গ্রিক ভাস্কর্য Leochares এর তৈরিকৃত মূর্তির রোমান কপি 'Diana of Versailles,'

আর্তেমিস
ি Ἄρτεμις>ইংরেজি Artemis
রোমান সমতুল্যা দেবী
Diana

গ্রিক শিকার, বন্যতা, শিশুর জন্ম, কৌমার্যের দেবী
তরুণীদের রক্ষাকর্তী আবার স্ত্রীলোকের রোগ প্রদানকারী এবং আরোগ্যকারী দেবী হিসেবেও এই দেবীর নাম পাওয়া যায়। তাঁর আঘাত করার জন্য তাঁর অস্ত্র ছিল তীর-ধনুক। হেলেনিক যুগের পরে এই দেবীর উদ্দেশ্যে হরিণ ও সাইপ্রেস গাছের ডালপাল উৎসর্গ করা হতো। এই দেবীর জন্য খ্রিষ্ট-পূর্ব ৫৫০ অব্দের দিকে বর্তমান তুরস্কের এ্যাফেসস নামক প্রাচীন নগরীতে এই মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছিল। এটি তৈরি হওয়ার পর প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যের একটি স্থাপত্য হিসাবে স্বীকৃতি পায়। এই মন্দিরটিকে আর্তেমিসের মন্দির নামে অভিহিত করা হয়। উল্লেখ্য এই মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে গেছে।

লেটোর সাথে জিউস-এর মিলনের ফলে লেটো গর্ভবতী হন। এই সংবাদ জেনে হেরা লেটোর শাস্তি প্রদানের জন্য একটি দৈতকার অজগর সাপ পাঠান। লেটো হেরা'র ভয়ে পালিয়ে ডেলসের নিকটবর্তী অর্টিজিয়াতে গিয়ে লুকিয়ে থাকেন। সাতমাস গর্ভধারণের পর লেটো প্রথমে জন্ম দেন আর্তিমিসকে। পরে ইনি একটি ছোট প্রণালী পার হয়ে ডেলিন পর্বতের কাছে পৌঁছান। সেখানে নয়দিন গর্ভযন্ত্রণা ভোগ করার পর একটি জলপাই ও খেজুর গাছের মধ্যবর্তী স্থানে এ্যাপোলোর জন্ম দেন। এই কারণে আর্তেমিসকে এ্যাপোলোর জমজ বোন বলা হয়। কোনো কোনো মতে এঁদের জন্ম হয়েছিল প্যাক্সিমাডিয়াতে। উভয় সন্তানকে জন্মদানের পর লেটো  হেরা'র ভয়ে এ্যাপোলো ও আর্তেমিসের প্রতিপালনের ভার থেমিস-এর কাছে অর্পণ করেন।

ক্যালামাকাস-এর কবিতা থেকে জানা যায় তিন বৎসর বয়সে জিউস কোলে বসে ছয়টি আশির্বাদ দাবি করেছিলেন। এব জিউস তা মঞ্জুর করেছিলেন। এই ছয়টি আশির্বাদের সূত্রে তিনি চির কুমারী ছিলেন, তিনি Phaesporia (আলোক প্রদায়িনী) হিসেব চিহ্নিত হতেন। শিকারের জন্য সর্বদা তীরধনুক বহন করতেন।

লেটো এবং তার সন্তানদের ক্ষতি করার জন্য ইনি হেরা একটি অজগর সাপ পাঠালে, এ্যাপোলো সাপটিকে  পরাজিত করেন। সাপটি আহত হয়ে ডেলফি ধরিত্রী মাতার মন্দিরে পালিয়ে যান। এ্যাপোলো এই সাপটির অনুসরণ করে ডেলফিতে এসে সাপটিকে হত্যা করেন। এই সাপটির নামানুসারে এই শহরের নাম রাখা হয়- ডেলফিন (Delphyne)। ধরিত্রী মাতা জিউস-র কাছে গিয়ে এ্যাপোলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে জিউস এ্যাপোলোকে ডেলফির মন্দিরে গিয়ে আত্মশুদ্ধির জন্য এবং সেখানে পাইথন ক্রীড়ায় অংশ করতে আদেশ দেন। এ্যাপোলো জিউস-এর এই আদেশ অমান্য করে আগিয়ালেয়াতে (Aigialaea) পরিশুদ্ধের জন্য যান। সেখানে তিনি তাঁর বোন আর্তেমিসের সাথে কিছুদিন কাটান।

এরপর এ্যাপোলো গ্রিসে ফিরে আসেন। ইনি প্রথমে খুঁজে বের করেন ছাগল-পাযুক্ত আর্কেডিয়ান দেবতা
প্যানকে। ইনি প্যানকে খুশি করে ডেলফির মন্দির দখল করেন। তারপর ইনি সেখানকার মন্দিরে নিজস্ব পুরোহিত নিয়োগ করেন। এ্যাপোলোর মা লেটো এই সংবাদ শুনে আর্তেমিসের সাথে করে ডেলফিতে আসেন। তিনি কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে ইচ্ছা করলে, টাইটাস (Titus) নামক এক দৈত্য তাতে বাধা দেয়। এই বিষয়টি যখন এ্যাপোলো  ও আর্তেমিস শুনলেন, তখন একযোগে এই দৈত্যকে আক্রমণ করে তীরের আঘাতে হত্যা করলেন।

কুমারী থাকার কারণে বহু মানুষ ও দেবতা তাঁর প্রতি অনুরক্ত ছিল। কিন্তু আর্তেমিস ওরিয়ন নামক একজন শিকারীকে ভালোবেসেছিলেন। দুর্ঘটনা বসত ওরিয়নকে তিনি হত্যা করে ফেলেছিলেন। অনেকের মতে ওরিয়নকে হত্যা করেছিলেন গেইয়া। আলফেয়ুজ নামক এক নদী দেবতা তাঁকে ভালোবেসেছিলেন। কিন্তু আলফেয়ুজ অচিরেই বুঝে গিয়েছিলেন যে, স্বাভাবিক প্রেমের সূত্রে আর্তেমিজকে পাওয়া যাবে না। তাই তিনি আর্তেমিজকে অপহরণের উদ্যোগ নেন। আর্তেমিস বিষয়টি বুঝতে পেরে নিজের মুখকে মাটির প্রলেপ দিয়ে এমন ঢেকে রেখেছিলেন যে, আলফেয়ুজ আর্তেমিসকে চিনতে না পেরে ফিরে যান। অন্যমতে আলফেয়ুজ আর্তেমিসের সহচরী আরেথুজাকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে, আর্তেমিস তাকে রক্ষা করেছিলেন। একবার সিপ্রিয়োটস নামক একটি বালক আর্তেমিসকে স্নানরতা অবস্থায় দেখে ফেলেন এবং তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এতে আর্তেমিস ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে বালিকাতে রূপান্তরিত করে দেন।

এডোনিস নামক এক শিকারী আর্তেমিসের চেয়ে ভালো শিকরী ছিলেন। এই ঈর্ষা থেকে আর্তেমিস তাঁকে হত্যা করেছিলেন। অন্যমতে আর্তেমিসে প্রিয় পাত্র হিপ্পোলাইটাস-কে এডোনিস হত্যা করেছিল। এই কারণে আর্তেমিস এডোনিসকে হত্যা করে প্রতিশোধ নিয়েছিল।

গ্রিক সমুদ্র দেবতা পোসেইডোন-এর ঔরসে ইফিমেডিয়ার গর্ভে জমজ পুত্র ওটুস এবং ইফাইলেটেসকে একত্রে এ্যালোয়াডেই নামে অভিহত করা হয়। এরা কালক্রমে শক্তিশালী হয়ে উঠলে  দেবতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এক পর্যায়ে এরা হেরা এবং আর্তেমিসকে অধিকার করার উদ্যোগ নেয়। এই দুই ভায়ের ভিতর ওটা পছন্দ করতো হেরাকে আর ইফাইলেটেস পছন্দ করতো আর্তেমিস-কে। এই দুই দেবীর ভিতর কাকে প্রথম অধিকার করা হবে, এ নিয়ে প্রথমে দুই ভাইয়ের ভিতর তর্ক হয়। পরে টসের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় যে, প্রথমেই আর্তেমিস কেই অধিকার করা হবে। এরপর দুই ভাই আর্তেমিসের অন্বেষণে বেরিয়ে পরে। পরে আর্তেমিস কৌশলে উভয় ভাই পরস্পরকে আঘাত করে হত্যা করে। 

মস্কোর পুস্কিন যাদুঘরে রক্ষিত আর্তেমিস/ডায়না ছবি অনুসরণে ফ্রান্সিস বাউচার অঙ্কিত  Jupiter and Callisto

রাজা লাইকনের কন্যা ক্যালিস্টো আর্তেমিস-এর সহচরী ছিলেন। দেবরাজ জিউস ক্যালিস্টোর প্রেমে পড়েন এবং আর্তেমিসের ছদ্মবেশে ক্যালিস্টোর কাছে আসেন এবং সুযোগ বুঝে জিউস তাঁকে ধর্ষণ করেন। এর ফলে ক্যালিস্টো গর্ভবতী হয়ে পড়েন। যথা সময়ে ইনি একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। এই সন্তানের নাম রাখা হয় আর্কাস। আর্তেমিস অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ক্যালিস্টোকে ভালুকে রূপান্তরিত করেন।

রূপে ঈর্ষান্বিত হয়ে তিনি কিয়োনে (Chione) নামক এক রাজ কন্যাকে হত্যা করেছিলেন।

ট্রয়যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অন্যতম রাজা আগামেননের একজন সৈনিক একটি গর্ভবতী খরগোশকে হত্যা করার জন্য আর্তেমিস অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। কিন্তু আগামেনন এই কারণে ওই সৈনিকের কোনো বিচার না করায়, আর্তেমিস অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। ট্রয় যুদ্ধযাত্রার পর তিনি আগামেননের জাহাজগুলোকে ভেঙে দিয়েছিলেন।

থিবিসের রানি নাইয়োবি সাতটি কন্যা এবং সাতটি পুত্রের মা ছিলেন। এই কারণে নাইয়োবি লেটো-কে কটুকথা বলেছিলেন। পরে এ্যাপেলো তার পুত্রদের এবং আর্তেমিস তার কন্যাদের হত্যা করেছিল। কথিত আছে এই সন্তানদের মধ্যে একটি পুত্র এবং একটি কন্যা রক্ষা পেয়েছিল।

আটলান্টাকে তাঁর পরিবার ত্যাগ করলে, আর্তেমিস বন্য শুকরী পাঠিয়ে আটলান্টার খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন। পরে আটলান্টাকে তিনি শিকার-বিদ্যা শিখিয়েছিলেন। ঈনিউস তার রাজ্যে ফসল তোলার সময় দেবতাদের নামে উৎসর্গ করেছিল। এই সময় সে আর্তেমিসের নাম ভুলে যায়। এই কারণে আর্তেমিস ক্ষিপ্ত হয়ে ঈনিউস রাজ্যে একটি বন্য শুকর পাঠিয়েছিল। গ্রিক পুরানে এই শুকরটিকে ক্যালেডিয়ান বন্যশুকর নামে অভিহিত করা হয়। এই শুকরটি ঈনিউসের রাজ্যের সব কিছু ধ্বংস করা শুরু করলে,  এই শুকরকে হত্যা করার জন্য, ঈনিউস গ্রিসের শ্রেষ্ঠ শিকারীদের আহ্বান করেছিল। এই শিকারে আটলান্টা অংশগ্রহণ করেছিল।


তথ্যসূত্র :
greek myth
/Robert Graves, cassel & comoany, fourth edition 1995
edith hamilton mythology/new american library
http://en.wikipedia.org/wiki/Artemis