স্তূপ
পর্বত
ইংরেজি:
Mountain
পর্বতের শ্রেণিগত নাম। বড়
ধরনের ভূ-কম্পনের ফলে অনেক সময় শিলাস্তরে ফাটল ধরে। ভূগর্ভের অভ্যন্তরীণ চাপে এই
সকল ফাটলে শিলাস্তর খণ্ডে খণ্ডে স্তূপে পরিণত হয়ে যায়। সমান্তরাল দুই ফাটলের
মধ্যবর্তী খণ্ডিত ভূমি অনেক সময় নিচের চাপে উপরে উঠে আসে। বৃহদাকারে উত্থিত স্তূপই
পর্বতের আকার ধারণ করে। এইভাবে সৃষ্ট পর্বতকে বলা হয় স্তুপ পর্বত।
মূলত প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে
অশ্মমণ্ডল (lithosphere)-এর কোথাও সংকোচন টান আবার কোথাও
প্রসারণ চাপ পড়ে। এর ফলে শিলাস্তরে গভীর ফাটলের সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় ভূমিকম্প
হলে ওই ফাটল বরাবর শিলার একটি অংশ থেকে আর একটি অংশ
বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, একে চ্যুতি
(Fault) বলে । ভূত্বকের যে রেখা বরাবর চ্যুতির
সৃষ্টি হয় তাকে চ্যুতিরেখা এবং যে তলে চ্যুতির সৃষ্টি হয়, তাকে
চ্যুতিতল বলে।
প্রবল উর্ধ্বচাপ ও নিম্নচাপের ফলে কোনো দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী
অঞ্চলের কোনো বিশাল অংশ পাশের অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চ্যুতিরেখা বরাবর খাড়াভাবে ওপরে উঠে
আসে। এর ফলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল দুটি নিচে বসে যায়। এদের ভিতরে উপরে উঠে আসা অংশটি স্তূপ
পর্বতে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে নিচে বসে যাওয়া অংশ দুটি গ্রস্ত উপত্যকায়
(Rift Valley)
পরিণত হয়। এইভাবে দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশের
উত্থানের ফলে সৃষ্টি হওয়া স্তূপ পর্বতকে হোর্স্ট
(horst) বলা হয়। এর আর এক নাম
চ্যুতি পর্বত (Fault
Mountain)।
ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরের প্রবল চাপের ফলে কোনো সময় দুটি সমান্তরাল চ্যুতিরেখার
মধ্যবর্তী অংশ যদি খাড়া ভাবে নিচে বসে যায়। এর ফলে সৃষ্ট গ্রস্ত উপত্যকার দুই পাশের খাড়া অংশ দুটি স্তূপ পর্বতের
আকৃতিপ্রাপ্ত হয়। এই ভাবে সৃষ্টি হওয়া গ্রস্ত উপত্যকাগুলি জার্মানিতে
‘গ্রাবেন’নামে পরিচিত।
স্তূপ পর্বতের বৈশিষ্ট্য:
স্তূপ পর্বতের মাথা কিছুটা চ্যাপ্টা হয়, এবং পর্বতের ঢাল বেশ খাড়া হয়। এই পর্বতে অনেক চ্যুতি ও গ্রস্ত উপত্যকা দেখা যায়। স্তূপ পর্বতের উচ্চতা খুব বেশি হয় না। এই পর্বত ভঙ্গিল পর্বতের মতো বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত হয় না। সাধারণত লম্বভাবে ভূ-আলোড়নের ফলে স্তূপ পর্বতের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
উদাহরণ:
ভারতের দাক্ষিণাত্যের সাতপুরা, নীলগিরি, আন্নামালাই পর্বত, ফ্রান্সের ভোজ, জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট, ভারতের সাতপুরা পর্বত হোর্স্ট জাতীয় স্তূপ পর্বতের উদাহরণ ।
ভারতের নর্মদা নদীর উপত্যকা ও জার্মানির রাইন নদীর উপত্যকা গ্রস্থ উপত্যকার উদাহরণ।