জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড
ব্রিটিশ ভারতে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই এপ্রিলে, জালিয়ানওয়ালাবাগে সংঘটিত কুখ্যাত গণহত্যা।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ) সময় ইংল্যান্ডের সৈন্য ঘাটতি দেখা দিলে, এই যুদ্ধে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই সময় ইংল্যান্ড প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, এই যুদ্ধে অংশ নিলে পরাধীন দেশগুলোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হবে। এই আশ্বাসে বিশ্বাস করে মহাত্মা গান্ধী ভারতবাসীকে এই যুদ্ধের অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করেন। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, ব্রিটিশরা ভারতের স্বাধীনতা দেওয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি করতে থাকে। যুদ্ধের শেষে সাময়িকভাবে গৃহীত ভারতীয় সৈন্যদের সেনাবাহিনী থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়। ফলে বহু মানুষ নিদারুণ আর্থিক সমস্যায় পতিত হয়। এই সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারিতে এক কোটির বেশি মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। এই ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাবের তীব্রতর হয়ে ওঠে।

এই সময় ইংরেজ সরকার একদিকে মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার আইন করে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু একই সাথে আবার ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মার্চ রাওলাট আইন করে ব্রিটিশ বিরোধী সকল বিক্ষোভ কঠোর হাতে দমন করা শুরু করে। এর প্রতিবাদে মহাত্মা গান্ধী সর্বভারতীয় আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ৩০শে মার্চ এবং ৬ই এপ্রিল দেশব্যাপী বিক্ষোভ হরতাল ও জনসমাবেশের ডাক দেন এবং ব্যাপকভাবে পালিত হয়। তিনি এর প্রতিবাদে সত্যগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন। এপ্রিল মাসে সর্বভারতীয় সত্যগ্রহ আন্দোলন শুরু হয় এবং হরতাল পালিত হয়। এরপর পাঞ্জাবে তাঁর প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে, তিনি পাঞ্জাবে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এই কারণে দিল্লী যাওয়ার পথে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

এর প্রতিবাদে আহমেদাবাদের শিল্প শ্রমিক এবং পাঞ্জাবের সাধারণ জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। সরকার গান্ধীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু এরপরে ধর্মঘট এবং বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। এই সময় বিক্ষোভকারীরা ইউরোপীয় কর্মকর্তা এবং অধিবাসীদের উপরও কিছু আক্রমণ করে। পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ১৩ই এপ্রিল দুজন রাজনৈতিক নেতাকে অমৃতসর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এই অবস্থার ভিতরে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজিনাল ডায়ার সংবাদ পান যে, বিক্ষোভকারীরা পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসর শহরের জালিয়ানওয়ালবাগে একত্রিত হচ্ছে। তিনি এই বিক্ষোভ দমনের জন্য সাঁজোয়া গাড়িসহ একদল সৈন্য পাঠান। বিক্ষোভকারীরা জালিয়ানওয়ালবাগের একটি প্রাচীর ঘেরা উদ্যানে মিলিত হয়েছিলেন। এই উদ্যানের প্রবেশপথ সরু থাকায়, প্রায় ৫০ জন সৈন্য সাঁজোয়া গাড়ি রেখে উদ্যানে প্রবেশ করে। সে সময়ে প্রায় ১৫-২০ হাজার বিক্ষোভকারীদের সামনে একজন নেতা বক্তৃতা করছিলেন।

ডায়ার প্রথমে উদ্যান থেকে বের হয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেন এবং সমবেত জনতার উপর সৈন্যদের গুলি করার নির্দেশ দেন। সৈন্যরা প্রায় ১০ মিনিট ধরে ১৬৫০ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেছিল। গুলিতে প্রায় ৪০০ লোক মৃ্ত্যুবরণ করে। অনেকর মতে মৃ্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার। ঐতিহাসিকদের মতে, একত্রিত জনগণের অধিকাংশ ছিল শিখ ধর্মাবলম্বী। এঁরা নববর্ষ উৎযাপনের জন্য একত্রিত হয়েছিলেন। এই উৎসবের সাথে তাঁর ব্রিটিশ বিরোধী বক্তৃতা বা প্রচারণা যুক্ত করেছিলেন।  

এই হত্যার প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত নাইট খেতাব বর্জন করেন।