আর্তেমিসের মন্দির

তুরস্কের পার্ক অবস্থিত মন্দিরের মডেল

গ্রিক দেবী আর্তেমিসের প্রার্থনা-মন্দির। খ্রিষ্ট-পূর্ব ৫৫০ অব্দের দিকে বর্তমান তুরস্কের এ্যাফেসস নামক প্রাচীন নগরীতে এই মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, তুরস্কের বন্দর নগরী ইজমির ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এই এ্যাফেসাস নগরী ছিল। ১২০ বৎসরের একটি প্রজেক্ট হিসাবে এর তৈরি করা শুরু করেছিলেন লিডিয়ার রাজা ক্রোয়েসাস। এটি তৈরি হওয়ার পর প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যের একটি স্থাপত্য হিসাবে স্বীকৃতি পায়।

এই মন্দিরটি ছিল ৪৪০ ফুট লম্বা এবং ২৬০ ফুট প্রশস্ত। পুরো মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল উৎকৃষ্ট মার্বেল পাথর দিয়ে। এতে মোট ৬০ ফুট উচ্চতার ১২৭টি স্তম্ভ ব্যবহার করা হয়েছিল। এ ছাড়া এর ভিতর ভাগ অলঙ্করণ করা হয়েছিল মূল্যবান চিত্রকর্ম, সোনা ও রূপার কারুকার্য দ্বারা।

খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫৬ অব্দের ২০-২১ জুলাই তারিখে হেরোস্ট্রাটাস নামক এক যুবক এই মন্দিরে আগুন ধরিয়ে ধ্বংস করে দেন। অতি চমৎকার একটি স্থাপত্য ধ্বংস করলে তাঁর নাম ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হবে, এই ধারণা থেকে তিনি এই মন্দিরটি ধ্বংস করেছিলেন। কিন্তু ক্ষিপ্ত এ্যাফেসাসবাসীরা হেরোস্ট্রাটাস নাম লিপিবদ্ধ না করার প্রতীজ্ঞা করলেও, স্ট্রাবো নামক প্রখ্যাত গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোস্ট্রাটাস তা লিপিবদ্ধ করেন।

পরবর্তী সময়ে গ্রিক বীর আলেকজান্ডার এই মন্দিরটির সংস্কারের জন্য অর্থ প্রদানের প্রস্তাব দিলে, এ্যাফেসাসবাসীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩ অব্দে এই মন্দিরটির সংস্কার করা হয়। ২৬২ খ্রিষ্টাব্দে গথদের আক্রমণের সময় এই মন্দিরটি পুনরায় ধ্বংস হয়। এরপর এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ খ্রিষ্ট-ধর্মে দীক্ষিত হলে, মন্দিরটি গৌরব হারিয়ে ফেলে। খ্রিষ্টানরা এই মন্দির ধ্বংস করে এবং এর পাথর খুলে নিয়ে অন্যান্য স্থাপনায় ব্যবহার করে। ফলে এই মন্দিরটি পুরোপুরি হারিয়ে যায়। ১৮৬৯ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের তত্ত্বাবধানে এই মন্দিরটির অবস্থান ও কিছু ধ্বংসাবশেষ পুনরায় আবিষ্কৃত হয়েছে।