ই-এর লিপি পরিচিত
অন্যান্য বাংলা লিপির মতই ব্রাহ্মীলিপি থেকে 'ই' উদ্ভূত হয়েছে। ব্রাহ্মীলিপির ক্রমবিবর্তনের প্রধান তিনটি ধাপে 'ই' বর্ণটির কি পরিবর্তন ঘটেছে। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর প্রথম দিকে ই-এর চেহারা ছিল তিনটি বিন্দু। খ্রিষ্ট-পূর্ব দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীতে এই বর্ণটির জন্য ব্যবহৃত বিন্দুগুলো অবস্থান পরিবর্তন করেছে মাত্র নিচে এর নমুনা দেখানো হলো।
|
|
ব্রাহ্মীলিপিতে ই তিন বিন্দুযুক্তই ছিল। কুষাণলিপি(১০০-৩০০ খ্রিষ্টাব্দ) ও গুপ্তলিপি (৪০০-৫০০ খ্রিষ্টাব্দ) বিভিন্ন লিপিকারদের দ্বারা ই-বর্ণটির পরিবর্তন ঘটেছে বিচিত্রভাবে। নিচে এই তিনটি লিপির ক্রমবিবর্তনের নমুনা দেখানো হলো।
|
|
৬০০-৯০০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতর লিখিত কুটিললিপি'র বিবিধ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আমাদের আজকের ই-এর চেহারা পাওয়া গেছে সপ্তদশ শতাব্দীর পরে। নিচে কুটিললিপি এবং দশম শতাব্দীর লিপি থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত ই-এর ক্রমবিবর্তনের রূপটি দেখানো হলো।
|
চর্যাপদ ও
বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের পাণ্ডুলিপিতে
ই বর্ণটির নানারূপ লক্ষ্য করা যায়।
লিপিকারদের কলমের টানে এর চেহারার হেরফের থাকলেও, সেই সময়ের
ই-এর যে সাধারণ রূপ লক্ষ্য করা যায়, তা অনেকটাই ছিল নিচের
নমুনা দুটির মতো।
চর্যাপদের আ |
শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের আ |
|
|
ই-কার:
ব্রাহ্মীলিপিতে এই কারচিহ্নটি বসতো
ব্যঞ্জনবর্ণের মাথার উপরে, উড়ানির হিসেবে। গুপ্তলিপির
(৪০০-৫০০ খ্রিষ্টাব্দ) ইকার অনেকটা বড়শির রূপ নিয়েছিল।
চর্যাপদ ও বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের পাণ্ডুলিপিতে
ই-কার আধুনিক বাংলা ই-কারের রূপ পেয়েছিল। নিচে ব্রাহ্মী, গুপ্ত
ও চর্যাপদের 'কি' বানানের রূপ তুলে ধরা হলো।
ব্রাহ্মীলিপির কি |
গু্প্তলিপির কি |
৬৫০-১৪৫০ খ্রিষ্টাব্দের কি |
|
|
|
তথ্যসূত্র:
১. প্রাচীন ভারতীয় লিপিমালা।গৌরীশঙ্কর ওঝা। অনুবাদ ও সম্পাদনা :
মনীন্দ্র নাথ সমাজদার। বাংলা একাডেমী ঢাকা। আষাঢ় ১৩৯৬, জুন ১৯৮৯।
২. বাঙালা লিপির উৎস ও বিকাশের অজানা ইতিহাস। এস,এম. লুৎফর
রহমান। বাংলা একাডেমী ঢাকা। ফাল্গুন ১৪১১, মার্চ ২০০৫।
৩. বর্ণমালার উদ্ভববিকাশ ও লিপিসভ্যতার ইতিবৃত্ত। দেওয়ান গোলাম
মোর্তজা। বাংলা একাডেমী ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ্য ১৪১০, মে ২০০৩।
৪. সংস্কৃত বর্ণমালার ইতিহাস। রবীন্দ্রনাৎ ঘোষঠাকুর। বাংলা
একাডেমী ঢাকা। কার্তিক ১৩৮৫, নভেম্বরে ১৯৭৮।