মন্দিরের একটি স্থানকে গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছ। কালক্রমে
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান হিসেবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। অযত্নের ফলে এই মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি অনুরক্ত হয়ে সম্রাট অশোক  ২৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এই তীর্থভূমি পরিদর্শনে এসেছিলেন। তিনি এই গ্রামের প্রজাদের রাজস্ব এক-অষ্টমাংশ হ্রাস করেছিলেন। তিনি অশোকের আগমনের স্মারক হিসেবে এখানে একটি অশোক স্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে অশোক স্তম্ভকে কেন্দ্র করেই এই ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক স্থানটি পুনরাবিষ্কার করা হয়। ষষ্ঠ শতকে বিখ্যাত চীনা সন্ন্যাসী ও পর্যটক ফা হিয়েন ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শনের সময় কপিলাবস্তু ও লুম্বিনীতে আসেন। তিনি তাঁর সুবিখ্যাত ভ্রমণকাহিনীতে সম্রাট অশোকের স্মারক স্তম্ভের বর্ণনা দেন এবং গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান হিসেবে লুম্বিনির উল্লেখ করেন।  এই স্তম্ভটি তৈরি করা হয়েছিল একটি অখণ্ড পাথর দিয়ে। এর শীর্ষভাগে ছিল অশ্বমূর্তি। তবে এই অশ্বমূর্তিটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল কোনো এক সময়।

১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে নেপালের তৎকালীন শাসক খাদগা সোমেশ্বর রানার উদ্যোগে নেপালী প্রত্নতত্ববিদরা ফা হিয়েনের ভ্রমণকাহিনী,বৌদ্ধপুরাণ ও ইতিহাসগ্রন্থ সুত্ত নিপোতা,বৌদ্ধ ইতিহাস গ্রন্থ মহাবংশসহ অন্যান্য গ্রন্থ এবং বিভিন্ন প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনের সাহায্যে অশোক স্তম্ভটি খুঁজে বের করেন। আর এর মাধ্যমেই গৌতম বুদ্ধের জন্ম স্থানটি নির্দেশ করা সম্ভব হয়। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও অনেক অশোক স্তম্ভ আবিষ্কৃত হয়েছে। উল্লেখ্য অশোক তাঁর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী স্ত্রী বিদিশার পরামর্শে সারনাথে গৌতম বুদ্ধের দীক্ষাস্থলকে স্মরণী করে রাখার জন্য একটি স্তম্ভ স্থাপন করেন। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে পুরাতত্ত্ব বিভাগের খনন কার্যের সময় এই অশোকস্তম্ভটি উদ্ধার করা হয়। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকার এই স্তম্ভের চিত্রকেকে রাজকীয় প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছে।


এখানে অসংখ্য বৌদ্ধ মন্দির রেয়েছে। এর ভিতরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মন্দিরটি হলো 'মায়াদেবীর মন্দির'। এছাড়া এখানে 'লুম্বিনী ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট' নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো লুম্বিনীকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত করা