ইহুদি সঙ্গীত
হজরত
মুসা আঃ
-এর প্রবর্তিত ইহুদী ধর্মের সাথে সম্পর্কিত সঙ্গীত।
এই গানের আদি রচয়িতা ছিলেন হজরত
দাউদ (আঃ)।
তিনি নিজের চেষ্টায় সঙ্গীতবিদ্যা আয়ত্ব করেছিলেন এবং বীণাবাদক হিসেবে বেথেলহাম এবং
তৎসংলগ্ন অঞ্চলে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এছাড়া তিনি সঙ্গীত রচয়িতা ও সুগায়ক ছিলেন এবং কয়েকটি বাদ্যযন্ত্র আবিষ্কার
করেছিলেন। কথিত আছে, ইহুদী সমাজে তিনি আধ্যাত্মিক সঙ্গীতকে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা
করেছিলেন।
দাউদ (আঃ)) এবং অন্যান্য রচয়িতাদের সঙ্গীতকে
সাধারণ ভাবে সামগান বলা হয়। হিব্রু থেকে গ্রিক ভাষার বাইবেল রচনার সময় এর নাম দেওয়া হয়েছিল প্সাল্মোই (Psalmoi)। পরে এই শব্দ থেকে গ্রিক শব্দ psalmos শব্দের উৎপত্তি ঘটেছিল। এর অর্থ
হলো- 'এমন ধর্মসঙ্গীত যা তারযন্ত্রের সাথে গীত হয়। এই সময় সেমেটিক ভাষা থেকে ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষায় কৃতঋণ শব্দ হিসেবে যুক্ত হয়েছিল psalmos শব্দ। ল্যাটিন ভাষায় এর নাম হয়েছিল psalmus। আর প্রাচীন ইংরেজি ভাষায় শব্দটি প্রবেশ করেছিল psealm হিসেবে।
বাংলায় বাইবেল অনুবাদের সময় এই গানকে সামসঙ্গীত নামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
দাউদ (আঃ) -এর রচিত এরূপ বহুগান হিব্রু বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। সংকলিত এই গ্রন্থের হিব্রু নাম ছিল সেফের তেহিল্লিম (sefer tehillim)। এর অর্থ ছিল প্রশস্তি-গ্রন্থ। ধারণা করা হয় এই সঙ্গীত-সংকলনটি খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর আগেই রচিত হয়েছিল। এতে ছিল
লেবীয় রাজা এবং নবী
দাউদ (আঃ) -এর (আনুমানিক ১০১০-৯৭০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) ৭৩টি গান,
দাউদ আঃ -এর গায়ক দলের প্রধান আসাফের ১২টি গান এবং
লেবীয়-এর কোরাহ-বংশীয় বাদক দলের ১১টি গান।
উল্লেখ্য কোরাহ ছিলেন মূলত যন্ত্রবাদক এবং মন্দিরের
গায়ক।
বাইবেলে সংকলিত সামসঙ্গীত ৫টি খণ্ডে সংকলিত হয়েছে। প্রতিটি
খণ্ডের শেষে রয়েছে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বিশেষ বন্দনা। ইহুদীদের সংকলিত সামসঙ্গীতের
সাথে খ্রিষ্টীয় ভাবনা সাংঘর্ষিক বিবেচনায়- খ্রিষ্টমণ্ডলীর আনুষ্ঠানিক প্রার্থনায়
থেকে আদি সামগানের কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে।।
সসামগানগুলোর বিষয় ছিল- মানুষের ক্ষুদ্রতা এবং মহত্ব, পাপবোধ এবং
পাপের ক্ষমা-ভিক্ষার বিষয়। কিছু কিছু গানে পাওয়া যায়, মানুষের মৃত্যু,
পার্থিব জীবনে ধার্মিকের দুঃখভোগ এবং অধার্মিকের সুখভোগের বিষয় ইত্যাদি। প্রতিটি
সামগানে আছে ঈশ্বরে সাথে মানুষের চিরন্তন সম্পর্কের কথা। মানুষের মৃত্যুর পর পরলোকে
যে অনন্ত জীবন লাভ করে, সে বিষয়ে সামগানে কিছু পাওয়া যায় না। ইহুদিদের
মতে মানুষের
মৃত্যুর তাঁর আত্মা সম্পূর্ণ অন্ধকারস্থানে নিপতিত হয়। সামগানে শত্রুর প্রতি
ক্ষমাপ্রদর্শনের পরিবর্তে প্রতিহিংসাপরায়ণের নির্দেশ পাওয়া যায়।
ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টপূর্ব ১৮০০ থেকে ১৫০০ অব্দের ভিতরে ইন্দো-ইউরোপিয়ান
ভাষাগোষ্ঠী যখন ভারতে আর্য ভাষা-ভাষী হিসেবে প্রবেশ করেছিল, তখন প্রাক্-বৈদিক
ধর্মদর্শন এবং ধর্মানুষ্ঠানের নির্ধরিত গানের ব্যবহার তাদের জানা ছিল। বৈদিক যুগে
ভাষার বিবর্তনে psealm হয়ে গিয়েছিল সাম গান। সেই সাথে আরাধ্য
দেবতাও পাল্টে গিয়েছিল।