|
উরুগুয়ের পতাকা |
উরুগুয়ে
স্প্যানিশ:
Uruguay, ইংরেজি
Uruguay।
সরকারি নাম
República Oriental del Uruguay
।
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে একটি দেশ। এর অবস্থান
আর্জেন্টিনা ও
ব্রাজিলের মধ্যে অবস্থিত একটি দেশ।
রাজধানী মন্টিভিডিও।
ভৌগোলিক অবস্থান: ৩৩°
দক্ষিণ
৫৬°
পশ্চিম। এর উত্তরে
ব্রাজিল; পূর্বে আটালান্টিক মহাসাগর; দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগর; পশ্চিমে
আর্জেন্টিনা।
আয়তন: ১,৭৬,২১৫ বর্গকিলোমিটার
জনসংখ্যা: ৩৪,৪৪,০০৬ (২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ)
ভাষা: স্প্যানিশ।
ধর্ম: উরুগুয়ের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ
লোক রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টান। জনসংখ্যার বাকি অংশ প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টান এবং
ইহুদী। উরুগুয়ের সংবিধানে ধর্ম বিষয়ে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রধান শহর:
- মন্টিভিডিও: উরুগুয়ের রাজধানী,
প্রধান বন্দর এবং অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র। ১৭২৬ খ্রিষ্টাব্দে বুয়েনোস আইরেসের
স্পেনীয় গভর্নর এই শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন। নিকটবর্তী ব্রাজিল থেকে
পর্তুগিজেরা যাতে দক্ষিণে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে কারণেই এই শহর তৈরি করা
হয়েছিল। ১৯শ শতকের শুরুর দিকে শহরটির নিয়ন্ত্রণ একাধিকবার স্পেনীয় ও
পর্তুগিজদের মধ্যে বদল হয়। শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশদের আংশিক হস্তক্ষেপে এটি
স্বাধীন উরুগুয়ের রাজধানী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে স্পেনীয়
আর্জেন্টিনা ও পর্তুগিজ ব্রাজিলের মধ্যে একটি বাফার বা অন্তর্বর্তী রাষ্ট্র
(buffer state)
হিসেবে উরুগুয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কালক্রমে এটি দক্ষিণ আমেরিকার একটি
প্রধান বন্দরে পরিণত হয়। ১৯শ শতকের শেষে এবং ২০শ শতকের শুরুতে বহু ইউরোপীয়,
বিশেষত স্পেনীয় ও ইতালীয়রা শহরটিতে অভিবাসী হয়।
- সালতো: এটি উত্তর-পশ্চিম উরুগুয়ের
একটি শহর। ধারণা করা হয় ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।এটি উরুগুয়ের
বৃহত্তম শহরগুলির একটি। এটি সড়ক ও রেল পরিবহন ব্যবস্থার একটি কেন্দ্র। এর আশে
পাশেপাশের অঞ্চলে গবাদি পশুপালন, লেবুজাতীয় ফল, আখ, আঙুর ও মধুর চাষ করা হয়। এই
কারণে এখানে গড়ে উঠেছে বৃহৎ খাদ্যশস্য ও সাকসবজির ক্রয়বিক্রয় কেন্দ্র। একই সূত্রে
এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- ময়দার মিল, মাংস প্যাকেটকরণ। এছাড়া জাহাজ নির্মাণ,
রাসসায়নিক দ্রব্য, ওষুধ ও বেতের তৈজসপত্র উৎপাদন, ইত্যাদির বেশকিছু কারখানা এই
শহরে রয়েছে। শহরের কাছে আরেনিতাস ব্লাংকাস নামের অবকাশযাপন কেন্দ্র আছে। এছাড়া এই
শহরের উত্তরে সালতো গ্রান্দে নামের জলপ্রপাত আছে।
- পায়সান্দু: পশ্চিম উরুগুয়ের
একটি শহর এবং ব্যস্ত নদীবন্দর। ১৭২২ খ্রিষ্টাব্দে শহরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এটি উরুগুয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। শহরটি উরুগুয়াই নদীর পূর্ব তীরে,
উরুগুয়ে-আর্জেন্টিনা সীমান্তের উপরে, রাজধানী মন্টিভিডিও থেকে প্রায় ৩৭৮
কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। এখানে মাংস প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া শোধন, এবং
ময়দার কারখানা আছে।
জলবায়ু:
উরুগুয়ের জলবায়ু উষ্ণ ও মৃদু।
বিষুবরেখার দক্ষিণে অবস্থিত হওয়ার কারণে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে
তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। এসময় গড় তাপমাত্রা প্রায় ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস
থাকে। জুন মাসে সবচেয়ে শীত পড়ে। এ সময় তাপমাত্রা গড়ে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে
আসে। উরুগুয়ের কোনো কোনো অংশে সামান্য তুষারপাত হয়। প্রতি বছর উরুগুয়েতে প্রায়
৮৯০ মিমি বৃষ্টিপাত হয়। শীতকালে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে যে শীতল পাম্পেরোস নামক ঝড়
আঘাত হানে।
নদী: দেশে প্রধান নদী হলো উরুগুয়াই।
এটি পারানা নদীর সাথে মিশে আটলান্টিক মহাসাগরে পড়েছে। এই নদী দুটির মিলিত স্রোত এক
বিশালাকার মোহনার সৃষ্টি করেছে। এই মোহনার উত্তরভাগে আছে উরুগুয়ে এবং দক্ষিণভাগে
আছে আর্জেন্টিনা। এই মোহনাটির নাম রিও দে লা প্লাতা। এই নদীর কোথাও কোথাও
প্রায় ২০০ কিলোমিটার চওড়া। আমাজন নদীর পরে পারানা-উরুগুয়াই নদীব্যবস্থা দক্ষিণ
আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম নৌ-প্রণালী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ইতিহাস
খ্রিষ্টীয় ১৯শ শতকের শুরুর দিকে দেশটি দক্ষিণ
আমেরিকার স্পেনীয় সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। এরপর দেশটি পর্তুগিজদের অধীনে চলে যায়।
১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে।