অপাদান কারক
সংস্কৃত अपादान कारक >বাংলা অপাদান কারক
ইংরেজি :
ablative case
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { | কারক |
ব্যাকরণগত শ্রেণি | সমগোত্রীয় শ্রেণি | সংকলন | দল | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

প্রচলিত বাংলা ব্যাকরণের কারক-এর একটি শ্রেণি। বাংলা ব্যাকরণে অপাদান কারক এসেছে পাণিনি'র অষ্টাধ্যায়ী অনুসরণে। পাণিনির মতে-  
                    'ধ্রু
বমপায়েহপাদানাম্‌।
                       অপায়ে যদুদার্সীনং চলং বা যদি বাচলম্।
                       ধ্রুবমেবাতদাবেশাৎ তদপাদানমুচ্যতে'

বিদ্যাসাগর এর সংজ্ঞা দিয়েছেন- 'যাহা হইতে বিশ্লেষ হয়, তাহাকে অপাদান কারক বলে।


সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর '
ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা-ব্যাকরণ ' গ্রন্থে এই কারকের সংজ্ঞা দিয়েছেন 'যাহা হইতে কোনও বস্তু বা ব্যক্তি উৎপন্ন, চলিত, নির্গত, নিঃসৃত, উত্থিত, পতিত, প্রেরিত, গৃহীত, দৃষ্ট, শ্রুত, সূচিত, নিবারিত, অন্তর্হিত, রক্ষিত ইত্যাদি হয় তাহাকে অপাদান-কারক বলে।'

সুনীতি চট্টোপাধ্যায়ের সংজ্ঞাটিই বাংলা ব্যাকরণে প্রমিত সংজ্ঞা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই কারক নির্ণয়ের সূত্র হলো- বাক্যানুসারে 'কি থেকে' বা 'কিসের থেকে' প্রশ্ন সাপক্ষে যদি উত্তর পাওয়া যায়, তবে তা অপাদান কারক হিসাবে বিবেচিত হবে।

        ছাদ থেকে পানি পড়ছে। পুকুর থেকে ফিরে এলাম। ইত্যাদি।

এই কারকের জন্য সাধারণত হইতে>হতে, থেকে, চাহিয়া>চেয়ে বিভক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ব্যাকরণ এগুলোকে কারক-বিভক্তির তালিকায় পঞ্চমী বিভক্তি বলা হয়। এই বিভক্তিগুলো শব্দের সাথে যুক্ত অবস্থায় ব্যবহৃত হয়। তাই এগুলোর মান দাঁড়ায় অনুসর্গের মতো। যেমন-
        ছাদ থেকে পানি পড়ছে। পুকুর থেকে ফিরে এলাম। ইত্যাদি।

পঞ্চমী বিভক্তি ছাড়াও অপাদান কারক হতে পারে। যেমন

১. এ বিভক্তি : লোকমুখে এ কথা জেনেছি।
২. তে বিভক্তি : খনিতে সোনা পাওয়া যায়।
৩. র/এর : রাতে বাঘের ভয়ে ঘরের বাহির হই না।

সম্বন্ধ পদ ও অপাদানের সম্পর্ক।

অনেক ক্ষেত্রেই অনুসর্গের পূর্বপদের সাথে একটি সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে পূর্ব পদে ষষ্ঠী বিভক্তি যুক্ত হলেও কারক বিভক্তি হিসাবে এই ষষ্ঠী বিভক্তি মূল্য পায় না। এক্ষেত্রে ষষ্ঠী বিভক্তি কতকগুলো বিশেষ রীতি অনুসরণ করে।

১. তুলনা-বাচক ভাবের ক্ষেত্রে পূর্ব পদে র বা এর বসে। যেমন- রামের চেয়ে শ্যাম ছোটো।
২. সর্বনামের পরে চেয়ে, থেকে, হতে অনুসর্গ থাকলে, সর্বনামের পরে ষষ্ঠী বিভক্তি বসে। যেমন

         আমার থেকে সে বেশি জানে না।
         তার চেয়ে শ্যাম ভালো লোক।
         তোমার চেয়ে এ কাজ আর কে ভালো করবে?

কিন্তু যখন কোনো কিছু প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তি (ভয়, আশা, বিশ্বাস ইত্যাদি অর্থে) বিষয়টি এর সাথে যুক্ত হয়, তখন অতিরিক্ত অনুসর্গ যুক্ত হতে পারে। যেমন
        তার কাছ থেকে ১০০ টাকা পেয়েছি।
        তোমার কাছ থেকে এটা আশা করি নি।

তবে এই অতিরিক্ত অনুসর্গ বাদ দিয়েও বাক্য হতে পারে। যেমন

      তার থেকে ১০০ টাকা পেয়েছি।

৩. বিশেষ্য পদের 'র' বা 'এর' ব্যবহৃত হয়। তবে বাহুল্য বিবেচনায় অনেক সময় তা বর্জিত হয়। যেমন

          তুমি দেশের থেকে কবে ফিরলে?
          কিম্বা
          তুমি দেশ থেকে কবে ফিরলে?

অপাদান ও অধিকরণের সম্পর্ক
অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপাদান কারকের সাথে অধিকরণের একটি নিবিড় সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। যেমন

    ১. স্থানবাচক অপাদান : ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরলাম। ['ঢাকা' স্থান, কিন্তু কারকের বিচারে 'ঢাকা থেকে' অপাদান]
    ২. কাল বাচক অপাদন : সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। ['সকাল' কাল বা সময়, কিন্তু কারকের বিচারে 'সকাল থেকে' অপাদান]
    ৩. আধার বাচক অপাদান : তিল থেকে তেল হয়। ['তিল' আধার বা পাত্র, কিন্তু কারকের বিচারে 'তিল থেকে' অপাদান]
 

এছাড়া তারতম্যের বিচারে অপাদান হয়। যেমন আমার চেয়ে সে চালাক।
     
                 দেখুন : কারক বিভক্তি


সূত্র:
১. পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী। শ্রীদেবেন্দ্র কুমার বিদ্যারত্ন কর্তৃক সম্পাদিত ও শ্রীসত্যরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক ভূমিকা সম্বলিত। বলরাম প্রকাশনী। মহালয়া ২০০৩।
২. সমগ্র ব্যাকরণ কৌমুদী
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
৩. ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা-ব্যাকরণ। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। রূপা। বৈশাখ ১৩৯৬। মে ১৮৮৯।
৪.
http://wordnet.princeton.edu/
৫. http://en.wikipedia.org/wiki/Grammatical_case