ধনুবাদ্যযন্ত্র
ধনুকাকৃতির ততবাদ্যযন্ত্রের সাধারণ নাম। এই যন্ত্রের কাঠামো থাকে ধনুকের মতো বাঁকানো এবং এর দুই প্রান্ত বরাবর ধাতব তার, সুতা, রেশমি সুতা, প্রাণী শুষ্ক নাড়ী ইত্যাদি সটান বাঁধা হয়ে। এই তত অংশে আঘাত বা ছাড় দ্বারা ঘসে সুর তোলা হয়।

মূল ধনু শব্দটির মূলে রয়েছে ধন ক্রিয়ামূল। এর ভাবগত অর্থ শব্দ। বঙ্গীয় শব্দকোষের মতে এর রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ- ধন্ (শব্দ)+ উ। কর্তৃবাচ্য। এর সাধারণ অর্থ বৃত্যাংশের চাপ।

মানব সভ্যতার ঊষালগ্নে শিকারীরা ধনুকের সাহায্যে তীর নিক্ষেপের সময় রজ্জুর আন্দোলনে বোঁ জাতীয় শব্দের অনরণন শুনতে পেতো।  সেই সূত্রে শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্র হিসেবে তীরনিক্ষেপক এই যন্ত্রের নামকরণ করেছিল ধনু। ধনু থেকে উৎপন্ন শব্দটি সভাবতই স্নিগ্ধ ও মনোমুগ্ধকর। আদিকালের মানুষ ধনুকের রজ্জুজাত ধ্বনিকে সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি হিসেবে গ্রহণ করেছিল। এই সূত্রে সৃজনশীল মানুষ তীরনিক্ষেপক ধনুকে ধনুবাদ্যযন্ত্রে পরিণত করেছিল। তীরনিক্ষেপক ধনুর রজ্জু টানলে, এর বাঁকানো কাঠামো আরো বেশি বাঁকা হয়। মূলত দূরে তীর নিক্ষেপের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য বাঁকানোর উপযোগী কাঠামোকে নমনীয় করা হয়। কিন্তু ধনুবাদ্যন্ত্রের কাঠামো করা হতো অনমনীয় হাড় বা কাঠ দিয়ে।

এই জাতীয় বাদ্যযন্ত্র এখনো আফ্রিকায় ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে আফ্রিকা নাইজেরিয়া ওবু জনগোষ্ঠীর শিল্পীরা ধনুকাকার ততযন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। এই যন্ত্রের কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করা কাঠের তৈরি বাঁকা দণ্ড এবং ক্রিয়াত্মক অংশ ব্যবহার করা হয় একটি ধাতব তার। এই জাতীয় যন্ত্রে সর্বপ্রাচীন নমুনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়- ফ্রান্সের 'ট্রোইস ফ্রেরেস' গুহায় খোদিত চিত্রকর্মটিকে। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ১৩,০০০ অব্দের দিকে এই চিত্রকর্মটি অঙ্কিত হয়েছিল।

প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০০ অব্দের দিকে মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে প্রাপ্ত নমুনা থেকে এই যন্ত্রের প্রাচীনত্ব অনুমান করা যায়। এই সময়ে ধনুবাদ্যযন্ত্রে এর বাঁকানো কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করা হতো হাড়, কাঠ জাতীয় উপকরণ।  এরা শব্দের অনুরণন বৃদ্ধির জন্য। সেকালের  এই জাতীয় বাদ্যযন্ত্রে তারের বদলে প্রাণী শুষ্ক নাড়ি। পরবর্তী সময়ে এই যন্ত্র থেকে উদ্ভব হয়েছিল ঘাত ততযন্ত্র এবং ছড় তাড়িত ততযন্ত্র। 

এই যন্ত্রের নানা প্রকরণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। এর ভিতরে কিছু ধনুকাকৃতি ততযন্ত্র বিশেষ ভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন-