|
সিসিলিয়ান মেষপালকের সাথে প্যান। খ্রিষ্টপূর্ব ১০০ অব্দের মূর্তি। পম্পেই নগরে পাওয়া গেছে। |
প্যান
জনৈক গ্রিক অবহেলিত দেবতা। বসবাসের জন্য ইনি অলিম্পাস-এ জায়গা পান নি। সে কারণে তিনি পৃথিবীর আর্কেডিয়া নামক অঞ্চলে বসবাস করতেন।
এঁর জন্মগ্রহণ সম্পর্কে মতভেদ আছে। ইনি হের্মেজ-এর ঔরসে জন্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু এঁর মা কে ছিলেন, তা নিয়ে মতভেদ আছে। তাঁর মা হিসাবে যে সকল নাম পাওয়া যায় তা হলো- ড্রাইয়োপের, ওয়েনেইস, পেনেলোপে। শেষোক্ত মতে জানা যায়, হের্মেজ ভেড়ার ছদ্মবেশে ওডিসিয়াসের স্ত্রী পেনেলোপের সাথে মিলিত হলে প্যানের জন্ম হয়।
ইনি অত্যন্ত কুৎসিত জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। জন্ম মুহূর্তে এঁর মাথায় ছিল শিং, মুখে দাড়ি, একটি নাতিদীর্ঘ লেজ, ছাগলের মতো পা। এই কারণে প্যানের মা জন্মের পর ভয়ে তাঁকে ফেলে দূরে পালিয়ে যান। তাঁর এই দৈহিক আকৃতি দেখে অনেকে মনে করেন- প্যান হের্মেজ ঔরসে এ্যামালথিয়া নামক ছাগীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। হের্মেজ পরিত্যাক্ত প্যানকে অলিম্পাস-এ নিয়ে আসেন এবং এই অদ্ভুত চেহারা শিশুটিকে দেবতাদের মনোরঞ্জনের জন্য প্রতিপালন করেন।
প্যানের জন্ম ও বয়স নিয়ে আরও কিছু ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন জিউস যখন আর্কেডিয়াতে গোপনে প্রতিপালিত হচ্ছিলেন, তখন ইনি এ্যামালথিয়া-এর দুধ খেতেন। এই সময় প্যানের জন্ম হয়েছে। সেই কারণে প্যানকে বলা হয় জিউস-এর দুধভাই। সে সূত্রে প্যান হের্মেজ চেয়ে বয়সে বড় হওয়ারই কথা।
প্যান একটু বড় হলে ইনি আর্কেডিয়াতে বাস করতে থাকেন। এখানে ইনি পশু চড়াতেন, মধুর চাকা ভেঙে মধু সংগ্রহ করতেন। তবে বেশিরভাগ সময় অকমর্ণের মতো পাহাড়ী ও জলের পরীদের সাথে ঘুরে বেড়াতেন। ফলে বিভিন্ন পরীদের সাথে তাঁর দৈহিক সম্পর্কও গড়ে উঠে। এই সময় ইকো নামক পরীর সাথে মিলিত হলে এঁর ইঙ্কস নামক পুত্র জন্মে। এরপর দেবী মিউসের ধাত্রী ইউফেম-এর সাথে তাঁর দৈহিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরফলে তাঁর অপর একটি পুত্র সন্তান জন্মে। এর নাম ছিল- ক্রোটাস। এছাড়া মেনাড অপদেবীদের সাথে দৈহিকভাবে মিলিত হয়েছিলেন। এরপর ইনি করুণার দেবী পিটিস ধর্ষণের চেষ্টা করলে, পিটিস নিজেকে ফার গাছে পরিণত করেন। এর কিছুদিন পর ইনি সিরিঙ্কস নামক এক নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। সিরিঙ্কস প্যানের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য, লাইসেয়াম পর্বত থেকে লেডন নদী পর্যন্ত দৌড়ে চলে যান। এরপর সেখানে সিরিঙ্কস নিজেকে নলখাগড়াতে পরিণত করেন। প্যান অন্যান্য নলখাগড়া থেকে সিরিঙ্কসকে পৃথক করতে না পেরে, একদিক থেকে নলখাগড়া কেটে বাঁশি তৈরি করতে থাকেন। এই বাঁশিই প্যান-পাইপ নামে পরিচিত।
এ্যাপোলো যখন ডেলফির মন্দির দখল করার জন্য আর্কেডিয়াতে ফিরে আসেন। তখন এ্যাপোলো নানাভাবে তাঁকে তুষ্ট করেছিলেন। প্যানের সহায়তায় এ্যাপোলো ডেলফির মন্দির দখল করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
এরপর ইনি প্রেমে পড়েন সেলেন-এর। এক্ষেত্রে নিজে শরীর সাদা ছাগলের পশমে আবৃত করেন। সেলেনে ছদ্মবেশি প্যানকে অদ্ভুত সুন্দর ছাগল বিবেচনা করে, তাঁর পিঠে উঠেন। এরপর প্যান তাঁকে পিঠে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান এবং ইচ্ছামতো ভোগ করেন।
ইনি অলিম্পাস-এ আশ্রয় না পেলেও অলিম্পাস-এর দেবতাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন। যেমন এ্যাপোলো তাঁর কাছ থেকে কৌশলে ভবিষ্যত্ বলার ক্ষমতা অর্জন করেন। হের্মেজ শেখেন কিভাবে বাঁশি তৈরি করতে হয়।
প্যান দেবতা হলেও তাঁর মৃত্যুর কথা গ্রিক পৌরাণিক কাহিনিতে পাওয়া যায়। গ্রিক নাবিক থেমাস যখন প্যাক্সি নামক দ্বীপের পাশ দিয়ে ইতালির দিকে যাচ্ছিলেন, তখন এক দৈববাণীতে তিনি আদেশ পান যে, প্যালদসের উপকূলে তাঁর জাহাজ পৌছুলে সে যেন প্যানের মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করে।
সূত্র :
http://www.paleothea.com/
greek myth/Robert Graves, cassel & comoany, fourth edition 1995
Mythology/Edith Hamilton/New American Library, 1969
http://www.pantheon.org/areas/mythology/europe/greek/