খ্রিষ্ট-সঙ্গীত
যিশুখ্রিষ্ট বা হজরত ইসা আঃ প্রবর্তিত
খ্রিষ্টধর্মের সাথে সম্পর্কিত সঙ্গীত।
খ্রিষ্টধর্মের আদি গান বাইবেলের পুরাতন নিয়মের সূত্রে-
ইহুদি সঙ্গীত
থেকে। এই গানের আদি রচয়িতা ছিলেন হজরত
দাউদ (আঃ)। তিনি নিজের চেষ্টায় সঙ্গীতবিদ্যা
আয়ত্ব করেছিলেন এবং বীণাবাদক হিসেবে বেথেলহাম এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে সুখ্যাতি অর্জন
করেছিলেন।
তাঁর রচিত এরূপ বহুগান হিব্রু বাইবেলে
অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। সংকলিত এই গ্রন্থের হিব্রু নাম ছিল সেফের তেহিল্লিম (sefer
tehillim)। এর অর্থ ছিল প্রশস্তি-গ্রন্থ। ধারণা করা হয় এই সঙ্গীত-সংকলনটি
খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর আগেই রচিত হয়েছিল। এতে ছিল লেবীয় রাজা দাউদ আ.-এর
(আনুমানিক ১০১০-৯৭০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) ৭৩টি গান, দাউদ আ,-এর গায়ক দলের প্রধান
আসাফের ১২টি গান এবং লেবীয়-এর কোরাহ-বংশীয় বাদক দলের ১১টি গান। কোরাহ ছিলেন মূলত
যন্ত্রবাদক এবং মন্দিরের গায়ক।
দাউদ (আঃ) এবং অন্যান্য রচয়িতদের সঙ্গীতকে
সাধারণ ভাবে সামগান বলা হয়। হিব্রু থেকে গ্রিক ভাষার বাইবেল রচনার সময় এর নাম দেওয়া হয়েছিল প্সাল্মোই (Psalmoi)। পরে এই শব্দ থেকে গ্রিক শব্দ psalmos শব্দের উৎপত্তি ঘটেছিল। এই গানের সাথে সংঙ্কলনের এর অর্থ গ্রহণ করা হয়েছিল- 'এমন ধর্মসঙ্গীত যা তারযন্ত্রের সাথে গীত হয়। এই সময় সেমেটিক ভাষা থেকে ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষায় কৃতঋণ শব্দ হিসেবে যুক্ত হয়েছিল psalmos শব্দ। ল্যাটিন ভাষায় এর নাম হয়েছিল psalmus। আর প্রাচীন ইংরেজি ভাষায় শব্দটি প্রবেশ করেছিল psealm হিসেবে।
বাংলায় বাইবেল অনুবাদের সময় এই গানকে সামসঙ্গীত নামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
বাইবেলে সংকলিত সামসঙ্গীত ৫টি খণ্ডে সংকলিত হয়েছে। প্রতিটি খণ্ডের শেষে রয়েছে
ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বিশেষ বন্দনা। সামগানগুলোর বিষয় ছিল- মানুষের ক্ষুদ্রতা এবং মহত্ব, পাপবোধ এবং
পাপের ক্ষমা-ভিক্ষার বিষয়। কিছু কিছু গানে পাওয়া যায়, মানুষের মৃত্যু,
পার্থিব জীবনে ধার্মিকের দুঃখভোগ এবং অধার্মিকের সুখভোগের বিষয় ইত্যাদি। প্রতিটি
সামগানে আছে ঈশ্বরে সাথে মানুষের চিরন্তন সম্পর্কের কথা। মানুষের মৃত্যুর পর পরলোকে
যে অনন্ত জীবন লাভ করে, সে বিষয়ে সামগানে কিছু পাওয়া যায় না। ইহুদিদের মানুষের
মৃত্যুর তাঁর আত্মা সম্পূর্ণ অন্ধকারস্থানে নিপতিত হয়। সামগানে পাওয়া শত্রুর প্রতি
ক্ষমাপ্রদর্শনের পরিবর্তে প্রতিহিংসাপরায়ণের নির্দেশ পাওয়া যায়।
ইহুদীদের সংকলিত সামসঙ্গীতের সাথে খ্রিষ্টীয় ভাবনা সাংঘর্ষিক বিবেচনায়-
খ্রিষ্টমণ্ডলীর আনুষ্ঠানিক প্রার্থনা থেকে কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে।
যিশুখ্রিষ্টের নব্য ধর্মদর্শনের কারণে আদি ইহুদি ধর্ম থেকে খ্রিষ্টধর্ম পৃথক হয়ে
যাওয়ার পরে, খ্রিষ্টধর্মের সঙ্গীতের সৃষ্টি হয়েছিল। এই গানের উপজীব্য বিষয় হিসেবে
প্রাথমিকভাবে গৃহীত হয়েছিল যিশুর মহিম কীর্তন। পরে খ্রিষ্টধর্মের কাথলিক শাখার
যুক্ত হয়েছিল মরিয়মের গুণকীর্তন।
খ্রিষ্টান চার্চে খ্রিষ্টীয় সঙ্গীত ধর্মের প্রার্থনার অংশ হিসেবে গীত হয়ে থাকে।
বিভিন্ন দেশের খ্রিষ্টান চার্চের স্থানীয় মানুষের সঙ্গীতের ধারা অনুসারে নতুন নতুন
খ্রিষ্টীয় সঙ্গীতের সুর রচিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের খ্রিষ্টসঙ্গীতে খ্রিষ্টধর্মের
গান ছাড়া- বিশেষভাবে রবীন্দ্রনাথের রচিত ব্রহ্মসঙ্গীত এবং অন্যান্য গীতিকারদের
একেশ্বরবাদী গান পরিবেশন হয়ে থাকে। এছাড়া বড়দিন উপলক্ষে স্থানীয় খ্রিষ্টান শিল্পীরা
যিশু ও মেরির গুণকীর্তনমূলক গান দলবদ্ধভাবে গেয়ে থাকেন।