ধারণ করা হয় এর মূল কপিটি ছিল কোনো গ্রিক শিল্পীর তৈরি। কেউ কেউ মনে করেন মূল কপিটি ছিল কোন রোমান শিল্পীর তৈরি। রোমের বার্বেরিনি প্রাসাদে এই মূর্তিটি ছিল। এই কারণে এর নাম 'বার্বেরিনি আটলান্টা'। বর্তমানে এই মূর্তিটি ভ্যাটিকান সিটিতে রয়েছে।

আটলান্টা
গ্রিক Ἀταλάντη
ইংরেজি Atlanta

গ্রিক পৌরাণিক চরিত্র বিশেষ। ইনি কুমারী শিকারি হিসেবে সর্বাধিক পরিচিতা। ইনি ইয়াসাসের ঔরসে ক্লাইমেনের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ না করার ইয়াসাস খুব ক্ষুব্ধ হন। এই কারণে জন্মের পর ইয়াসাস তাঁকে একটি পর্বতের উপরে পরিত্যাগ করেন। এই সময় একটি স্ত্রী-ভল্লুক তাঁকে স্তন পান করায় এবং তাঁকে রক্ষা করে। এই স্ত্রী-ভল্লুকটি তাঁকে যোদ্ধা হিসেবে এবং শিকারী হিসেবে শিক্ষিত করে তোলে। অনেকের মতে
আর্তেমিস বন্য শুকরী পাঠিয়ে আটলান্টার খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন। পরে আটলান্টাকে তিনি শিকার-বিদ্যা শিখিয়েছিলেন।

ঈনিয়ুস তার রাজ্যে ফসল তোলার সময় দেবতাদের নামে উৎসর্গ করেছিল। এই সময় সে
আর্তেমিসের নাম ভুলে যায়। এই কারণে আর্তেমিস ক্ষিপ্ত হয়ে ঈনিউসের রাজ্যে একটি বন্য শুকর পাঠিয়েছিল। গ্রিক পুরাণে এই শুকরটিকে ক্যালেডিয়ান বন্যশুকর নামে অভিহিত করা হয়। এই শুকরটি ঈনিয়ুসের রাজ্যের সব কিছু ধ্বংস করা শুরু করলে,  এই শুকরকে হত্যা করার জন্য, ঈনিউস গ্রিসের শ্রেষ্ঠ শিকারীদের আহ্বান করেছিল। এই শিকারে আটলান্টা অংশগ্রহণ করেছিল।  এই শিকারের সময়, অন্যান্য আরও অনেক শিকারীরার প্রথমে শূকরটিকে ঘিরে ফেলেন। এই শূকরটি প্রথমেই দুজন শিকারীকে হত্যা করে। পরে অন্য শিকারীর ছুঁড়ে দেওয়া তীর বা বর্শার আঘাতে তৃতীয় অন্য একজন শিকারী আহত হয়। এই অবস্থায় আটলান্টা প্রথমে শূকরটিকে তীর বিদ্ধ করে আহত করেন। পরে তিনি তাঁর বিশাল ছুরি দিয়ে শূকরের হৃদপিণ্ডে আঘাত করেন। মূলত তাঁর আঘাতেই শূকরটি মৃত্যবর্ণ করে। মৃত্যুর পর ঈনিয়ুসের পুত্র এবং আটলান্টার সহযোগী মেলিজার এই শূকরের চামড়া আটলান্টার প্রাপ্য বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু এই কাজে বাধা দেন তাঁর আপন দুই মামা। এই সংবাদ পেয়ে মেলিজার মা এ্যালথিয়া, মেলিজার জীবনরক্ষাকারী কাষ্ঠ দণ্ড পুড়িয়ে ফেলে। ফলে মেলিজার মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য মেলিজার জন্মের পর নিয়তি দেবীরা, এ্যালথিয়ার হাতে একটি কাঠের দণ্ড তুলে দেন। এরপর এই কাঠের টুকরাটি ঘরের ভিতরে প্রজ্জ্বলিত চুলাতে নিক্ষেপ করে বলেন যে, এই কাঠ যতদিন ভষ্মীভূত না হবে, ততদিন মেলিজার বেঁচে থাকবে। এই কথা শুনে এ্যালথিয়ার চুলা থেকে কাঠ তুলে নিভিয়ে ফেলেন। এরপর তিনি কাঠটি একটি সিন্দুকে ভরে রাখেন। এ্যালথিয়া যখন শুনলেন মেলিজার তাঁর দুই ভাইকে হত্যা করেছে, তখন রাগে এ্যালথিয়া এই কাঠটিকে পুড়িয়ে ফেলেন। এর ফলে মেলিজার মৃত্যুবরণ করে।

এই ঘটনার পর আটলান্টা অত্যন্ত দুঃখ পান। কারণ, মেলিজার ছিলেন আটলান্টার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কারো কারো মতে এরপর তিনি আর্গোনেট যাত্রায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। অন্যান্য মতে এই যাত্রায় তাঁকে বাধা দিয়েছিলেন জ্যাসন। ফলে তিনি এই যাত্রা থেকে ফিরে এসেছিলেন। আর্গোনেট যাত্রা শেষে জ্যাসনের চাচা পেলিয়াসকে হত্যা করেছিল মিডিয়া। এই সময় একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে আটলান্টা একিলিসের পিতা পেলেয়ুসের বিরুদ্ধে কুস্তিতে জয়লাভ করেছিলেন।

এই জয়লাভের পর আটলান্টার সাথে তাঁর পিতামাতার পরিচয় ঘটে। এরপর তিনি বসবাসের জন্য তাঁর পিতামাতার সাথে চলে যান। যদিও আটলান্টা পুরুষের বেশে থাকতেন। কিন্তু তাঁর অপরূপ সৌন্দর্যে পুরুষরা অত্যন্ত মুগ্ধ ছিলেন। আটলান্টা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি বিবাহ করবেন না। কিন্তু রূপমুগ্ধদের যন্ত্রণায় তিনি ঘোষণা দিলেন যে, যে পুরুষ তাঁকে দৌড়ে পরাজিত করতে পারবে, তাঁকেই তিনি বিবাহ করবেন।

র সকল পুরুষই জানতো যে, আটলান্টাকে দৌড়ে পরাজিত করা সম্ভব নয়। তবুও মেইলানিয়ন(অন্যনাম হিপ্পোমেনেস) নামক একজন কৌশলী যুবক এই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে রাজি হলেন। যেহেতু আটলান্টা কোনো পুরুষের প্রেমে পড়বেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এবং চিরকুমারী থাকবেন বলে কোনো পুরুষের আহ্বানে সাড়া দেন নি, তাই প্রেমের দেবী এ্যাফ্রদাইতি তাঁর প্রতি ক্রোধান্বিতা ছিলেন। মেইলানিয়ন যখন আটালান্টাকে জয় করার জন্য এ্যাফ্রদাইতির কাছে সাহায্য প্রর্থনা করলেন, তখন এ্যাফ্রদাইতি হেসপিরেজ-এর বাগান থেকে তিনটি স্বর্ণ আপেল এলে মেইলানিয়নকে দেন এবং এই আপেল তিনটি দৌড় প্রতিযোগিতার সময় কিভাবে ব্যবহার করবেন তা শিখিয়ে দেন।

নিকোলাস কোলোম্বেল (১৬৪৪-১৭১৭) অঙ্কিত ছবি। বর্তমানে লিয়েস্টেনস্টেইন যাদুঘরে ছবিটি রক্ষিত আছে।

দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হলে, কিছুক্ষণের মধ্যে আটালান্টা মেইলানিয়নকে অতিক্রম করার পর্যায়ে চলে এলেন। এই সময় মেইলানিয়ন তাঁর হাতের প্রথম আপেলটি আটলান্টার সামনে গড়িয়ে দিলেন। স্বর্ণ আপেলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে আটলান্টা যখন তাঁর গতি কমিয়ে আপেলটি কুড়িয়ে নিতে গেলেন, তখন মেইলানিয়ন দৌড়ে অনেকখানি এগিয়ে গেলেন। এরপর আটলান্টা আপেলটি কুড়িয়ে নিয়ে পূর্ণোদ্যমে দৌড় শুরু করলেন এবং অচিরেই মেইলানিয়নকে ধরে ফেললেন। এবার মেইলানিয়ন তাঁর দ্বিতীয় আপেলটি আটলান্টার একটু পার্শ্ব বরাবর গড়িয়ে দিলেন। আটলান্টা তাঁর দৌড়ের গতিপথ ত্যাগ করে, একটি দূরে গিয়ে আপেলটি কুড়িয়ে নিলেন এবং মূল দৌড়ের গতিপথে এসে দেখলেনে মেইলানিয়ন অনেকদূর এগিয়ে গেছেন। ফলে আটলান্টা পূর্ণোদ্যমে পুনরায় দৌড় শুরু করলেন। এবারেও আটলান্টা মেইলানিয়নকে ধরে ফেললেন। গন্তব্যের কাছাকাছি এসে মেইলানিয়ন আড়াআড়িভাবে তৃতীয় আপেলটি গড়িয়ে দিলেন। এবার আপেলটি পথের পাশের ঘাসে ঢাকা ভূমিতে গিয়ে পড়লো। ফলে আটলান্টা থেমে তৃতীয় আপেলটি তুলে নিতে গিয়ে অনেকখানি সময় ব্যয় করে ফেললেন। এরপর দৌড়ে অগ্রগামী মেইলানিয়নকে অতিক্রম করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তার আগেই মেইলানিয়ন গন্তব্যস্থান পৌঁছে গেলেন। বিচারকরা মেইলানিয়নকে বিজয়ী ঘোষণা করলেন। ফলে আটলান্টাকে মেইলানিয়নর স্ত্রী হতেই হলো।

মেইলানিয়নের ঔরসে আটলান্টা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। এর নাম ছিল পার্থেনোপিউস। এর কিছুদিন পর এঁরা জিউস বা তাঁর মা রিয়া বিরাগভাজন হন এবং এঁদের কেউ একজন আটলান্টা এবং মেইলানিয়নকে সিংহে পরিণত করে দেন। কোনো কোনো মতে এ্যাফ্রদাইতি-কে যথাযোগ্য সম্মান না করায় তিনি তাঁদেরকে সিংহে পরিণত করেছিলেন।


সূত্র :
http://www.paleothea.com/
greek myth
/Robert Graves, cassel & comoany, fourth edition 1995
Mythology/Edith Hamilton/New American Library, 1969
http://www.greekmythology.com/Myths/Heroes/Atlanta/atlanta.html